Home জাতীয় বিশ্ব নারী দিবস: উন্নয়ন ও সমতার স্বপ্ন আজো অধরা

বিশ্ব নারী দিবস: উন্নয়ন ও সমতার স্বপ্ন আজো অধরা

14

ডেস্ক রিপোর্ট:।। আজ ৮ মার্চ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস। প্রতিবছর সারা দুনিয়ার মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে পালিত হয় দিবস পালিত হয়। এ বছর নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, রাজনৈতিক দল, নারী সংগঠন এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ নারী দিবস পালনের উদোগ গ্রহণ করেছে। এবছর দিবস দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য ‘নারীর সমঅধিকার, সমসুযোগ, এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ।’ নারী উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহে নারী উন্নয়নে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানাতে এ প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

কিন্তু আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে কেন্দ্র করে আবারো ঘুরে ফিরে সেই একই প্রশ্ন-নারীর মর্যাদা এবং সমতা কি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? নারীর ক্ষমতায়নই বা কতদূর? কেবল তাই নয়, নারী-পুরুষের যে বৈষম্য-তা নিরসনে কতদূর এগিয়েছে বাংলাদেশ? স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসে কি পেলেন এদেশের নারীরা? আত্মজিজ্ঞাসার এই উত্তর খুঁজছেন দেশের প্রতিবাদী নারী সংগঠন ও সচেতন মানুষ। কারণ ফি বছর ঘটা করে নারী দিবস পালন করলেও নারী মুক্তি, নারী স্বাধীনতা, নারীর উন্নয়ন ও সমতার স্বপ্ন আজো অধরা। 

এ কথা সত্য যে, আগের চেয়ে নারী উন্নয়ন ও অগ্রগতি এগিয়েছে। শিক্ষায় নারীদের উন্নতি হয়েছে। প্রসূতি ও মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে, নারী ও মেয়েশিশুদের স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি পরিস্থিতিরও অনেক উন্নতি ঘটেছে। কমেছে শিশুমৃত্যুর হার। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে মেয়েশিশুরা ছেলেশিশুদের সমান হার অর্জন করেছে। শিক্ষার পরবর্তী স্তরগুলোতেও মেয়েদের অংশগ্রহণ অনেক বেড়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীপরিষদ, স্পীকার, মাঠের বিরোধীদল, পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ প্রশাসনের সর্বস্তরে উচ্চপদে নারীরা স্থান করে নিয়েছেন। নারীরা এখন বিমানও চালায়। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নারীরা শহর এবং গ্রাম-সব জায়গা থেকে বড় অবদান রাখছেন।

কিন্তু প্রশ্ন হলো নারী যে উন্নয়ন ও অগ্রগতি তা কি সর্বক্ষেত্রে। ‘না’, নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন কেবল উপর তলায়। এখনো নিচু তলার নারী গ্রামীণ শ্রমজীবী ও শহরের শ্রমজীবী নারীদের কোনো উন্নয়ন হয় নি। বরং তারা পদে পদে লাঞ্চিত ও বঞ্চিত হচ্ছেন।

নারীর প্রতি সমাজের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি এখনো বৈষম্যমূলক। নারীর নিরাপত্তার প্রশ্নটি আরো জটিল হয়েছে। ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনসহ নানা ধরনের সহিংস অপরাধের ক্ষেত্রে নারীর নাজুকতা হ্রাস পায় নি। বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে নারী ও শিশু ধর্ষণের রঙ্গমঞ্চে। প্রতিনিয়ত নারীরা ধর্ষণ-নির্যাতন এমনকি ভয়াবহ সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। ধর্ষকামী পুরুষের বিচার হচ্ছে না। কর্মক্ষেত্রে, পরিবহনে এবং বাড়িতেও ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। ধর্ষণের অপরাধ আদালতে প্রমাণ করার ক্ষেত্রে আইন, পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি বাধা হিসেবে কাজ করে। বরং থানায় পুলিশের জেরা ও তদন্তে এবং আদালতে আইনজীবী ও বিচারকের জেরায় বার বার মানসিকভাবে ধর্ষিত হচ্ছেন। ধর্ষণের শিকার নারীর ব্যক্তিগত চরিত্র সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ ও প্রকাশ করার অতি আপত্তিকর প্রবণতা আইনের যথাযথ প্রয়োগে বিঘ্ন ঘটায়। ধর্ষণ, ধর্ষণের পরে খুন ছাড়াও আমাদের নারীদের ওপর নানা ধরনের সহিংসতা চলছে। ৮৭ শতাংশ নারী নিজের ঘরেই নিগ্রহের শিকার; গণপরিবহনে যৌন নিপীড়নের শিকার ৯৪ শতাংশ নারী। তা ছাড়া, পারিবারিক ও উত্তরাধিকার আইনে অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের বৈষম্য এখনো রয়ে গেছে। নারী উন্নয়ন নীতি ঘোষিত হয়েছে, কিন্তু বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয় নি। বাল্যবিবাহ সারা পৃথিবীতে কমছে, কিন্তু বাংলাদেশে বাড়ছে।

নারী উন্নয়নের পাশাপাশি সমতা ফেরাতে সবার আগে সমাজকে সব ধরনের অন্ধত্ব, অনাচার ও কুপণ্ডুকতা থেকে মুক্ত করতে হবে। নারীকে ধর্মীয় বেড়াজালে বন্দি করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে খুশি করতে নারীকে হিজাবে আটকে রাখার মধ্যযুগীয় চেষ্টা এখনো অব্যাহত। এখনো নারীরা নিজের ইচ্ছার কোনো মূল্য নেই, চলতে হয় অন্যের হাত ধরে। অন্যের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তে মানতে বাধ্য। দেশের ৫০ শতাংশের বেশি নারীর বিয়ে হয়েছে ১৮ বছরের আগেই। প্রায় ১৮ শতাংশের বিয়ে হয়েছে ১৫ বছরের আগে। পরিবারের সিদ্ধান্তে বাল্যবিয়ের কারণে মেয়েরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে। এ অবস্থায় নারীর উন্নয়নে দেশ এগোলেও সমতায় এখনো আশাতীত সফলতা আসে নি। তাই সবার আগে নারীর মর্যাদা ও সমতা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব দিতে হবে। শ্রমজীবী নারীদের শ্রমের ন্যায্যমজুরি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্মের বেড়াজাল থেকে নারীকে বের করে আনতেন হবে-সেটাই হোক আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রত্যাশা।