ডেস্ক রিপোর্ট: সুরগুজায় হিন্দুত্ববাদীদের একটি গোষ্ঠী মুসলিমদের বয়কট করার শপথ গ্রহণ করেছে। শুক্রবার ‘ডেইলি সিয়াসাত’ বলছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে, হিন্দুত্ববাদীদের একটি বড় গোষ্ঠীকে মুসলিমদের কাছ থেকে কেনাকাটা করতে অস্বীকার করতে এবং তাদের বয়কটের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে দেখা গেছে।

এতে বলা হয়, ‘আজ থেকে আমরা হিন্দুরা কোনো মুসলিমের কাছে আমাদের জমি বিক্রি বা ইজারা দেবো না। আমরা যদি আমাদের জমি মুসলিমদের লিজ দিয়ে থাকি, আমরা তা অবিলম্বে ফিরিয়ে নেবো। আজ থেকে আমরা মুসলিমদের কাছে শ্রমিকের এবং অন্য কাজের জন্য যাব না। গ্রামে বা আমাদের এলাকায় যে ফেরিওয়ালা আসে আমরা প্রথমে তার ধর্ম যাচাই করব, সে যদি হিন্দু হিসাবে শনাক্ত হয় তবে কেনাকাটা করব, অন্যথায় নয়।’ ‘জয় শ্রী রাম’ এবং ‘ভারত মাতা কী জয়’ স্লোগান দিয়ে ওই শপথ কর্মসূচি শেষ হয়। লোকেরা ওই কর্মসূচিতে জড়ো হয়ে জীবনের শেষ পর্যন্ত তাদের সিদ্ধান্ত মেনে চলার অঙ্গীকার করেছিল।

সম্প্রতি হিন্দুত্ববাদী নেতা এবং মুখপাত্র ইয়েতি নরসিংহানন্দের নেতৃত্বে হরিদ্বারে তিন দিনের বিদ্বেষমূলক সমাবেশের পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত একটি পাবলিক ইভেন্টে ঘৃণাত্মক বক্তব্যের কয়েকটি ঘটনার মধ্যে এটি আরও একটি ঘটনা।

ওই বিষয়ে সুরগুজার কালেক্টর সঞ্জীব ঝা বলেন, পুলিশের এএসপি এবং এসডিএম বৃহস্পতিবার গ্রামটি পরিদর্শন করেছেন এবং সেখানকার লোকজনের সাথে কথা বলেছেন। পুলিশ উভয়পক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। তিনি বলেন, নববর্ষ উদযাপনের সময় এসব ঘটেছে। কেউ কেউ ওই ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রং দেওয়ার চেষ্টা করছে। এ সব হতে দেওয়া হবে না বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা।

সুরগুজার এএসপি বিবেক শুক্লা বলেন, গত ১ জানুয়ারি বলরামপুরের কুম্ভকলা গ্রামে আরা গ্রামের কিছু মানুষজন নতুন বছর উদযাপন করছিলেন। এ সময়ে উভয়পক্ষের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। আরাতে বসবাসকারী একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কুম্ভকলা গ্রামের লোকজনের বিবাদ হয়। পুলিশ গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করেছে। দ্বিতীয় দিনে ওই মামলায় ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু কারাগারে যাওয়ার পরপরই জামিন পায় তারা। এতে ক্ষুব্ধ হয় কুম্ভকলা গ্রামের লোকজন।

পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বাইরে থেকে কিছু লোক সুযোগ কাজে লাগিয়ে গ্রামের লোকজনকে উসকে দিয়ে সাম্প্রদায়িক রং দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

অন্যদিকে, হিন্দুত্ববাদী নেতাদের পক্ষ থেকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ উসকে দেওয়া, সংখ্যালঘুদের বয়কট করার প্রতিশ্রুতি সম্বলিত সাম্প্রতিক ঘটনায়, উত্তর প্রদেশের সোনভদ্র জেলার স্কুল শিশুদের ভারতকে একটি ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ করার অঙ্গীকার করানোর খবর প্রকাশ্যে এসেছে।

ওই বিষয়ে হিন্দি গণমাধ্যম ‘ডেইলি নিউজ’ জানিয়েছে, স্কুলের পোশাক পরা শিশুরা স্কুলের সময় শেষে পার্কে জড়ো হয়েছিল। কিছু শিশু যারা তাদের বাবা-মায়ের সাথে পার্কে এসেছিল তারাও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিল। ছাত্রদের ভারতকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তাদের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করতে বলা হয়েছিল। ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য প্রয়োজনে লড়াই, মরো এবং হত্যার শপথ নেওয়া হয়েছিল। সোনভদ্র জেলার নেহরু পার্কে স্কুলের বাচ্চাদের শপথ দেওয়া হয়েছিল এবং ‘ভারত মাতা কী জয়’, ‘বন্দে মাতরম’ এবং ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান দিয়ে তা শেষ হয়েছিল।

শপথে বলা হয় আমরা ভারতকে একটি ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ তৈরি ও বজায় রাখার জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আমরা এ জন্য লড়াই করব, এ জন্য মরব এবং প্রয়োজনে আমরা এ জন্য হত্যা করব। কিন্তু আমরা এক মুহূর্তের জন্যও পিছু হঠব না, যতই ত্যাগ স্বীকার করতে হোক না কেন। আমাদের পূর্বপুরুষ, শিক্ষক, ভারত মাতা আমাদের এমন শক্তি দিন যাতে আমরা আমাদের সংকল্প পূরণ করতে পারি এবং বিজয়ী হতে পারি।’-আমাদের সময়.কম