Home প্রচ্ছদ বরিশাল আওয়ামী রাজনীতির গতি প্রকৃতি কোন পথে হাঁটছে?

বরিশাল আওয়ামী রাজনীতির গতি প্রকৃতি কোন পথে হাঁটছে?

467

বরিশাল থেকে আহমেদ জালাল : বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলার ঘটনায় দেশজুড়ে মানুষের মাঝে নানা আলোচনা-সমালোচনায় রূপ নিচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এ ঘটনায় রীতিমতো বিরক্ত, পড়েছেন চরম অস্বস্তিতে। এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছেন। হামলার বিষয়ে হার্ডলাইন অবস্থান করছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
পরিস্থিতি এমন যে, সিভিল প্রশাসন এবং বরিশাল আওয়ামী লীগ বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছেন। হামলার ঘটনায় পুলিশ ও ইউএনও’র দায়েরকৃত মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। ওই মামলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই ডজন নেতা–কর্মীর নামও রয়েছে। দু‌টি মামলায় ৩০-৪০ জ‌নের ম‌তো নামধারী এবং ক‌য়েকশত অজ্ঞাত আসামি র‌য়ে‌ছে। বহুল আলোচনা-সমালোচনায় ঘটনাটি শেষ পর্যন্ত কোন দিকে মোড় নিচ্ছে? রাজনৈতিক অঙ্গনে এরকম প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
একাধিক সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল জাহিদ ফারুক শামিম (এমপি)’র সঙ্গে সিটি মেয়র সেনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর রাজনৈতিক-মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব চলছিল। তৎকালীন বরিশাল ছাত্রলীগ সভাপতি জসিম উদ্দিনের বাড়ি বুলডেজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়ায় ক্ষোভ জন্মে আ’লীগের একাংশের মাঝে। বিগত সময়ে জসিম প্রয়াত মেয়র এ্যাড. শওকত হোসেন হিরণপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। হিরণের অকাল মৃত্যুর পর পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামিম (এমপি)’র সঙ্গে সময় দিচ্ছিল। ছাত্রলীগ নেতা জসিম উদ্দিন তখন গণমাধ্যমে বলেছিলেন, হিরণের অকাল মৃত্যুর পর পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামিম (এমপি)’র সঙ্গে থেকে রাজনীতি করার কারণে ইর্শ্বান্বিত হয়ে সিটি মেয়র অবৈধভাবে আমার বাড়ি বুলডেজার দিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে। পরে বুলডেজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া বাড়ি পরিদর্শনও করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামিম (এমপি)। এরকম নানা ইস্যুতে প্রতিমন্ত্রী ও মেয়রের মধ্যে মনস্তাতিক দ্বন্ধ বিরাজমান। সাম্প্রতিক সময়ে সিটি করপোরেশনের ৬ কাউন্সিলর প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া অনুদানের চাল দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হন মেয়র। পরে ছয় কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে বিসিসির কর্মচারীদের তুলে আনা হয়। সূত্রের দাবী, ওই দ্বন্দ্বের জের ধরেই ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়তে যান সিটি করপোরেশনের লোকজন ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ওই দ্বন্দ্বের জের ধরে বুধবার রাতে বিসিসি কর্মী এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী প্রতিমন্ত্রীর ছবি সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করতে গেলে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে সত্যতা নিশ্চিত করেন বিসিসির ২৩ ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরীফ মো: আনিচুর রহমান, ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিসুর রহমান দুলাল এবং ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব। বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলার নেপথ্যে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ নানা শ্রেনী পেশার মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে জল্পনা-কল্পনা চলছে। রাজনৈতিক মদদদাতাদের কোন যোগসূত্র রয়েছে কিনা এ নিয়ে জনমনে বিভিন্ন প্রশ্ন ধুমায়িত হচ্ছে। অভিজ্ঞমহল বলছেন, কোন সন্ত্রাসী নিজের পেশীশক্তির বলে কাজ করে না। তাদের পিছনে মদদদাতা ও আশির্বাদ থাকে। কেননা, এর সাথে অর্থের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, অর্থ প্রাপ্তির বিষয় রয়েছে।
হামলার ঘটনার পর বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) রাতে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এক বৈঠক শেষে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাঁরা বলেছেন, ‘আইনের মাধ্যমেই দুর্বৃত্তদের মোকাবিলা করা হবে এবং আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।’ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বরিশাল বিভাগ মেয়রের অত্যাচারে অতিষ্ঠ বলে অভিযোগ করে তাঁর গ্রেপ্তার দাবিও জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও তাঁর দুর্বৃত্ত বাহিনী সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের দিয়ে নানা প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে ও বরিশাল ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে।’
অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এই বক্তব্য নিয়ে আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাদের (সাদিক আব্দুল্লাহ অনুসারী) মধ্যে নানান আলোচনা চলছে। দলটির নেতাদের প্রশ্ন, সিভিল প্রশাসন একজন নির্বাচিত মেয়রকে এভাবে বলতে পারেন কি না?
