Home জাতীয় ‘বাণিজ্যের’ স্বার্থে মিলেমিশে আ.লীগ-বিএনপির নেতারা

‘বাণিজ্যের’ স্বার্থে মিলেমিশে আ.লীগ-বিএনপির নেতারা

27

মাসে ভাড়া আদায় হয় প্রায় ১৫ লাখ টাকা।

আবাসিকে দোকান ভাড়া দেওয়ার সুযোগ নেই, বলছে রাজউক।

ডেস্ক রিপোর্ট: রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) থেকে একটি আবাসিক প্লট বরাদ্দ পেয়েছিলেন বিএনপির জেলা পর্যায়ের এক নেতা। ওই প্লটে অবৈধ মার্কেট বানিয়ে ব্যবসা করছেন আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের দুই নেতা। প্লটমালিকের যোগসাজশে আবাসিক প্লটে দোকান বানিয়ে তাঁরা ভাড়া দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্লটের সামনের ফুটপাত ও সড়কও দখল করে নিয়েছেন তাঁরা।

প্রতিদ্বন্দ্বী দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা এভাবেই মিলেমিশে রাজউকের নীতিমালা লঙ্ঘন করে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় আবাসিক প্লটে দোকান বানিয়েছেন। সোনারগাঁও জনপথ সড়কের পাশে (আধুনিক মেডিকেল কলেজের বিপরীতে) উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের ৩১ নম্বর প্লটে অবৈধভাবে দোকান করা হয়েছে। প্লটের মালিক নরসিংদী জেলা বিএনপির সহসভাপতি জামাল আহম্মেদ চৌধুরী। মার্কেট দেখাশোনা করছেন উত্তরা ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাইদুর রহমান ওরফে রাসেল এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা সাহাব উদ্দিন।
রাজউকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্লটটি আবাসিক। এটি বাণিজ্যিকে রূপান্তরও করা হয়নি। আবার প্লটে ভবন নির্মাণ না করে অস্থায়ী মার্কেট বানিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই। এ কারণে কয়েক বছর আগে ওই প্লটের অবৈধ মার্কেট ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছিল।
সরেজমিনে দেখা যায়, টিনের বেড়া দিয়ে প্লটটি ঘিরে রাখা হয়েছে। টিনে ঝোলানো একটি নোটিশ রয়েছে যাতে প্লটের টিনশেডসহ অস্থায়ী স্থাপনা ভাঙার বিরুদ্ধে আদালতে একটি রিট করার কথা উল্লেখ রয়েছে। প্লটে সারি সারি মোট ৫৫টি দোকান। বাইরের ফুটপাত দখল করে (পশ্চিম ও উত্তর পাশে) বসানো হয়েছে আরও ১০টি দোকান। দখল করা হয়েছে ২৭ নম্বর সড়কের জায়গাও।
ব্যবসায়ীরা জানান, দোকান থেকে ভাড়া আদায় করেন মাহবুব তালুকদার (ভান্ডারি)। পরে মো. শাহজাহান নামের এক ব্যক্তিকে টাকা বুঝিয়ে দেন। তিনি মার্কেটের ম্যানেজার হিসেবে পরিচিত।

ব্যবসায়ীরা বলেন, দোকান ভাড়া নিতে অগ্রিম কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা দিতে হয়। প্লটের ভেতরে প্রতি দোকানে দিনে ৮০০ টাকা এবং ফুটপাত ও সড়কে ৪০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। সব মিলিয়ে মাসে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়। ভাড়ার কোনো রসিদ নেই, শুধু একটি খাতায় লিখে রাখা হয়।
আবাসিক প্লটে এমন বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে জানতে চাইলে প্লটমালিক জামাল আহম্মেদ দাবি করেন, ‘প্লটটি বাণিজ্যিকে রূপান্তর করানো হয়েছে। ১৪ তলা ভবন নির্মাণের নকশাও অনুমোদন করা আছে।’
একপর্যায়ে প্লটমালিক উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘আমাকে কেন প্রশ্ন করেন, হোয়াই? অলরেডি নেওয়া হয়েছে, বললাম না? দু-তিন বছর আগেই অনুমোদন নেওয়া।’ তাহলে আদালতে রিট কেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘রাজউক একবার তিন-চার বছর আগে ভেঙেছিল। আবার যাতে না ভাঙে, সে জন্য রিট করেছি।’
আওয়ামী লীগের দুই নেতার মাধ্যমে মার্কেট পরিচালনার বিষয়ে জামাল বলেন, ‘রাসেল (সাইদুর রহমান) এবং মাসুদ রানা ছোট ভাই। তারাই মার্কেট চালায়। ওরা আমার গ্রামেরই।’
তবে সাইদুর রহমান বলেন, ‘মার্কেটের সঙ্গে একসময় ছিলাম। এখন আমি যাই না। অনেক আগে এটি আমরা করেছিলাম।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবৈধ হলে রাজউক ভেঙে দিক।
মার্কেট পরিচালনায় এখন আর যুক্ত নন বলে দাবি করেন আরেক নেতা মাসুদ রানা। তিনি বলেন, ‘মার্কেট মালিক নিজেই পরিচালনা করেন। আমরা ছিলাম। মেয়াদ শেষ, তাই আমরা চলে আসছি।’
প্লটমালিকের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা ও তাঁর বক্তব্য সম্পর্কে জানানো হলে মাসুদ রানা বলেন, ‘আমি তাঁর ছোট ভাই। কোনো প্রয়োজন হলে তিনি বললে আমি যাই।’
প্লটটির বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজউকের এস্টেট ও ভূমি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, প্লটটি আবাসিক হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এটিকে বাণিজ্যিকে রূপান্তর করা হয়নি। আবাসিক প্লটে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালানোর কোনো সুযোগ নেই। এটা অবৈধ।
প্রথমআলো