Home জাতীয় বরিশালে ওষুধ ব্যবসায়ীকে যেভাবে ফাঁসালেন ডিবি পুলিশ!

বরিশালে ওষুধ ব্যবসায়ীকে যেভাবে ফাঁসালেন ডিবি পুলিশ!

142

আহমেদ জালাল : দাবিকৃত চাঁদার টাকা না পেয়ে বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ এলাকার সাখাওয়াত হোসেন জীবন নামে এক ওষুধ ব্যবসায়ীকে মিথ্যা মাদক মামলায় ফাঁসিয়েছে ডিবি পুলিশের একটি টিম। প্রথম দফায় বরিশাল মহানগর গোয়েন্দা শাখার এস আই মসরুদ উদ্দিন আহমেদ (বিপি-৮৪১৩১৫৪১১১) পলিথিনের ব্যাগে করে মাদক অধিদপ্তরের তফছিল ভুক্ত ঘুমের ঔষধ ইজিয়াম ও ব্যাথার নেলবান ইঞ্জেকশন নিয়ে ওই ওষুধের দোকানে ঢুকে ব্যবসায়ীকে ভয়ভীতি দেখান। দ্বিতীয় দফায় সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে তল্লাশীর নামে ক্যাশ বাক্স থেকে ১৬/১৭ হাজার টাকা গায়েব করেন। সে সময় টিম ইনচার্জ এস আই হাবিবুর রহমানও যুক্ত হন। পরক্ষণে ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া এই ব্যবসায়ীকে আবার ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে ডিবি এসপির বরাদ দিয়ে অভিযান টিমের সাথে থাকা এ এস আই ইছাহাক অর্ধলাখ টাকা ঘুষ গ্রহন করেও আসামি ছাড়েনি। তাদের অপকর্মের ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ার শংকায় সোহেল সরদার নামে কথিত এক ক্রেতা বা সোর্সকেও এই মাদক মামলায় ২নং আসামি করা হয়েছে। কিন্তু ঔষধ ব্যবসায়ী জামিনে আসলে ঘটনার সত্যতা বেরিয়ে আসে। এঘটনার বিচার চেয়ে বরিশাল মহানগর পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খানের কাছে প্রমাণ স্বরুপ সিসি ফুটেজ ও অডিও রেকডিং সহ লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ফার্মেসির প্রোপাইটার মাসুদ রানা। গত ০৫ নভেম্বর-২০২১ ইংরেজি তারিখ ডিবির এসআই মসরুদ উদ্দিন আহমেদ বাদী হয়ে মাদক ধারায় নগরীর নথুল্লাবাদ এলাকার মাদ্রাসা বাজার’র জীবন মেডিকেল হলের ওষুদ ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন ওরফে মাহমুদুল হাসান জীবন ও সোহেল নামে দুজনকে আসামি দেখিয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন ডিবি পুলিশের এস আই মসরুদ উদ্দিন আহমেদ। মামলা নং-১৩। ওই মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন দোকান’র ক্যাশ বাক্সের নিচ থেকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তদেরর তফসিল ভূক্ত ইনসেপটা কোম্পানির ৬ এম্পুল নেলবান টু ও অপসোনিন কোম্পানির ১০ এম্পুল ইজিয়াম ইঞ্জেকশন এবং ক্রেতা সোহেল সরদারের কাছ থেকে নেলবান ও ইজিয়ামসহ মোট ৯ এম্পুল মরফিন উদ্ধার করেছেন। মামলার বাদী এস আই মসরুদ ও টিম ইনচার্জ হাবিবুর রহমান মৌখিক ভাবেও মিডিয়ার কাছে এটাই দাবি করেন। অথচ এ ঘটনার অন্তরালে রয়েছে ডিবি পুলিশের লুটপাট-চাঁদাবাজি, হুমকি ধামকি ও মিথ্যা মামলা দায়ের এবং ধারা কমানোর নামে অর্ধলাখ টাকা ঘুষ গ্রহনের অভিযোগ। ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন জীবন প্রায় ১ মাস পর জামিনে আসলে সিসি ফুটেজ ও কল রেকডিং উদ্ধার করে দেখা যায়, সকাল ১১টা ২৩ মিনিটে নগরীর নথুল্লাবাদ হোসাইনিয়া মাদ্রাসা বাজারের জীবন মেডিকেল হল থেকে যুবক বয়সী একজন ক্রেতা ড্রাগ ইন্টার ন্যশন্যাল কোম্পানির এ এইচ-৪০০ নামে কৃমির ওষুধ কিনে ১১টা ২৫ মিনিটে চলে যায়। সিসি ফুটেজ বিশ্লেষনে দেখা যায়, দোকানের সামনে আসার পরই ওই ক্রেতার অঙ্গভঙ্গি ছিলো সন্দেহজনক। ঠিক ১১টা ৩৬ মিনিটে মহানগর গোয়েন্দা শাখার পুলিশ পরিদর্শক হাবিবুর রহমান, এস আই মসরুদ উদ্দিন আহমেদ (বিপি-৮৪১৩১৫৪১১১),এ এসআই ইছাহাক হোসেনসহ চার সদস্য তাদের সাজানো ক্রেতাকে সাথে নিয়ে দোকানের সামনে নিয়ে আসে। সেসময় এসআই মসরুদের হাতে নীল পলিথিনের ব্যাগ ভর্তি ওষুদ ছিলো। সেটি দেখিয়ে তিনি মরফিন বিক্রি করছো বলে হুমকি দিয়ে পলিথিন ব্যাগ সাথে নিয়ে দোকানে ঢুকে ক্যাশ বাক্স্রের কাছে বসেন। সে সময় তিনি বিক্রয় কাজে নিয়োজিত থাকা দোকানের প্রোপাইটার’র ছোট ভাই সাখাওয়াত হোসেন জীবন ওরফে মাহমুদুল হাসানকে ভয়ভীতি ও চাপ প্রয়োগ করে টাকা পয়সা যা আছে তা চাইতে থাকে। এক মিনিটের ব্যবধানে এস আই হাবিবুর রহমানও দোকানে ঢুকে টাকা চেয়ে ঠান্ডা চাপ দিতে থাকে। ১১টা ৩৮ মিনিট’র সময় এস আই মসরুদ ক্যাশ বাক্সের পাশে থাকা সিসি ক্যামেরার সুইচ বন্ধ করে ক্যাশ বাক্সে থাকা ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা লুট করে নেয়। সেসময় ক্যাশ বাস্কের ৩ নং ড্রয়ারে থাকা দোকানের দৈনিক ব্যয় হিসাবের খাতা এবং গুরুত্ব পূর্ণ একটি নোট বুকও নিয়ে যায়। এদিকে ওই ওষুধ ব্যবসায়ীকে ছাড়ার কথা বলে ডিবি এসপির নামে টিমের সাথে থাকা এ এসআই ইছাহাক জীবন মেডিকেল হলের প্রোপাইটার মাসুদ রানার কাছ থেকে অর্ধলাখ টাকা ঘুষ নিয়েও আসামি ছাড়েনি। এই পুলিশ সদস্য মামলার ৩ নং সাক্ষী হওয়ায় দোকানের প্রোপাইটার অনেকটা ভেবে চিন্তে বিশেষজ্ঞ আইনজীবীর সাথে কথা বলে কিছু দিন পর টাকা ফেরত চান। সে সময় ঘুষ গ্রহন করা এএসআই ইছাহাক মোবাইল কলে স্পষ্ট করে বলেন, টাকা হালাল করে খেয়েছি দুই বছর পর সুবিধা পাবেন। ক্রেতার কাছে কিছুই পাইনি তাকেও ৯ পিচ দিয়া দিছি”, এখন তো বুঝবেন না দুই বছর পর এর সুবিধা পাবেন। দোকান মালিকের দাবি, ভিডিওতে এস আই মসরুদ উদ্দিনের নিজ হাতে পলিথিনের ব্যাগ নিয়ে দোকানে প্রবেশ এবং এ এস আই ইছাহাকের মুখে কোন কিছু না পাওয়রা সত্যতা স্বীকার প্রমান করে চাঁদাবাজির উদ্দেশ্যে তারা দোকানে অভিযানের নাটক মঞ্চস্থ করেছেন। ঘটনা প্রবাহ ফাঁস না হতে পারে সে জন্য উপরস্থ কর্মকর্তাদের সামনে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে দুজনের বিরুদ্ধে ব্যাথার ও ঘুমের ইঞ্জেকশন উদ্ধার দেখিয়ে তড়িগড়ি করে মাদক মামলা দায়ের করে এস আই মসরুদ উদ্দিন। এসব মিথ্যা ঘটনার সাক্ষী হিসেবে ডিবির কথিত সোর্স যাতে মুখ খুলতে না পারে সেজন্য তাকে মামলার আসামি করা হয়েছে। বরিশাল ওষুদ প্রশাসনের তত্ত্বাবধায় অদিথি স্বর্না জানিয়েছেন, অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী কোন ঔষধের দোকান বা কোম্পানিতে পুলিশের অভিযান করতে হলে ওষুদ প্রশাসনের একজন পদস্থ কর্মকর্তা সাথে রাখতে হবে। কারন এটা ওষুধ অধিদপ্তরের নির্দেশনা। তাহলে ওই দপ্তরকে বাদ দিয়ে ডিবি পুলিশ কিভাবে অভিযানের নামে ব্যবসায়ীদের হয়রানী করেন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তার কোন সদুত্তর মেলেনি। এই একই বিষয়ে বরিশাল মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পরিতোষ কুন্ডু জানান, ইজিয়াম ঘুমের এবং নেলাবান ব্যাথার ইঞ্জেকশন উৎপাদন ও বিক্রির অনুমোদন আছে। পুলিশ মামলা দিতে পারে, কিন্তু আদালতে এসব মামলা টিকে না। এ বিষয়ে পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ দেওয়ার পরে দোকান মালিকের সাথে সমঝোতা করতে এস আই মসরুদ বিভিন্ন জনের কাছে ধর্না ধরতে শুরু করেছেন। মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সাহাবুদ্দিন খান জানিয়েছেন, তদন্ত স্বাপেক্ষে তিনি বিষয়টি গুরুত্বসহকারে যথযাথ ব্যবস্থা নিবেন।