এখানকার আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, প্রশাসনের এই অবস্থান একটি নির্দিস্ট এলাকা ও নির্দিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে। একে পুরো দলের ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান বলে ধরে নেওয়া ঠিক নয়। তাঁরা মনে করেন, বরিশালের ঘটনার সমাধান আরও ভালোভাবে করা যেত। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় প্রশাসন এবং মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ পরিস্থিতি ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। এরফলে এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এক সচিব বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তা–কর্মচারী মাঠপর্যায়ে কাজ করেন। তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে দায়িত্ব পালনে সমস্যা হয়। মূলত: এ কারণেই অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এমন প্রতিক্রিয়া। এই সচিব মনে করেন, কোথাও কোথাও সরকারি দলের কর্মীরা কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন। মাঠ প্রশাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যান। এ অবস্থায় প্রশাসন চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। যে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে, সেখানে এটাই বলতে চাওয়া হয়েছে যে যার যার কাজ তাকে করতে দিতে হবে। কর্মকর্তা–কর্মচারীদের নিরাপত্তায় কারও বাধা মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই।
ঘটনার পর সরকারের মন্ত্রীরা এ ঘটনা নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
শুক্রবার (২১ আগস্ট) এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বরিশালের ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছেন। অনেকেই গ্রেপ্তারও হয়েছে। এরআগে বিষয়টি কতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে, তা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কথায় উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, তিনি পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না, নিজ দলেরও নেতাকর্মী হলেও ছাড় দেওয়া হবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, বরিশালের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবস্থা নেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, গণমাধ্যমে খবর দেখে এ নিয়ে এখনই মন্তব্য করার কিছু নেই। তা ছাড়া বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাও তিনি নন। হানিফ বলেন, কোনো সমস্যা হলে চিন্তা করে দল ও সরকার যেটা করণীয়, সেটা করবে।
বরিশাল বিভাগের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট সবাই যদি ঠান্ডা মাথায় বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করতেন, তবে ঘটনা এত দূর গড়াত না। এখন আমরা চাই, এ ঘটনার একটি সুষ্ঠু তদন্ত হোক।’
আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা জানেন। শিগগিরই এর একটা সমাধান হয়ে যাবে। এই নেতা মনে করেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। এখন যদি দলের সঙ্গে সরকারি কর্মচারীদের দ্বন্দ্ব থাকে, সেটা কারোর জন্যই ভালো নয়। বিশেষ করে সাধারণ মানুষ এই দায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ, তথা আওয়ামী লীগকেই দেবে। তবে তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে মন্ত্রীরা ব্যবস্থা নেওয়া কথা বলেছেন। অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
