Home স্বাস্থ্য সংবাদ সম্মেলনে স্পেশালাইজড হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. আরফিনের শাস্তির দাবি

সংবাদ সম্মেলনে স্পেশালাইজড হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. আরফিনের শাস্তির দাবি

52

জাকির হোসেন আজাদী: ভুল চিকিৎসায় রুগীর জীবন বিপন্ন হওয়ার কারণে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. এম এস আরফিনের শাস্তির দাবিতে আজ (২৯ আগস্ট ) সোমবার দুপুর দুইটায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বাংলাদেশ মিউজিশিয়ান ফাউন্ডেশনের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও সকলস্তরের মিউজিশিয়ান, শিল্পী এবং গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এই সংবাদ সম্মেলনে রুগীর বাবা বাংলাদেশের ক্লাসিক‍্যাল গানের উস্তাদ প্রখ‍্যাত শিল্পী টোন এন্ড টিউন স্টুডিওর মালিক শেখ জসিম লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তাতে ভুল চিকিৎসার কারণে তার কন‍্যা মৃত‍্যুর সম্মুখীন উল্লেখ করে অভিযুক্তের শাস্তি দাবী করেন।

তিনি বলেন, “২০১৭ সাল থেকে মেহবিশ জাহান, ডাঃ এম এস আরফিনের শরনাপন্ন হন। ডাঃ এম এস আরফিন তখন স্কয়ার হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। তারপর রোগী ২০২১ সালে একবার এবং ২০২২ সালের জুলাই মাসে পুনরায় অগ্ন্যাশয়ে সিস্টের জন্য ডাঃ এম এস আরফিনের কাছে পরামর্শ করেন। ৩১ জুলাই ২০২২ তারিখে,
ডাঃ এম এস আরফিনের সাথে পরামর্শের পর, তিনি রোগীকে কিছু পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন এবং
পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে তাকে আবার দেখা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।”

তিনি আরও বলেন, “২ আগস্ট ২০২২ তারিখে, রোগীর সিটি স্ক্যান ও রক্ত পরীক্ষা করা হয় এবং ৩রা আগস্টে একটি এন্ডোস্কোপি করা হয়, যা ডা. এম এস আরফিন নিজেই করেছিলেন। ৬ই আগস্ট, সমস্ত পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে রোগী ডাঃ এম এস আরফিনের কাছে পরামর্শের জন্য যান। উক্ত তারিখেই (৬ই আগস্ট), ডাঃ আরফিন পরবর্তী প্রসেডিউর, “অগ্ন্যাশয় সুডোসিস্ট ড্রেইনেজ ” এর জন্য সোমবার থেকে বুধবার, (৮ আগস্ট হতে ১০ তারিখে) যে কোন দিন রোগীকে হাসপাতাল এসে প্রসেডিউর সম্পন্ন করার পরামর্শ দেন। ডাঃ আরফিন কখনোই ই,আর,সি,পি প্রসিডিওর -এর ঝুঁকি সম্পর্কে রোগী বা রোগীর পরিবারকে অবহিত এবং সতর্ক করেননি, যাতে করে রোগী বা রোগীর পরিবারবর্গ মানসিকভাবে এবং যৌক্তিকভাবে এর জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে। রোগী ৯ আগস্ট সকাল ৯:৩০ টার দিকে প্রসিডিউর এর জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন এবংঅস্ত্রোপচার/প্রক্রিয়ার কল পাওয়ার জন্য বিকেল ৩:৩০ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। অস্ত্রোপচারের আগে কোন ডাক্তার বা হাসপাতালের স্টাফ আসেনি এবং রোগী, রোগীর অভিভাবক/পরিবার কে ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেনি। রোগী বিকাল ৩:৩০ টায় ই-আর-সিপি বিভাগে যান। “

তিনি বলেন, “রোগীর স্বামীকে সন্ধ্যা ৫:৩০ টার দিকে
ই-আর-সিপি রুমে ডাকা হয়েছিল এবং ডাঃ এম এস আরফিন বলেছিলেন যে রোগীর অবস্থা গুরুতর কারণ প্রক্রিয়া চলাকালীন সময় একটি আর্টারি কেটে গেছে এবং তাকে আই সি ইউতে স্থানান্তরিত করতে হবে। তখন ডক্টর ইমরুল হাসান খান অথবা কোনো জরুরি চিকিৎসক দল ও উপস্থিত ছিলেন না। রোগীকে আইসি ইউতে স্থানান্তরিত করার সময় ডাঃ ইমরুল হাসান হস্তক্ষেপ করেন এবং রোগীকে আইসিইউ তে না নিয়ে সরাসরি ওটি-তে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। “

