Home রাজনীতি বিকল্প শক্তি হয়ে উঠতে পারেনি বামরা

বিকল্প শক্তি হয়ে উঠতে পারেনি বামরা

33

ডেস্ক রিপোর্ট: বিভক্তির বেড়াজালে আবদ্ধ দেশের বাম প্রগতিশীল দলগুলো গত তিন দশকেও রাজনৈতিক অঙ্গনে বিকল্প শক্তি হয়ে উঠতে পারেনি। বামপন্থিদের একটি অংশ শাসক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে মাঠে আছে। আরেকটি অংশ আছে বিএনপির সঙ্গে। এর বাইরে বাম ঘরানার দলগুলোর পৃথক দুটি জোট আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির বাইরে দেশের রাজনীতির মাঠে বিকল্প শক্তি হয়ে ওঠার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু ভোটের মাঠেও কাঙ্ক্ষিত কোনো সফলতা পায়নি। এমনকি জনমনেও এ দলগুলো তেমন কোনো সাড়া ফেলতে পারেনি।

সংশ্লিষ্টদের মতে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বিদলীয় ধারার বাইরে বিকল্প শক্তি হিসাবে নিজেদের দাঁড় করাতে প্রায় তিন দশক ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাম ঘরানার দলগুলো। জাতীয় এবং জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে এরা নিজেদের শক্তি ও সামর্থ্য অনুযায়ী রাজপথে বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকার চেষ্টা করেছে। এ চেষ্টায় কখনও এগিয়েছে, আবার কখনও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে নিজেরাই বিভক্ত হয়েছে নানা ভাগে। বামপন্থি নেতাদের কারও কারও সুবিধাভোগী রাজনীতি, ক্ষমতাসীনদের বলয়ে থেকে মন্ত্রী-এমপি হওয়ার আকাঙ্ক্ষাও পিছিয়ে দিয়েছে বাম আন্দোলনকে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনাকালীন সংকট।

জানতে চাইলে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বুধবার বলেন, আমরা বামপন্থিরা নিজেদের বিকল্প শক্তি হিসাবে গত তিন দশকেও দাঁড় করাতে পারিনি। এটা অপ্রিয় হলেও সত্য। তবে জনজীবনের প্রতিটি ইস্যুতে জীবনবাজি রেখে আন্দোলন-সংগ্রামটা কিন্তু আমরা অব্যাহত রেখেছি। বামপন্থিদের একটি অংশের চরম সুবিধাবাদী প্রবণতা, ক্ষমতার বলয়ে থাকার মানসিকতা, মন্ত্রী-এমপি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা, আমাদের বিকাশের পথ বারবার রুদ্ধ করেছে। বামপন্থার অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত এবং ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

তিনি আরও বলেন, তবে এটাও ঠিক সীমিত শক্তি এবং সামর্থ্য দিয়ে তেল-গ্যাস-জ্বালানি সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ব্যানারে গত তিন দশকে আমরা যে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি এবং সারা দেশে যে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলেছি, তা আমাদের বাম-প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক শক্তির জন্য বড় সফলতা। এটি কিন্তু অস্বীকার করা যাবে না।

বাম ঘরানার নেতাদের মতে, করোনার বিধিনিষেধের বেড়াজালে আটকে থাকায় প্রায় দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা বলতে গেলে এক প্রকার থমকেই ছিল। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন তারা। ইতোমধ্যে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদার এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ দলগুলো। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি এবং গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোসহ জনজীবনের নানা সমস্যা নিয়ে রাজপথে আবারও সক্রিয় হওয়ার কথা ভাবছেন তারা।

জানা গেছে, বাম প্রগতিশীল ঘরানার দলগুলোর মধ্যে বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে রয়েছে-বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), সাম্যবাদী দল (এমএল), বাংলাদেশ জাসদ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (মোজাফফর) এবং গণতন্ত্রী পার্টি, গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি এবং কমিউনিস্ট কেন্দ্র। অপরদিকে বিএনপির সঙ্গে রয়েছে- জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ ভাসানী) এবং বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (সাঈদ আহমেদ)।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জোটের বাইরে ৯টি বাম ঘরানার রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোট নামের একটি জোট দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে সক্রিয়। এ জোটে রয়েছে-বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ-মার্কসবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী)।

এর বাইরেও আরও ৯টি বামপন্থি দলের সমন্বয়ে একটি জোট রয়েছে। ‘নয় দল নামে’র এই জোটে আছে-জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, জাতীয় গণফ্রন্ট, নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চ, নয়া গণতান্ত্রিক গণমঞ্চ, বাংলাদেশ সাম্যবাদী আন্দোলন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ-মাহবুব), গণমুক্তি ইউনিয়ন, কমিউনিস্ট কেন্দ্র (ইমাম গাজ্জালী) এবং বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক পার্টি। প্রবীণ রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন ঐক্য ন্যাপসহ আরও কিছু বাম দল রয়েছে, যারা কোনো জোটের অন্তর্ভুক্ত না থেকে নিজস্ব শক্তি এবং সামর্থ্য অনুযায়ী পথ চলছে।

এই দুই জোটের নেতাদের মতে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জোটের বাইরে থাকা বামপন্থি দলগুলো ‘বিকল্প শক্তি’ গড়ে তোলার সংগ্রামে দীর্ঘদিন ধরেই মাঠে রয়েছে। এ কারণে নির্বাচনি রাজনীতির মাঠে প্রধান দুই জোটের কোনোটিতেই যুক্ত হতে আগ্রহী নয়। ভোটের ফলাফল যাই হোক না কেন, গত কয়েকটি নির্বাচনে বামপন্থিরা আলাদাভাবে অথবা সমমনাদের জোটের ব্যানারে ভোটে অংশ নিয়েছে। আগামীতেও একই পথে হাঁটতে চান তারা। এজন্য প্রয়োজনে শরিক সংখ্যা আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেবেন তারা।

এদিকে বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার অংশ হিসাবে ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কংগ্রেস আয়োজন করতে যাচ্ছে দেশের অন্যতম প্রধান বামপন্থি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলটির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, এই কংগ্রেসের মাধ্যমেই দলটির নেতৃত্বে আসতে যাচ্ছে বড় ধরনের পরিবর্তন। ‘দুঃশাসন হটাও, ব্যবস্থা বদলাও, বিকল্প গড়ো’ স্লোগানে ২৫ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির এই কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে।

জানা গেছে, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে সিপিবির সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ, ডাকসুর সাবেক ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এবার আর তিনি সভাপতি পদে থাকতে পারবেন না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই নতুন নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হবে। গঠনতন্ত্রের সংশোধনী নিয়ে প্রস্তাব থাকলে সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে কংগ্রেসে ঠিক করা হবে। দলের নেতৃত্বে কে আসবে, এটি সবসময় কংগ্রেস নির্ধারণ করে থাকে। এবারও কংগ্রেসই নির্ধারণ করবে দলের নেতৃত্ব কী হবে- দাবি করেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।-যুগান্তর