মামলার তদন্তের বিষয়ে উপ-পুলিশ কমিশনার আলী আশরাফ ভূঁইয়া বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে যাকে প্রয়োজন তাকেই গ্রেফতার করা হবে। তবে নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করবে না পুলিশ। গুরুত্ব সহকারে মামলা দুটির তদন্ত চলছে। এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেফতারে অভিযান চলছে। ইউএনও মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি মামলা করা হয়। দুই মামলায় সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
থানা সূত্র জানায়, নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালানা করে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। আটকদের মধ্যে রয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহামুদ বাবু ও রুপাতলী বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আহ‌ম্মেদ শাহা‌রিয়ার বাবু, ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন ফিরোজ, ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অলিউল্লাহ অলি, ৬ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। দায়েরকৃত মামলায় এদেরকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। উপ‌জেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মামলায় তার বাসায় হামলা ও ভাঙচু‌রের অভি‌যোগ আনা হ‌য়ে‌ছে। আর পু‌লি‌শের দা‌য়ের করা মামলায় সরকা‌রি কা‌জে বাধা, পু‌লি‌শের ওপর আক্রমণ ও ভাঙচুরের অভিযোগ আনা হ‌য়ে‌ছে। ওসি আ‌রও জানান, দু‌টি মামলায় ৩০-৪০ জ‌নের ম‌তো নামধারী এবং ক‌য়েকশত অজ্ঞাত আসামি র‌য়ে‌ছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় নগরীতে ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন ও অতিরিক্ত ১০ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সভায় উপস্থিত জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার বলেছিলেন, ঘটনা পর্যালোচনা এবং করণীয় নির্ধারণে বিভাগীয় কমিশনারের সরকারি বাসভবনে জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) বেলা পৌ‌নে ১২টার দি‌কে নগ‌রীর কা‌লিবা‌ড়ি রোডস্থ মেয়‌রের বাসভবন হঠাৎ ক‌রেই ঘি‌রে ফে‌লেন র‌্যাব ও পু‌লি‌শের সদস্যরা। এ সময় সেখা‌নে জেলা প্রশাস‌নের নির্বাহী ম্যাজি‌স্ট্রেট উপ‌স্থিত ছি‌লেন। মেয়‌রের বাসার ভেত‌রে নেতাকর্মীরা যে‌তে চাইলে তা‌তেও পু‌লিশ বাধা দেয়। ত‌বে কিছুক্ষণ পর সেখান থে‌কে আইন-শৃঙ্খলা বা‌হিনীর সদস্যরা চ‌লে যান। এ বিষয়ে পুলিশের ভাষ্য, আমা‌দের কা‌ছে তথ্য ছি‌ল রা‌তের ঘটনায় যারা জ‌ড়িত ছি‌লেন তাদের কেউ কেউ ওখা‌নে অবস্থান কর‌ছেন। সেজন্য সেখানে যাওয়া, ত‌বে সেখা‌নে গি‌য়ে সেরকম কাউকে পাওয়া যায়‌নি এবং কাউকে সেখান থে‌কে আটকও করা হয়‌নি।

প্রসঙ্গত, বুধবার (১৮ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২০ থেকে ২৫ জন কর্মচারী নগরীর সিঅ্যান্ডবি রোডে উপজেলা পরিষদ এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতার শুভেচ্ছা সংবলিত ব্যানার অপসারণের কাজ শুরু করেন। ওইসময়ে ইউএনওর কার্যালয় ও সরকারি বাসভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা তাঁদের পরিচয় জানতে চান। পরে তাঁরা সকালে এসে কাজ করার জন্য বলেন। এ সময় সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এনিয়ে ইউএনও’র সাথে আ’লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বাকবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে উত্তেজিত ছাত্র-যুব ও আ’লীগ নেতাকর্মীরা ইউএনও’র বাসভবনে প্রবেশ করে তাকে গালিগালাজসহ দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। আওয়ামী লীগের নেতা হাসান আহেমদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের জেলা কমিটির সহসভাপতি আতিকুল্লাহ খান, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব খান, সাজ্জাদ সেরনিয়াবাতসহ শতাধিক নেতা-কর্মী সেখানে যান। পরে সেখানে আনসার সদস্যদের সঙ্গে তাঁদের কথা-কাটাকাটি হয়। এ সময় নেতা-কর্মীরা ইউএনওর বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। ইউএনওর