Home আন্তর্জাতিক ভয় না পেয়ে পক্ষপাতমুক্ত খবর করে যাবে বিবিসি

ভয় না পেয়ে পক্ষপাতমুক্ত খবর করে যাবে বিবিসি

24

ভারতের কার্যালয়ে তল্লাশি

ডেস্ক রিপোর্ট: ভারতে বিবিসির দিল্লি ও মুম্বাই কার্যালয়ে দেশটির আয়কর বিভাগের টানা ৬০ ঘন্টার তদন্ত-তল্লাশির ঘটনার পর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, তারা ভয় না পেয়ে পক্ষপাতমুক্তভাবে খবর পরিবেশন করে যাবে।
গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে এ অভিযান শুরু করে ভারতের আয়কর বিভাগ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় অভিযান শেষ হয়। অভিযান শেষে রাতেই বিবিসির পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়।
বিবৃতিতে বিবিসি বলেছে, তারা স্বাধীন ও বিশ্বস্ত। তারা দৃঢ়ভাবে তাদের সাংবাদিক ও কর্মীদের সঙ্গে রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে তাঁদের জেরার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তাঁদের মঙ্গলই প্রতিষ্ঠানের অগ্রাধিকার।
একই সঙ্গে বিবিসি এ কথাও বলেছে, তারা সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করে যাবে। বিবিসির আশা, দ্রুত সব মীমাংসা হয়ে যাবে।
গত জানুয়ারি মাসে বিবিসি ২০০২ সালের গুজরাটি দাঙ্গা নিয়ে দুই পর্বের তথ্যচিত্র সম্প্রচার করে। ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোশ্চেন’ নামে তথ্যচিত্রে গুজরাটি দাঙ্গায় রাজ্যটির তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্পৃক্ততার কথা উঠে আসে। তথ্যটিত্রে বলা হয়, ওই দাঙ্গা মোদিকে পরবর্তীকলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে সাহায্য করেছিল।
তথ্যাচত্রটি ভারতে সম্প্রচার করা না হলেও সরকার তা নিসিদ্ধ করে। এ জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেওয়া হয়।
সরকার ও শাসক দল বিজেপির পÿ থেকে তথ্যচিত্রটিকে ‘ভারতের প্রতি আক্রমণ’ বলে চিহ্নিত করা হয়। বলা হয়, বিবিসি ঔপনিবেশিকতামুক্ত হতে পরেনি।
তথ্যচিত্রটির রেশ ভারতীয় পার্লামেন্টেও গড়ায়। বিরোধীরা বিষয়টি নিয়ে পার্লামেন্টে আলোচনার দাবি জানিয়েছিলেন।
পার্লামেন্টে বাজেট অধিবেশনের বিরতির পরদিন মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ভারতের আয়কর বিভাগ বিবিসির দিল্লি ও মুম্বাই কার্যালয়ে হানা দেয়।
সরকারিভাবে এই তদন্ত-তল্লাশিকে ‘সমিক্ষা’ বলে অভিহিত করে আয়কর বিভাগ। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রাইসিং বিধি হস্থান্তর ও লাভ সরানো-সংক্রান্ত অভিযোগ সমীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এই বিষয়ে বিবিসিকে আগে নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু তারা সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করেনি।
টারা ৬০ ঘন্টা ‘সমিক্ষা’ চালানোর পর গতকাল রাত ১১টার দিকে আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা বিবিসির দিল্লি ও মুম্বাই কার্যালয় ছেড়ে চলে যান। তারপর রাতেই ‘ বিবিসি নিউজ প্রেস টিম’ টুইটার অ্যাকাউন্টে বিবৃতি পোস্ট করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আয়কর কর্তৃপক্ষ আমাদের দিল্লি ও মুম্বাই অফিস ছেড়ে চলে গেছে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। আশা করি, দ্রুত এই সমস্যা মিটে যাবে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘কর্মীদের অনেকেই রাতে অফিসে থাকতে হয়েছে। দীর্ঘ সময় জেরার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তাঁদের মঙ্গল আমাদের অগ্রাধিকার। আমাদের কজকর্মও স্বাভাবিক হয়ে গেছে। ভারতসহ অন্যত্র আমাদের শ্রোতা-পাঠকদের কাছে খবর পৌছানোর ক্ষেত্রে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি বিবৃতিতে বলেছে, বিবিসি বিশ্বস্ত ও স্বাধীন সংবাদমাধ্যম। আমরা আমাদের সহকর্মী ও সাংবাদিকদের পাশে দৃঢ়ভাবে রয়েছি, যাঁরা ভয় না পেয়ে পক্ষপাতহীন খবর পরিবেশন অব্যাহত রাখবেন।’
ভারতে বিবিসির কার্যালয়ে দেশটির আয়কর বিভাগের হানা নিয়ে য্ক্তুরাজ্য সরকার এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। তবে দেশটির ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির সংসদ সদস্য বব ব্লাকম্যান আজ শুক্রবার ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, তথ্যচিত্রে সত্যের আপলাপ করা হয়েছে। কী কারণে গুজরাটে দাঙ্গা হয়েছিল, তা তথ্যচিত্রে খতিয়ে দেখা হয়নি। তা ছাড়া সুপ্রিম কোর্ট সব অভিযোগ বিচার করে জানিয়েছেন, মোদির বিরুদ্ধে যা বলা হয়েছে, তার বিন্দুবিসর্গ সত্য নয়।
বব বø্যাকম্যান আরও বলেন, একটি বাইরের সংস্থা তথ্যচিত্রটি তৈরি করেছে, যা বিবিসি তদারকি করেছে। বিবিসি ব্রিটিশ সরকারের অঙ্গ নয়। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়। কারণ, মনে হচ্ছে, যুক্তরাজ্য-ভারত সম্পর্ক নষ্ট করাতে বিবিসি তৎপর।
প্রথমআলো