তিনি বলেন, “অপারেশন শুরু হবার সময় রোগীর কোনো পালস ছিল না (আমাদের কাছে সার্জনের বক্তব্য সংরক্ষিত আছে)। ডাঃ ইম্প্রুল এসে বলেছিলেন, “আমরা সৃষ্টিকর্তা নই, আমরা কেবল মাধ্যম তবুও আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব। রুগির বেঁচে থাকার সম্ভাবনা মাত্র ১%। আমরাজানিনা রক্ত কোথার থেকে আসছে এবং কত দ্রুত আমরা এটি বন্ধ করতে পারব।” অস্ত্রোপচার শুরু করার পর তারা আমাদেরকে ৭ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করতে বলেন। ডাঃ আরফিন চিকিৎসার ঝুঁকি সম্পর্কে উল্লেখ করেনি যাতে করে রোগীর পরিবার আগের থেকে প্রস্তুতি নিতে পারে এবং হাসপাতাল ও এই ব্যাপারে প্রস্তুত ছিল না কারণ উক্ত সময়ে ব্লাড ব্যাংক এ রক্ত এবং রক্তের ডোনার পাওয়া যায়েনি।”

তিনি বলেন, “অপারেশনের পর রোগীকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তিনি ভেন্টিলেশনে ছিলেন এবং তার অবস্থা এতটাই সঙ্কটজনক ছিল যে তাকে আই সি ইউ ৩ দিন রাখতে হয়। পরবর্তীতে তাকে এইচডিইউ তে দেড় দিন এবং তারপর কেবিনে স্থানান্তরিত করা হয়। রোগী হাসপাতালে থাকা কালীন সময় ডাঃ আরফিন কখনই রোগীর পরিবারের নিকট দেখা করতে আসেননি এবং বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে ডাকেননি। যেহেতু রোগীর সাথে অনেক কিছু ঘটেছে এবং সে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে গুরুতরভাবে আঘাত পেয়েছিল তাই আমরা (রোগীর পরিবার) তাকে প্রথমে হাসপাতাল থেকে বের করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং পরবর্তীতে বিষয়টি অনুসরণ করার চিন্তা করে। বাংলাদেশ স্পেশালাইজ্‌ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিল পরিশোধ করতে বলে, অন্যথায় তারা রোগীকে ছাড়বেনা বলে সাফ জানিয়ে দেন। অগ্ন্যাশয় বা pancreatic সুডোসিস্ট drainage এর জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথমে ৭০ হাজার টাকা মত বিল ধারনা দিলেও, সেই চিকিৎসা বাস্তবায়তনে ডাঃ আরফিন ব্যর্থ হন। তার ব্যর্থতার মাসুল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগী নিকট হতে আদায় করেন। যার পরিমান ৪ লাখ ৫৭ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, “তাদের সেই তথাকথিত “দুর্ঘটনার” জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে ৪০ হাজার নগদ ছাড় দিয়ে ৪ লাখ ১৭হাজার টাকার চুড়ান্ত বিল করেন। রোগী তার অফিস থেকে বীমা কভারেজ পায় ২ লাখ ১৭ হাজার। তার অফিস থেকে প্রাপ্ত বীমা কভারেজ থেকে ২ লাখ ১৭ হাজার ও নগদ ২ লাখ টাকা যুক্ত করে, হাসপাতালের চুড়ান্ত বিল পরিশোধ করেন। রুগী যেই রোগ নিরাময়ের জন্য ডাঃ এম এস আরফিনের শরনাপন্ন হয়, সেই চিকিৎসা সে পায়নি। উল্টো ভুল চিকিৎসায় রোগীর মুল চিকিৎসা আগামী ৬ মাস বিলম্বিত হবে।”

তিনি বলেন, “আমরা প্রাথমিক ভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কয়েকটি উত্তর চেয়েছিলাম। যা আমরা পেতে ব্যর্থ হই । এছাড়াও হাসপাতাল থেকে কেউ আমাদের এই দুর্ঘটনার পরিপেক্ষিতে কথা বলতে আসেনি। আমরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাদের থেকে কোন উত্তর পাইনি। আমাদের রোগীর সাথে যা হয়েছে তা অবশ্যই ভাষায় বলে প্রকাশ করা যাবে না। রুগীর শরীর ভাল নেই। তিনিই এখনও অসুস্থ। আমাদের আজকে এখানে আশার একটাই কারণ। অন্যায় হলে তার প্রতিবাদ অবশ্যই করতে হবে বলে আমরা মনে করি। পরিবর্তন এখান থেকেই আসে। আমরা রোগীর পরিবার, একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসাবে এই অমানবিক ঘটনার জন্য একটি দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি প্রত্যাশা করি এবং এরকম ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয় এই জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ সহযোগিতা কামনা করছি। “

এ বিষয়ে জানার জন্য অভিযুক্ত বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. এম এস আরফিনের নিজস্ব মোবাইল নাম্বার ও টেলিফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।