Home মতামত বাসন্তী রঙে রঙিন বাঙালি মন।

বাসন্তী রঙে রঙিন বাঙালি মন।

37

জাকারিয়া আজাদ বিপ্লব।

প্রভাতে শুনতে পেয়েছি পলাশের ডালে কোকিলের ডাক। শিমুলের থোকা থোকা ফুল তুলে শিশুদের হই হুল্লোড়। ফুল ফুটেছে ডালে ডালে। উষ্ণতার ছোঁয়ায় প্রজাপতি ডানা মেলেছে। দখিন হাওয়ার গুঞ্জরণে হৃদয়ে জেগেছে রেশমি পরশ। নিসর্গ জেগেছে নতুন রূপে। হাওয়ায়-হাওয়ায় দোল লেগেছে বাংলার প্রকৃতিতে। প্রকৃতি আজ জানান দিচ্ছে, ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।’ কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ভাষায় ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত।’ কবির শঙ্কা দূর করে ফুল ফুটেছে। গাছে গাছে ফুটেছে আমের মুকুল। শীতের খোলসে থাকা কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্কন এখন অলৌকিক স্পর্শে জেগে উঠেছে। প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আজ বাসন্তি রঙের শাড়ি পরবে নারীরা। রঙে রঙিন হবে নারী, পুরুষ সবাই। ১লা ফাল্গুনের সঙ্গে আজ যোগ হয়েছে ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালোবাসা দিবস। একই দিনে দুটি দিবসের আনন্দ ছুঁয়ে যাবে প্রাণে। বসন্তের এই দিনে হৃদয় উদার, উন্মুক্ত করতে হবে। বসন্তকে আজ বরণ করে নিতে হবে। কবিগুরু তাই বলেছেন, ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে/তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে/কোরো না বিড়ম্বিত তারে/ আজি খুলিয়ো হৃদয়দল খুলিয়ো/ আজি ভুলিয়ো আপনপর ভুলিয়ো।’ বসন্তকে বরণ করে নিতে বেশ কিছু দিন ধরে ছিল নানা প্রস্তুতি। শপিং মল থেকে বিউটি পার্লার, ফুলের দোকানে ব্যস্ত তরুণ-তরুণীরা। ব্যস্ততা ছিলো, সংস্কৃতি কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের। শোভাযাত্রার বৈচিত্রময় আয়োজনের ব্যস্ততা শেষে আজ বরণ করা হচ্ছে বসন্তকে।

বেশ কয়েক দিন পূর্ব থেকে বসন্তের আগমনী বার্তা জানাচ্ছিলো প্রকৃতি।
সকালের কুয়াশার বুক চিরে আকাশে কোনো উঁকি দেয় লাল টকটকে সূর্যের মুখ। কখনও দেখা গেছে ঝকঝকে রোদ। চাদরমোড়া শীতকে বিদায় জানিয়ে এসেছে বসন্ত। এসেছে ফাগুন। সঙ্গে ভালোবাসা দিবসের উষ্ণ ছোঁয়া। যেনো কেউ কানে কানে বলে, চলো হারিয়ে যাই। পাতার আড়ালে আবডালে লুকিয়ে থাকা বসন্তের দূত সুর তোলে কুহু কুহু সুরে। কোকিলের এই সুরে ব্যাকুল হতেই পারে বিরহী অন্তর।

বসন্তের অসংখ্য ফুলের ভিড়ে জেগে উঠে কৃষ্ণচূড়াও পলাশ। রক্তের রঙে রাঙিয়ে ওঠা এই ফুল জানিয়ে দেয় এই ফাগুনের দিনেই বাংলা ভাষাকে ভালোবেসে জীবন দিয়েছেন আমাদের পূর্ব পুরুষ দামাল ছেলেরা। এই ফেব্রুয়ারিতেই আমার ভাইয়ের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে রাজপথ। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কী ভুলিতে পারি..।’ এই বসন্তে মিশে থাকে তারুণ্যের সাহসী উচ্ছ্বাস আর বাঁধভাঙা আবেগের জোয়ার। বসন্তের প্রথম দিনে নারীরা বাসন্তী রঙে নিজেকে রাঙিয়ে তোলে। সুশোভিত করে তোলে রাজধানী ঢাকা রাজপথ, পার্ক, বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরসহ শহর জুড়ে । উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে জেলায় জেলায় ছোট ছোট শহর শিক্ষাঙ্গনে, গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে দেশের সর্বত্র। পৃথিবীব্যাপি বাঙালির ঘরে ঘরে ফুল ফুলে বসন্ত ছুঁয়ে যায় মানব মানবীর অন্তরে ।

বাংলা পঞ্জিকা বর্ষের শেষ ঋতু বসন্তের প্রথম দিনকে বাঙালি পালন করে ‘পহেলা ফাল্গুন-বসন্ত উৎসব’ হিসেবে। বাঙালির নিজস্ব সার্বজনীন প্রাণের উৎসবের মাঝে এ উৎসব এখন গোটা বাঙালির কাছে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। এই উৎসব এখন প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে। মোগল সম্রাট আকবর ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেন। নতুন বছরকে কেন্দ্র করে ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বসন্ত উৎসব। ১৪০১ বঙ্গাব্দ থেকে ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন শুরু হয়। সেই থেকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ বসন্ত উৎসব আয়োজন করে আসছে। পহেলা ফাল্গুনকে উপলক্ষ্য করে নানান অনুষ্ঠানে মেতে উঠেছে বাঙালি মন।