কাল মঙ্গলবার ভারতের সঙ্গে রুপিতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য কার্যক্রম উদ্বোধন হবে। দুই দেশের দুটি করে চারটি ব্যাংকের মাধ্যমে হবে এ লেনদেন।

ডেস্ক রিপোর্ট: ভারতীয় মুদ্রা রুপিতে বাণিজ্য করার যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য শুরু হচ্ছে মার্কিন ডলারের পাশাপাশি রুপিতে। আপাতত রুপিতে শুরু হলেও উভয় দেশের বাণিজ্য ব্যবধান কমে এলে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকায়ও হবে এ বাণিজ্য।খবর প্রথমআলো

আগামীকাল মঙ্গলবার ঢাকার লা মেরিডিয়ান হোটেলে ভারতের সঙ্গে রুপিতে দ্বিপক্ষীয় লেনদেন কার্যক্রমের উদ্বোধন হবে। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক বাংলাদেশ ব্যাংক ও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশন। বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক ও ইস্টার্ণ ব্যাংক এবং ভারতের স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও আইসিআইসিআই ব্যাংক উভয় দেশের মধ্যে রুপিতে বাণিজ্য করার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাংক।

সূত্র জানায়, চার কারণে রুপিতে বাণিজ্য করার বিষয়টি সামনে এনেছে দুই দেশ। প্রথমত, ডলার-সংকটে রয়েছে উভয় দেশ। ফলে উভয় দেশ এতে লাভবান হবে। দ্বিতীয়ত, আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকদের দুবার মুদ্রা বিনিময় করার খরচ কমবে। তৃতীয়ত, লেনদেন নিষ্পত্তিতে সময় বাঁচবে। চতুর্থত, অন্য উদ্বৃত্ত মুদ্রা রুপিতে রূপান্তর করে লেনদেন নিষ্পত্তিতে ব্যবহার করা যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, টাকা ও রুপিতে উভয় দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য করার আলাপ চলছে প্রায় এক দশক ধরে। ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করায় সম্প্রতি তা আলোর মুখ দেখেছে। কাজটি বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশের দুই ব্যাংক ভারতের দুই ব্যাংকে নস্ট্র হিসাব খুলেছে। এক দেশের এক ব্যাংক অন্য দেশের কোনো ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেনের উদ্দেশ্যে হিসাব খুললে সে হিসাবকে নস্ট্র হিসাব বলা হয়ে থাকে।

ইস্টার্ণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী রেজা ইফতেখার সম্প্রতি এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘আপাতত ভারতীয় রুপিতে বাণিজ্য হবে। পরে বাংলাদেশি টাকার বিষয়টিও আসবে বলে আমরা আশা করছি।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট ৮ হাজার ৯১৬ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৬৯ কোটি ডলারের পণ্যই আমদানি হয় ভারত থেকে। একই অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে রপ্তানি করে ১৯৯ কোটি ডলারের পণ্য। আমদানি-রপ্তানি মিলিয়ে উভয় দেশের মধ্যে ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয় ওই অর্থবছরে। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরেও একই প্রবণতা দেখা গেছে।

আমদানিকারকেরা বলছেন, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রুপিকে মর্যাদাপূর্ণ মুদ্রায় রূপান্তর করতে ভারত বহু বছর ধরেই চেষ্টা করছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরবিআই গত বছরের জুলাইয়ে এ জন্য একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এমনকি দেশটির বাণিজ্য সংগঠন ও ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দিতে থাকে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়, তারা যাতে ভারতীয় মুদ্রায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য শুরু করে।

দেশের ব্যবসায়ীরা স্বাগত জানিয়েছেন এমন উদ্যোগকে। ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি তাসকিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘রুপিতে লেনদেন শুরু হলে অন্তত ২০০ কোটি ডলার বাঁচবে। সরকার তৃতীয় কোনো দেশ থেকে রুপি আনতে পারলে আরও ডলার সাশ্রয় সম্ভব। বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত আছে। সেসব দেশে রপ্তানির অর্থের কিছু অংশ রুপিতে আনার সুযোগ আছে।’

বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে ভারতের দিল্লিতে গত বছরের ডিসেম্বরে যখন দুই দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয়। তখন ভারতের পক্ষ থেকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের মাধ্যম ভারতীয় মুদ্রা রুপি ব্যবহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেওয়ার কথা ওই বৈঠকেই জানিয়ে দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। টিপু মুনশি দেশে ফিরে এসে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে জানালে সবাই একমত হয় এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা বাস্তব রূপ লাভ করে।

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শও দেন। কারণ, বৈশ্বিক মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃত মুদ্রা নয় ভারতীয় রুপি। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উদ্যোগটি আপাতত ইতিবাচক। রুপিতে বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে ঝুঁকির বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে।

অন্যতম ঝুঁকি হচ্ছে বিনিময় হার। এটা নির্ধারিত হতে হবে। আর বাংলাদেশি মুদ্রা টাকা বর্তমানে অবমূল্যায়িত। ভবিষ্যতে শক্তিশালীও হতে পারে। তখন যেন ভারতীয় মুদ্রার সঙ্গে বিনিময় হারের প্রতিফলন থাকে। আর শুধু বাণিজ্য নয়, বিনিয়োগ এবং ঋণেও রুপিতে লেনদেনের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন মোস্তাফিজুর রহমান।