Home সারাদেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিরুত্তাপ নির্বাচন, স্থগিতের দাবি স্বতন্ত্র প্রার্থীর, ৯জনের কারাদন্ড

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিরুত্তাপ নির্বাচন, স্থগিতের দাবি স্বতন্ত্র প্রার্থীর, ৯জনের কারাদন্ড

15

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি॥ ভোট খরার মধ্যদিয়েই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহন সম্পন্ন হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত জেলার ৬টি নির্বাচনী আসনের ৭৬১টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহন অনুষ্ঠিত হয়। তবে ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রই ছিলো ফাঁকা। সংশ্লিষ্টরা বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোটার উপস্থিতি বাড়ার ধারণা করলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। এতে কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা অনেকটাই অলস সময় কাটিয়েছেন। বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখে গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে সরাইল অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র, উচালিয়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র, ব্রাহ্মণবাড়িয়া – ৩ আসনের নিয়াম মুহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র, অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র, রামকানাই হাই একাডেমী কেন্দ্রসসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি খুবই কম।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জালভোট দেওয়ার অভিযোগে ৯ জনের কারাদন্ড

জেলার সদর উপজেলা, পৌরসভা, বিজয়নগর, সরাইলে দুইজনকে ও আশুগঞ্জে একজনকে সাজা দেওয়া হয়। এছাড়া একই অভিযোগে আরো কয়েকজনকে আটক করা হয়।
এর মধ্যে পৌর এলাকার মধ্যপাড়া শান্তিবাগের মো. শাকিকুল ইসলাম অনন্ত, একই এলাকার মো. ইউসুফ, বিজয়নগরের সাটির পাড়ার আজিজুল ভূঁইয়া ও একই উপজেলার নোয়াগাঁও এর সাব্বির আহমেদকে দুই বছর করে কারাদ- দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সাজা হওয়া বাকিদের নাম জানা যায়নি। অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জালালউদ্দিন, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রিয়াজ উদ্দিনসহ দায়িত্বরত অন্যান্যরা এ সাজা দেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জাল ভোটের অভিযোগে কয়েকজনকে সাজা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, একজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক ভোটারকে ও আটক করা হয়েছে। সার্বিক ভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনে ভোট স্থগিতের দাবি স্বতন্ত্র প্রার্থীর……
মাঠে খেলতে নামিয়ে তারা চলে গেলেন
জাল ভোটসসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ সদর ও বিজয়নগর আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফিরোজুর রহমান ওলিও ভোট বর্জন করেছেন। রোববার বিকেলে চারটার দিকে তার সুলতানপুরস্থ বাস ভবনে সাংবাদিকদের সামনে ভোট বর্জনের ঘোষনা দেন।

এ সময় তিনি বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র থেকে তার এজেন্টদের বের করে দেওয়া, জাল ভোটের অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, প্রশাসনের সহযোগীতা পেলে এ ধরনের অনিয়ম হত না। তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে পুনরায় এ আসনে নির্বাচনের দাবি জানান। তিনি বলেন, নির্বাচনে এমন কোন অনিয়ম নেই যেটা করা হয়নি। জেলা নির্বাচন কমিশন থেকে যে আশ^াস পেয়েছিলাম তার একশ ভাগের এক ভাগও পাইনি। তাই আমি নির্বাচন বর্জন করে পুণরায় নির্বাচনের জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাই। আমার শত শত সমর্থকদের হুমকী দেয়া হচ্ছে। তাদের জীবন নিয়ে আমি এখন শঙ্কিত। প্রশাসন কি করল সেটা আমরা বুঝতে পারি নাই। তাদের আশ^াসেই আমরা নির্বাচনে এসেছিলাম। তারা এটা কি করলেন আমাদের মাঠে খেলতে নামিয়ে দিয়ে তারা চলে গেলেন। আমাদেরকে মাঠে নামিয়ে দিয়ে তারা তাদের মনের ইচ্ছা পূরণ করে নিয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্তরিক হলেও যারা বাস্তবায়ন করার কথা তাদের দ্বারা এটা হয়নি। আমি নির্বাচন কমিশনের কাছে এ আসনে পুণরায় নির্বাচনের দাবী জানাই।