বাসভবনে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলা চালায়। আনসার সদস্যরা ধাওয়া করে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহামুদ বাবুকে আটক করেন। এরপর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আনসার সদস্যদের স‌ঙ্গে আওয়ামী লী‌গ-ছাত্রলীগ সদস্য‌দের সংঘর্ষে সদর উপজেলা প্রাঙ্গণ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আনসার সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে গুলি ছুড়ে। এতে গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। ইউএনও’র বাসভবনে হামলার ঘটনায় ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
খবর পেয়ে সিটি মেয়র সেখানে ছুটে গেলে ছাত্র-যুব ও আ’লীগ নেতাকর্মীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের মূলফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে আনসার সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে গুলি ছোড়ে।
বাসভবনে হামলার প্রসঙ্গে ইউএনও মুনিবুর রহমান জানান, উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণের ভেতরে বিভিন্ন স্থানে শোক দিবস উপলক্ষে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামিম (এমপি)’র ব্যানার-পোস্টার লাগানো ছিল। রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসব ছিঁড়তে আসে। রাতে লোকজন ঘুমাচ্ছে জানিয়ে তিনি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বৃহস্পতিবার সকালে এগুলো ছিঁড়তে বলেন। এরপর তারা তাকে গালিগালাজ করতে থাকে। একপর্যায়ে তারা ইউএনওর বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। রাতে দুই দফায় তারা হামলা চালায় বলে জানান ইউএনও মুনিবুর রহমান।
ইউএনওর বাসভবনে দায়িত্বরত আনসার কমান্ডার আম্মাম হোসেন বলেন, ইউএনওর বাসভবনের পাশে শোক দিবস উপলক্ষে লাগানো পোস্টার-ব্যানার অপসারণ করতে আসেন সিটি করপোরেশনের লোকজন। এতে বাঁধা দেন ইউএনও। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশনের লোকজন চলে যান। কিছুক্ষণ পর সিটি করপোরেশনের লোকজনকে নিয়ে পোস্টার-ব্যানার সরাতে আসেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তখন ইউএনও রাতে পোস্টার-ব্যানার সরাতে নিষেধ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ইউএনওকে অবরুদ্ধ করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে গুলি চালানোর অনুমতি দেন ইউএনও। গুলি চালানোর সঙ্গে সঙ্গে তারা পাল্টা হামলা চালান। তখন দুই পক্ষের সংঘর্ষ লাগে। এতে ওসি ও প্যানেল মেয়রসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষ হয়।
হামলার ঘটনার পর বুধবার দিনগত গভীর রাতে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান-বিপিএম বার, বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান, বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার, বরিশাল র‍্যাব-৮ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি জামিল হাসানসহ একাধিক কর্মকর্তারা ইউএনও’র বাসায় যান।
বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিকুল্লাহ মুনিম ও সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত দাবি ক‌রে‌ছেন, সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহসহ অন্তত ৩০ জন আহত হ‌য়ে‌ছেন। তি‌নি ব‌লেন, সংঘর্ষ থামাতে আনসার সদস্যরা গুলি চালালে মেয়রসহ ৩০ জন আহত হন।
বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এনামুল হক বলেন, ইউএনও জানিয়েছেন তাঁর বাসভবন এলাকায় ব্যানার-পোস্টার খুলতে আসে কিছু লোকজন। সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় রাতে ব্যানার খুলতে নিষেধ করেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। এমনকি নিষেধ অমান্য করে ইউএনওর বাসভবনে প্রবেশ করতে চাইলে আনসার বাহিনী গুলি চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। সে সময় ইউএনওর বাসভবনের দিকে কিছু লোক এগিয়ে গেলে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। সংঘর্ষে একাধিক পুলিশ আহত হয়। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এরামুল হক বলেন, ইউএনওর অফিস ও বাসভবন সংরক্ষিত এলাকা। এ এলাকায় বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করা আইনত অপরাধ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যা করণীয় সেটাই করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেদিকে সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) বিকেল ৪টায় নগরের কালীবাড়ি রোডের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর বাসভবন সেরনিয়াবাত ভবনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মেয়র অংশগ্রহন করেননি। তবে তিনি বাড়িতেই ছিলেন। বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলা, পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ ও পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, শোকের মাসে পরিকল্পিতভাবে একটি শহরকে অশান্ত করতে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ইউএনওর বাসায় কেউ হামলা করেনি। এটি পরিকল্পিত ঘটনা। এর বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া দরকার। সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য পড়েন বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের দৈনন্দিন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শোক দিবসে নগরে যেসব ব্যানার, বিলবোর্ড, লাগানো হয়েছিল, সেগুলো অপসারণ করতে যান। রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁরা উপজেলা কমপ্লেক্সের ভেতরে ব্যানার অপসারণের কাজ শুরু করেন। এ সময় ইউএনও তাঁর বাসভবন থেকে নিজে বের হয়ে কর্মীদের বাধা দেন। পরে কর্মচারীরা ব্যানার অপসারণের বিষয়টি তাঁকে জানালে ইউএনও তাঁদের বলেন, ‘আমার কম্পাউন্ডে কোনো মেয়রগিরি চলবে না, তোমরা চলে যাও।’ পরে সেখানে থাকা কর্মচারীরা বিষয়টি মেয়রকে জানান। এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ ওরফে বাবু, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জিয়াউর রহমান ঘটনাস্থলে যান। ইউএনও তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন ও হাসান মাহমুদকে নিজের বাসভবনে আটকে রাখেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে বাসভবনে নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যদের গুলি করার নির্দেশ দেন ইউএনও। আনসার সদস্যরা নিবৃত্ত থাকলেও ইউএনও আনসার সদস্যদের হাত থেকে অস্ত্র নিজে নিয়েই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর গুলি ছোড়েন। এ সময় সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসসহ ছয়-সাতজন গুলিবিদ্ধ হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহম্মেদকে নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় মেয়রের উদ্দেশেও গুলি ছোড়া হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। পরে শত শত নেতা-কর্মী মেয়রকে উদ্ধার করে নিরাপদে বাসায় পাঠান। সেই সময় গুলিবিদ্ধ হন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জিয়াউর রহমান, ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. মনির। পরে ইউএনওর বাসভবনে আটক মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদের মুক্তির জন্য উপজেলা কমপ্লেক্সের সামনে সিঅ্যান্ডবি রোডে কয়েক শ নেতা-কর্মীরা উপস্থিত হন। সে সময় আবার গুলিবর্ষণ করা হয়। এতে বরিশাল আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলাম, কর্মচারী মানিকসহ সাত-আটজন গুলিবিদ্ধ হন। পরে হাজারো নেতা-কর্মী ও জনতা সিঅ্যান্ডবি রোডে অবস্থান নিয়ে ইউএনওর অপসারণ দাবি করে স্লোগান দিতে