Home বাণিজ্য ও অর্থনীতি সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভাঙানো হচ্ছে বেশি

সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভাঙানো হচ্ছে বেশি

25

ডেস্ক রিপোর্ট: বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র থেকে কিছু ঋণ নেয় সরকার। এখন সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে সুদ-আসল পরিশোধেই চলে যাচ্ছে বেশি। অর্থাৎ জমার থেকে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর পরিমাণ বেশি। ফলে সরকারের কোষাগার থেকে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল শোধ করতে হচ্ছে।খবর ইত্তেফাক।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সঞ্চয়পত্র বিক্রির হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) যে টাকার সঞ্চয়পত্র সরকার বিক্রি করেছে, তার চেয়ে ৩ হাজার ২৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার সুদ-আসল পরিশোধ করেছে। অর্থাত্ সঞ্চয়পত্র জমার চেয়ে ভাঙানোর পরিমাণ বেশি। ফলে সরকারের কোষাগার থেকে জমার টাকার চেয়ে পরিশোধ বেশি করতে হচ্ছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে জুলাই থেকে মে মাসে মোট ১১ মাসে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি ৩ হাজার ২৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা ঋণাত্মক (নেগেটিভ) হয়েছে। অর্থাত্ এই টাকা সরকার তার কোষাগার থেকে গ্রাহকদের সুদ-আসল বাবদ দিয়েছে। আর এ সময় ৭৪ হাজার ৭১৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকার মোট সঞ্চয়পত্র জমা পড়েছে সরকারের কোষাগারে। আর আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ ৭৭ হাজার ৭৪৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা শোধ করা হয়েছে।

গত ১০ মাসেও জুলাই-এপ্রিল সময়ে নিট বিক্রির পরিমাণ নেগেটিভ ছিল। এ সময় নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৫৭৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ৯ মাসে জুলাই-মার্চ সময়ে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ১৬১ কোটি ৭ লাখ টাকা (নেগেটিভ)। ৮ মাসে অর্থাত্ জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৫০৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা (নেগেটিভ)। ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৬৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

একক মাস হিসাবে মে মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৬৮০ কোটি ২২ লাখ টাকা। আর সুদ-আসল পরিশোধ করেছে ৬ হাজার ১২৯ কোটি টাকা। তবে একক মাস হিসাবে নিট বিক্রি কমে হয়েছে ৫৫১ কোটি টাকা।

চলতি বছর এপ্রিলে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৫৮১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। মার্চে ৬৫২ কোটি ৬ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। ফেব্রুয়ারিতে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি হয়েছে ৪৪০ কোটি টাকা ঋণাত্মক। জানুয়ারি মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি হয়েছে ৩৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। তবে এর আগের মাসে অর্থাত্ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি হয় ১ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা (ঋণাত্মক), যা সরকারি কোষাগার থেকে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে নভেম্বরে ৯৮৩ কোটি ৩২ লাখ, অক্টোবরে ৯৬৩ কোটি ১৬ লাখ এবং সেপ্টেম্বরেও সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ৭০ কোটি ৬৩ হাজার টাকা ঋণাত্মক ছিল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুদের হার হ্রাস ও নানা ধরনের কড়াকড়ি আরোপের কারণে সাধারণ মানুষের সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে গেছে। তবে সঞ্চয়পত্র কম বিক্রি হওয়ায় চিন্তার কিছু নেই। কারণ, সরকার চাইছে আগের চেয়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমিয়ে নিয়ে আসা। সে কারণেই নিট বিক্রি নেগেটিভ হয়েছে। ফলে সরকারকে কোষাগার থেকে সুদ-আসল পরিশোধ করতে হচ্ছে।

বাজারে সব জিনিসের দামই চড়া। মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে। পরিবহন, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ অন্য সব খাতেই খরচ বেড়েছে। এতে মানুষের সঞ্চয় করার ক্ষমতা কমে গেছে। এর প্রভাব পড়ছে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে।

বিক্রির চাপ কমাতে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎস করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একই সঙ্গে ১ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করার শর্ত আরোপসহ আরো কিছু কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তার পরও বাড়তে থাকে বিক্রি।

সর্বশেষ সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারকে যাতে বেশি সুদ পরিশোধ করতে না হয়, সে জন্য বিক্রি কমাতে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ২ শতাংশের মতো কমিয়ে দেয় সরকার। এরপর থেকেই বিক্রি কমছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটেও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা কমিয়েছে। কারণ সরকার ব্যাংক আমানত বা অন্য কোনো বিনিয়োগের চেয়ে সঞ্চয়পত্রে সুদ হার বেশি। প্রতি বছর সরকারকে সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। এই ব্যয় কমাতে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনা হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমে ১৮ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। যদিও সংশোধিত বাজেটে এটি ২০ হাজার কোটি টাকা ছিল।