এর আগে দুপুরে তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট শেখ ওমর ফারুক বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে ভোট গ্রহণ স্থগিত চেয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন। যদিও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা অভিযোগুলো সঠিক নয় উল্লেখ করে সুষ্ঠ ও সুন্দর পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। আমি এবং পুলিশ সুপর কেন্দ্র কেন্দ্র ঘুরেছি। শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ডাকাতের কবলে ২ পোলিং অফিসার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার সময় ডাকাতের কবলে পড়েছেন ২ পোলিং অফিসার। রবিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক সড়কের ধর্মতীর্থ এলাকায় পুটিয়া ব্রীজের নিকটে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। জানা যায়, উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের জয়ধরকান্দি পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পান মইন উদ্দিন আশেক (৩০) ও রুহিন উদ্দিন (১৮)। ওই দুই ব্যক্তি সরাইল সদরের স্বল্প নোয়াগাঁও গ্রাম থেকে ভোর ৫টার দিকে মোটর সাইকেল দিয়ে জয়ধরকান্দির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথিমধ্যে ধর্মতীর্থ এলাকার পুটিয়া ব্রিজ পার হওয়ার পরই মুখোশধারী ৪-৫ জন ডাকাত গাড়ি গতিরোধ করে মারধর করে। পরে নির্বাচনে দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত পত্র, বাইকের কাগজপত্র ও ২ টি মুঠোফোন সেট ছিনিয়ে নেয়। আহত দুই পোলিং অফিসার সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন।

দৃষ্টিহীন জমিলার ভোট প্রদান

জমিলা বেগম (৭০)। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে তিনি দৃষ্টিহীন। চোখের আলো সঙ্গ না দিলেও মনের জোরেই ছুটে আসেন ভোট কেন্দ্রে। বড় ভাইয়ের স্ত্রীর সহযোগীতায় পছন্দে প্রার্থীকে দিয়েছেন ভোট। ভোটারধিকার প্রয়োগে তার অন্যরকম ভালবাসা নজর কেড়েছে সকলের।
জমিলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সদর উপজেলার চিনাইর গ্রামের মৃত সিনু সিকদারের স্ত্রী। কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৩০ বছর বয়সে চোখের দৃষ্টি শক্তি হারান।
ভোট দেওয়ার পর দৃষ্টিহীন বৃদ্ধা জমিলা জানান, চোখে দেখতে পারি না তো কি হয়েছে। দেশের ও মানুষের কল্যাণে পছন্দে প্রার্থীকে ভোট দিয়েছি।

নবীনগরে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ আহত ৩

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও লাউর ফতেপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সাদেকের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল রবিবার দুপুরে উপজেলার বাশারোক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের নিকট এই হামলার ঘটনা ঘটে।
আঘাতে জাকির হোসেন সাদেকসহ দুই কর্মীর মাথা ফেটে গেছে। আওয়ামীলীগের একদল সমর্থক এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জাকির হোসেন সাদেক। জানা গেছে, ভোট দিতে যান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান। সেখানে ভিডিও চিত্র ধারণ নিয়ে স্থানীয় শওকতের সাথে বাকবিতন্ডা হয়। পরে কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে জাকির হোসেন সাদেকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় আহতদের চিকিৎসার জন্য নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে। খবর পেয়ে জেলা পরিষদ সদস্য নাসির উদ্দিন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান ও ভাইস চেয়ারম্যান শিউলি রহমান আহতদের দেখতে এসে বলেন, জনপ্রতিনিধিদের নিরাপত্তা নেই সেখানে সাধারণ জনগণ কি করবে?