থাকলে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের দাঙ্গা বাহিনী সেখানে উপস্থিত হয়ে লাঠিপেটা, দলীয় নেতা-কর্মীদের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এ সময় আহত নেতা–কর্মীরা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানেও তাণ্ডব চালায় পুলিশ। গাজী নঈমুল হোসেন দাবি করেন, এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুসারে তাঁদের ৬০ জন নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এবং ৫০ জনের বেশি পুলিশের লাঠির আঘাতে আহত হয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, ‘একটি শান্ত শহরকে অশান্ত করতে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ইউএনওর বাসায় কেউ হামলা করেনি। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। আমরা মনে করি, শোকের মাসে এটি একটি মানবতাবিরোধী কাজ। আমরা এর বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি।’
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার, গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তি ও আহত নেতা-কর্মীদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানান।
এরআগে বুধবার দিনগত রাত ৩টার দিকে নগরের কালিবাড়ি রোডস্থ সেরনিয়াবাত ভবনে থানা কাউন্সিলের ঘটনার বিবরণ শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেছেন, যে কাজ করতে গিয়ে আজকের এ ঘটনা, ওই কাজটি আমাদের রেগুলার কাজ। এরআগে সংবাদ সম্মেলনে আমি ব্যানার নিয়ে স্টেটমেন্ট দিয়েছি, পুরোনো ব্যানার বা ভূইফোর সংগঠনের ব্যানারগুলো সরিয়ে ফেলতে। এতে শহর পরিষ্কার হবে। আর আপনারা জানেন মনে হয়, আমার নিজের করা ব্যানারটিও আমি খুলে ফেলেছি। আর সেই ধারাবাহিকতায় পরিষ্কার করতে করতে তারা থানা কাউন্সিলে গিয়েছে। আপনার দেখেছেন থানা কাউন্সিলের ভেতরে বিভিন্ন লোকজন, বিভিন্ন ব্যানার দেয়। আর যেখানে সিটি করপোরেশনের লোকজন কাজ করছিলো সেটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এর বাসা না। ওখানে পুকুর আছে, যেখানে সাধারণ মানুষ গোসল করে, ওখানে মসজিদ আছে, ওখানে আরো অনেক অফিস আছে, ওখান থেকে পেছনে বসবাসকারী মানুষদের যাতায়াতের রাস্তাও রয়েছে। সিটি করপোরেশনের কর্মীরা আমাকে যেটা জানিয়েছেন, ওখানে কাজ প্রায় শেষের পথে ছিলো, পরিষ্কার করে চলে আসবে তখন ইউএনও সাহেব বের হয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের বলেছে কার কাছে জিজ্ঞাসা করে সেখানে তারা গিয়েছে। কর্মীরা বলেছে, তাদের গালাগালি করা হয়েছে। আর এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ওনার বাসায় হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু ওনার বাসার গেটের ভেতরে কি তারা ঢুকেছে। ওখানে আমাদের ১ নম্বর যুগ্ম সম্পাদক ছিলো, তারপর প্রচার সম্পাদকের সঙ্গে সিনিয়রদের পাঠালাম সেখানে কি হয়েছে দেখার জন্য। তিনি বলেন, যখন তারা আমাকে বললো যে গুলি হচ্ছে, তখন আমার বাসায় আমি, আমাদের সিটি করপোরেশনের সিও, মহানগর আওয়ামী লীগের অনেক নেতারা উপস্থিত ছিলো। আমি তাৎক্ষণিক একাই ঘটনাস্থলে চলে গেলাম। সিও সাহেবও পেছনে পেছনে রওনা দিলেন। আমি যখন ঘটনাস্থলে গিয়ে হেলমেট খুলে কর্মীদের বললাম তোমরা গেটের বাইরেই দাঁড়াও কেউ ভেতরে যেও না। এরপর একা থানা কাউন্সিলের গেট দিয়ে যখন ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করলাম এবং বললাম আমি বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র। তারা সে কথা শুনে অনবরত গুলি করা শুরু করলো। এরমধ্যে পেছনে যে নেতা-কর্মীরা ছিলো তারা সকলে এসে মানবপ্রাচীর বানিয়ে আমাকে বাহিরে নিয়ে আসলো। তারপর ওখানে থেকে আমার খুবই খারাপ লাগছে, খুবই লজ্জা লাগছে। তাই আমি ওখান থেকে চলে আসছি। চলে আসার পরে শুনলাম আবারো গুলি হয়েছে। আমাদের প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটুকে