ডেস্ক রিপোর্ট: ভারতের ওডিশায় ট্রেন দুর্ঘটনায় এখনো ৫২ জনের মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে পড়ে আছে। দুর্ঘটনার এক মাস পেরিয়ে গেলেও এসব মরদেহ এখনো স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি। স্বজনেরাও অপেক্ষায় রয়েছেন, কবে পাবেন মরদেহ।খবর প্রথমআলো

ওডিশার বালাসোরের বাহাঙ্গাবাজার স্টেশনের কাছে গত ২ জুন ওই দুর্ঘটনা ঘটে। সেখানে কলকাতা থেকে চেন্নাইগামী করমন্ডল এক্সপ্রেস একটি পণ্যবাহী ট্রেনে ধাক্কা দিয়েছিল। ঠিক একই সময় বিপরীত দিক থেকে যশবন্তপুর-হাওড়া এক্সপ্রেসএ সেখানে চলে এলে ভয়াবহ এই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ২৯৩ জন মারা যান এবং ১ হাজারের বেশি মানুষ আহত হন।

ভারতে এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা ছিল এটি। দুটি যাত্রীবাহী ট্রেনে তিন হাজারের বেশি যাত্রী ছিলেন। এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকার কমিটি গঠন করেছে। সেই তদন্ত এখনো চলছে।
তবে দুর্ঘটনার পরপর জোরালো উদ্ধার অভিযান চালায় ভারত। ফলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই উদ্ধারকাজ শেষ হয়। কিন্তু স্বজনের লাশের জন্য বেগ পেতে হয় স্বজনদের। এখনো অনেকেই স্বজনের লাশ খোঁজ করছেন। যেমন শিবচরণের কথা বলা যেতে পারে। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। গত এক মাস ধরে ওডিশার ভুবনেশ্বর শহরে থাকছেন তিনি।

শিবচরণ যে অতিথি শালায় থাকছেন সেটার পাশেই সরকারি একটি হাসপাতাল রয়েছে। মরদেহগুলো সেখানেই রাখা হয়েছে। সেখানকার হিমঘরে এই দুর্ঘটনার ৫২টি লাশ রাখা হয়েছে। কিন্তু এসব মরদেহের অনেকেরই মুখ চেনা যাচ্ছে না। অনেক মরদেহ দেখে বোঝার উপায় নেই এটা কার মরদেহ। শিবচরণ এই হাসপাতালে প্রতিদিন যান, এটা ভেবে যে আজ হয়তো তিনি ভাইয়ের লাশের সন্ধান পাবেন।

শিবচরণ তাঁর ভাইয়ের কাপড়চোপড় খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু ভাইকে পাননি। দুর্ঘটনার ঠিক আগ মুহূর্তে ভাই কৃশ্রার সঙ্গে কথা হয়েছিল তাঁর।
অন্য অনেকের মতো ভাইয়ের মরদেহ পেতে ডিএনএ নমুনা দিয়েছেন শিবচরণ। তবে সেই পরীক্ষার ফল এখনো আসেনি। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘কখন এই পরীক্ষার প্রতিবেদন আসবে তা কেউ বলে না।’ তবে ভাইয়ের মরদেহ না নিয়ে তিনি যাবেন না পশ্চিমবঙ্গে। ফলে এক মাসের বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছেন তিনি। শিবচরণ বলেন, ‘আমরা চাই তাঁর (ভাইয়ের) শেষকৃত্যটা ঠিকঠাক মতো হোক।’

ওডিশার এই দুর্ঘটনায় মারা গেছেন আনজারুল হক। তাঁর স্ত্রী ও তিন সন্তান বেঁচে গেছেন। তাঁদের বাড়িও পশ্চিমবঙ্গে। আনজারুলের লাশ পেতে অপেক্ষায় তাঁর পরিবার। এ জন্য আনজারুলের দুলাভাই মোহাম্মদ করিম এখন ভুবনেশ্বরে রয়েছেন। তিনি প্রতিদিন হাসপাতালে যান। মরদেহ পেতে আনজারুলের ভাই ডিএনএ নমুনা দিয়েছেন। এখন প্রতিবেদন পেতে অপেক্ষা।

মোহাম্মদ করিম বলেন, ‘এক মাস পার হয়ে গেছে; কিন্তু ভাইয়ের মরদেহ কোথায় আছে এখনো আমরা জানি না।’

দিন গড়াচ্ছে আর মরদেহ পাওয়ার আশা ক্ষীণ হয়ে আসছে। তবুও অনেকে অপেক্ষায়।

ডিএনএ প্রতিবেদন এলে শিব, মোহাম্মদ করিম তাঁদের স্বজনদের খুঁজে পাবেন এই প্রত্যাশায় অপেক্ষা। কারণ, গত সপ্তাহে ২৯ জনের ডিএনএ চিহ্নিত করা গেছে। কর্মকর্তারা জানান, এসব মরদেহ হস্তান্তর শুরু হয়েছে। তবে ৫২ মরদেহ এখনো হিমঘরে।

এ নিয়ে বিবিসির সঙ্গে কথা হয় ভারতের ইস্ট কোট রেলওয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ সাহুর সঙ্গে। তিনি বলেন, যাতে কোনো ভুল না হয়। অর্থাৎ একজনের মরদেহ যাতে আরেকজনের পরিবারের কাছে চলে না যায় সেই জন্য সতর্কতার সঙ্গে কাজটি করছেন তাঁরা।

বিশ্বজিৎ সাহু আরও বলেন, এই মরদেহগুলো ভুক্তভোগীদের পরিবারের হাতে তুলে দিতে রেলওয়ের কর্মকর্তা, ওডিশা পুলিশ ও ভুবনেশ্বর মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের কর্মকর্তা ও অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সের কর্মকর্তারা একযোগে কাজ করেছেন।

এদিকে কর্তৃপক্ষ আরেকটি কথাও বলছে। তারা মনে করছে, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের কাছে মরদেহ পৌঁছে দেওয়া কঠিন হবে। ফলে এখন কিছু প্রশ্ন উঠছে। সেগুলো হলো, আর কত দিন লাগবে এসব মরদেহ পরিবারের হাতে তুলে দিতে। আরেকটি হলো, যেসব মরদেহ শনাক্ত করা সম্ভব হবে না সেগুলোর কী হবে।

অনেকেই এখন পরামর্শ দিচ্ছেন, এসব মরদেহের শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হোক। কিন্তু বিশ্বজিৎ সাহু জানান, ডিএনএ নমুনার তথ্য না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।