Home জাতীয় বায়ুদূষণ কমাতে দ্বৈত নীতির পরিহার জরুরী

বায়ুদূষণ কমাতে দ্বৈত নীতির পরিহার জরুরী

27

সৈয়দ আমিরুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি : দেশের চলমান বায়ুদূষণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং বায়ুদূষণ সংশ্লিষ্ট বিধিমালা এবং নীতি সমূহের উপর পর্যবেক্ষণ এবং সম্ভাব্য সুপারিশ নিয়ে আজ শনিবার (১৫ই এপ্রিল ২০২৩) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এবং বারসিক-এর যৌথ আয়োজনে “বায়ুদূষণ কমাতে দ্বৈত নীতির পরিহার জরুরী” শীর্ষক একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

উক্ত সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য প্রদান করেন স্টামফোর্ড বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)- এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।
ক্যাপস-এর গবেষক ইঞ্জিঃ মোঃ নাছির আহম্মেদ পাটোয়ারীর সঞ্চালনায় ইন্সটিটিউট অব আর্কিটেকচার-এর সহসভাপতি এবং স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সাধারন সম্পাদক শরীফ জামিল।
উক্ত সম্মেলনে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)-এর প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক ও ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি)-এর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান এবং বারসিক-এর সমন্বয়কারী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম।

স্টামফোর্ড বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)- এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার মূল প্রবন্ধে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বায়ু দূষণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি উপলব্ধি করে পিএম২.৫ এর আদর্শমান প্রতি ঘনমিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম থেকে কমিয়ে ৫ মাইক্রোগ্রাম করেছে। সেখানে বাংলাদেশের “বায়ু দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০২২” (তফসিল-১)-এ পিএম২.৫ এর আদর্শমান প্রতি ঘনমিটারে ১৫ মাইক্রোগ্রাম থেকে বাড়িয়ে ৩৫ মাইক্রোগ্রাম করা হয়েছে। আবার বায়ু দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০২২ এর তফসিল-৫ অনুযায়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্ট্যাক ইমিশনের জন্য সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ এবং বস্তুকণার সর্বাধিক অনুমোদিত সীমা যথাক্রমে ২০০, ২০০ এবং ৫০ মিলিগ্রাম/ন্যানো ঘনমিটার। যা যেসব দেশ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলার সহযোগিতা করছে, তাদের চেয়েও এই মান ৪-৫ গুণ বেশি।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিল্প মন্ত্রণালয় আমদানি ব্যয় কমাতে ২০২৩ সালের ১২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত এক সভায় ৫০০ পিপিএম বা তার বেশি মাত্রার সালফার যুক্ত ডিজেল আমদানি করতে সম্মত হয় যদিও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউটের (বিএসটিআই) তথ্য অনুযায়ী, ডিজেলের মধ্যে সালফারের সীমা ৩৫০ পিপিএম পর্যন্ত নির্ধারিত ছিল।
সবশেষে তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক প্রণীত নতুন পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-২০২৩ এর তফসিল-১ অনুযায়ী কয়লা ও তেল ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্লান্ট (৫০ মেগাওয়াট পর্যন্ত) এবং গ্যাস ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্লান্ট (১০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত) কমলা শ্রেণীর অন্তভুক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান। এই সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ (EIA-Environmental Impact Assessment) প্রয়োজন নেই। কিন্তু পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-১৯৯৭ অনুযায়ী সমস্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে লাল বিভাগের অধীনে রাখা হয়েছিল, যার অর্থ এই সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ (EIA) এবং একটি পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (EMP-Environmental Management Plan) প্রস্তুত করার জন্য সমস্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের জন্য একটি আইনি বাধ্যবাধকতা ছিল। উপরন্তু কমলা শ্রেণীর শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (EMP) বাধ্যবাধকতা ছিল কিন্তু নতুন পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-২০২৩ এ তার অনুপস্থিত। ফলে কমলা শ্রেণীর বিদ্যুৎ প্লান্ট তাদের কার্যক্রমে দূষণ ব্যবস্থাপনার বাধ্যবাধকতা থেকে ছাড় পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ঢাকাসহ সমগ্র্য বাংলাদেশে যে তাপদাহ চলছে তার জন্য বায়ুদূষণও দায়ী বলে তিনি মনে করেন।