রেখে আসছিলাম যাতে ওখানে অপ্রতিকর কিছু না ঘটে। তিনি বলেন, আমি গুলিবিদ্ধ হয়নি, তবে আমাকে গুলি করা হয়েছে, আর সেগুলো আমার জ্যাকেটের কারণে শরীরের ভেতরে লাগেনি কিন্তু গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছি। আর গুলির সময় নেতা-কর্মীরা সামনে চলে আসায় তাদের গায়েই গুলিগুলো লেগেছে। কতজনের গায়ে লেগেছে তা আমি হিসেব করে বলতে পারবো না। কতজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন সে বিষয়েও এখন কিছু বলতে পারবো না। ব্যানারকে কেন্দ্র করে এমন ঘটনা ঘটতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কি বলবো বলেন, গুলি করা হয়েছে ওখানে। মেয়রের গায়েও পর্যন্ত গুলি করা হয়েছে। মেয়র বলেন, আমি ওখানে যাওয়ার পরে পুলিশ কমিশনার সাহেব, র‌্যাবের সিও, আনসাররা গুলি করায় আনসারদের প্রধানকেও ফোন করেছি। কিন্তু আমি চলে আসার পরে পুলিশ বের হয়ে আসার পরও আবারো নাকি গুলি হয়েছে। মহানগর আওয়ামী লীগের এক নম্বর যুগ্ম সম্পাদককে যেহেতু আটকে রাখা হয়েছে, তাই হয়তো প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু আলোচনার জন্য ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাকে গুলি করা হয়েছে, ৩৫-৩৭টি শটগানের গুলির পিলেট তার গায়েও লেগেছে। আমাদের সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস ব্যানার উচ্ছেদের সময় থেকেই ওখানে ছিলো। তার গায়েও গুলি লাগছে। তিনি বলেন, ঘটনার অবশ্যই জোড়ালো তদন্ত চাইব এবং অবশ্যই আমরা আইনের আশ্রয় নেবো। মেয়র হিসেবে এভাবে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব না। আমি মেয়র হিসেবে তাহলে ব্যর্থ। প্রধানমন্ত্রী আমাকে শপথ পরিয়েছেন, আমার বাবা আছেন তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। যদি আমার অপরাধ হয়ে থাকে, আমি আমার রেজিগনেশন লেটার দিয়ে দেবো। মেয়র বলেন, আপনার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়ে থাকলে আমাকে বলতে পারতেন। বরিশালে এতো বছরে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, যে এইভাবে আমাদের গুলি করা লাগবে। আবার শুনলাম যারা আহত হয়েছে তাদের গ্রেফতার করার জন্য মেডিক্যালে গেছে। তাহলে ঠিক আছে, অপরাধ হয়ে থাকলে তাদের হয়নি, আমি মেয়র মাথা পেতে নিলাম আমি রেজিগনেশন লেটার প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিয়ে দেবো।
সবমিলিয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক (এমপি)’র সঙ্গে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর দ্বন্দ্বের জেরেই কী এহেন ঘটনার জন্ম নিয়েছে? ইউএনও’র বাসায় সাদিক আব্দুল্লাহ’র অনুসারীরা কেন-ই-বা হামলা করবে? নাকি এর মধ্যে অন্য কোন রহস্য লুকায়িত আছে? যদিও এক সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ইউএনও’র বাসায় কেউ হামলা করেনি। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার (২১ আগস্ট) বিকেলে জেলা ও মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগ। নগরীর সোহেল চত্বরে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমবেশে মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর নিগার সুলতানা হনুফা বলেন, ‘ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ইউএনও আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালিয়েছে। অথচ ইউএনও এর বিচার না করে উল্টো মামলা হয়েছে মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বরিশাল আওয়ামী রাজনীতির গতি প্রকৃতি কোন পথে হাঁটছে? রাজনীতির গতি-প্রকৃতি বোঝা খুব কঠিন। আর রাজনৈতিক চর্চার মধ্য দিয়েই দেশ এবং ব্যক্তির ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। সময়ের প্রয়োজনে কোনো রাজনীতির গতিপথ বদলে যায়। রাজনীতির পথ বদলে যাওয়ার পাশাপাশি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন ঘটে।