Home প্রচ্ছদ ভোজ্য তেলে যারা, চালেও তারা

ভোজ্য তেলে যারা, চালেও তারা

31

ডেস্ক রিপোর্ট: গত ৫ মে সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৪০ টাকা বাড়ানো হয়। এক দিনে অত্যাবশ্যকীয় এই পণ্যের দাম এক লাফে বৃদ্ধির রেকর্ড এটি। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে আগেই বলা হয়েছিল যে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানো হবে। এ ঘোষণার পর অসাধু ব্যবসায়ীরা ভোজ্য তেল মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছিল। পরে নানা জায়গায় অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে মজুত করা ভোজ্য তেল উদ্ধার করা হয়। তখন এসব মজুতদারির সঙ্গে বড় বড় শিল্প গ্রুপের সম্পৃক্ততা বেরিয়ে আসে। প্রায় এক মাস পরে চালের ব্যাপারেও একই সত্য বেরিয়ে আসে। বাজারে চালের দাম বাড়ার পর প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় সারা দেশে যে অভিযান চলছে, সেখানে বড় বড় শিল্প গ্রুপের নামই উঠে এসেছে। এরা আবার তেলের সিন্ডিকেটের সঙ্গেও জড়িত।

ভোজ্য তেলের দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়তে থাকলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা মাঠে নামে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ অন্তত তিন দফা তেল বোতলজাত কোম্পানিগুলোকে ডেকে পাঠায়। প্রথম দফায় তারা যে বক্তব্য দেয়, সেটি গ্রহণযোগ্য হয় না। পরে আরো দুই বার তাদের ডেকে পাঠানো হয়। এসব কোম্পানি নিজেদের করপোরেট প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচয় দেয়। অবশ্য কোম্পানিগুলো ভোক্তা অধিকারের শুনানিতে বক্তব্য দেওয়ার সময় বিভিন্ন দেশের তেল রপ্তানি বন্ধের যুক্তি দেয়। পরে অবশ্য ইন্দোনেশিয়াসহ কিছু দেশ তেল রপ্তানি শুরু করলেও দাম আর কমেনি। বিশ্ববাজারে এরই মধ্যে তেলের দাম কমেছে, কিন্তু বাংলাদেশে যে গত মাসে একবার বাড়ানো হয়েছিল সেটি আর কমেনি। দাম বাড়িয়েও বাজারে এই অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক করা যায়নি, যার ফলে আবারও বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হয়। নানা জায়গায় নামিদামি কোম্পানিগুলোর গুদাম থেকে তেলের অবৈধ মজুত আবিষ্কার হতে থাকে।

তেলের মতো চালের দামের ক্ষেত্রেও এখন সিন্ডিকেটকে দায়ী করা হচ্ছে। কয়েক মাস ধরে বাজারে চালের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। রাজধানীর খুচরা বাজারে এখন প্রতি কেজি নাজিরশাইল ও মিনিকেট ৬০ থেকে ৭২ টাকা, মাঝারি মানের চাল পাইজাম ও লতা ৫২ থেকে ৫৬ টাকা এবং মোটা চাল ইরি ও স্বর্ণা ৪৮ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে সরু চাল নাজিরশাইলের কেজি ৮০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। বর্তমানে ৫০ টাকা কেজির নিচে কোনো চাল নেই। চালের সবচেয়ে বড় মৌসুম বোরো ওঠার পরও এভাবে দফায় দফায় দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। তাদের জিজ্ঞাসা, বোরোর ভরা মৌসুমে কেন চালের দাম বাড়বে?

রাজধানীর বাবুবাজার বাদামতলী ও বাবুবাজার চাল আড়ত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি নিজামউদ্দিন জানিয়েছেন, সাধারণ মিলমালিকদের পাশাপাশি এখন বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে ধান-চাল কিনছে। এর প্রভাবে বাজার চড়া। বাজারে পর্যাপ্ত চাল থাকলেও এই দাম বাড়ার কারণ নিয়ে নানা আলোচনা হয়। অবশেষে এতে হস্তক্ষেপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে তিনি এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করার কথা বলেন। এখন প্রতিদিনই বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চলছে। মজুতের সঙ্গে বড় বড় কোম্পানির নাম বেরিয়ে আসায় অবাক হচ্ছেন অনেকে।

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারও নিজ মুখে এসব কোম্পানির নাম বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বড় কোম্পানিগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তিক এলাকা থেকে চাল ও ধান কিনে মজুত করেছে। পরে তারা এসব চাল প্যাকেটজাত করে বাজারে নিয়ে আসে। বাজার থেকে কেনা চাল প্যাকেটজাত করতে পারবে না বলেও জানান খাদ্যমন্ত্রী।

ব্যবসায়ীরাই নির্ধারণ করেন মূল্য

ভোজ্য তেলের বাজার প্রায়ই অস্তির থাকে। গত দুই বছর ধরে প্রায় একই অবস্হা। কিন্তু গত মাসের শুরুর দিকে হঠাত্ করেই বাজার থেকে প্রায় উধাও হয়ে যায় সয়াবিন ও পাম অয়েল। কিন্তু হঠাত্ করে বাজার থেকে তেল উধাও হওয়ার কারণ কী? সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি মাসে সয়াবিন ও পাম অয়েলের যে দর নির্ধারণ করে দেয়, তা একটি মহলের পছন্দ নয়।

তাদের দাবি, ব্যবসায়ীরা নিজেরাই আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের বাজারে সয়াবিন ও পাম অয়েলের দর নির্ধারণ করবেন। ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েল রপ্তানি বন্ধ করে দিলে এই সুযোগ নেয় একটি চক্র। তারা বাজার থেকে সয়াবিন ও পাম অয়েল উধাও করে দেয়। রাতারাতি হু-হু করে দাম বাড়তে থাকে সয়াবিন ও পাম অয়েলের। অনেকটা বেকায়দায় পড়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সিন্ডিকেটের দাবি অনুযায়ী নতুন এই দর নির্ধারণ করা হয়েছিল।-ইত্তেফাক