Home রাজনীতি প্রচার নেই, যেভাবে কাটল প্রার্থীদের সময়

প্রচার নেই, যেভাবে কাটল প্রার্থীদের সময়

25

স্টাফ রিপোটার: নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুয়ায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুক্রবার সকাল ৮টায় শেষ হয়েছে। আগামীকাল রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত একটানা ৯ঘন্টা দ্বাদশ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে নির্বাচনের আগে ৪৮ঘন্টা প্রচারনা বন্ধ থাকলেও অন্য রকম ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন প্রার্থীরা। এরআগে গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৪জানুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশের ৩‘শ সংসদীয় আসনের বিপরীতে ১৮৯৫জন এমপি প্রার্থীরা শেষ মুহূর্তে ভোটারদের মন জয়ে সচেষ্ট ছিলেন। তবে শেষ ৪৮ঘন্টা প্রচারে না বেরিয়েও কেউ নিজের বাবা-মা আবার নিকটতম আত্মীয় স্বজনের কবরে বিশেষ দোয়া এবং বাদ জুম্মায় নিজ নিজ এলাকার মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন। পরে নিজ বাসভবনে পরিবার-পরিজন এবং দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে সলা-পরামর্শের মধ্যদিয়ে ব্যস্ততম সময় কাটাচ্ছেন। তবে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিরামহীন প্রচার শেষে বিশ্রামে সময় পেয়েছেন খুবই কম। শুক্রবার অনেকটা নীরবেই কোনাপাড়া কাঠেরপুল এলাকার নিজ বাসভবনেই কাটিয়েছেন ঢাকা-৫ আসনে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ্ব মশিউর রহমান মোল্লা সজল। এরআগে মাতুয়াইল কবরস্থানে তার বাবা ঢাকা-৫ আসনের প্রয়াত চারবারের এমপি আলহাজ্ব হাবিুবর রহমান মোল্লার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করেন। পরে মাতুয়াইল মসজিদে এলাকাবাসির সঙ্গে জুম্মার নামাজ আদায় করেন। আর নৌকার প্রতীকের প্রার্থী হারুনর রশীদ মুন্না জুম্মার নামাজ আদায় করেছেন ভাঙ্গাপ্রেস মসজিদে। পরে নিজ বাসভবনে (মুকবুল ভবন) পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে সময় কাটান এবং দলীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেন। কিশোরগঞ্জ-২ (পাকুন্দিয়া-কটিয়াদী) আসনে নৌকার প্রার্থী আলোচিত সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল কাহার আকন্দ। শুক্রবার তিনি জুমার নামাজ আদায় করেন কটিয়াদী কলাপট্টি জামে মসজিদে। এ সময় উপস্থিত মুসল্লীদের সঙ্গে তিনি কৌশল বিনিময় করেন। কুমিল্লা-১ আসনে (দাউদকান্দি ও তিতিয়াস) নৌকার প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর নিজ এলাকার জামে মসজিদে নামাজ আদায় করেন এবং উপস্থিত সকল মুসল্লীদের সাথে কৌশল বিনিময় করেন। একইভাবে দেশের প্রতিটি সংসদীয় এলাকায় মসজিদে মসজিদে নাম্জা আদায় করেছেন এবং মুসল্লীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন বলে জানা গেছে।
জাতির কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরে সাংবাদিকরা : বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে সাংবাদিকরা জাতির কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ. ফ. ম বাহাউদ্দিন নাছিম। শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিকেল রিপোর্টার্স ইউনিটির কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন। এদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে রোগীদের খোঁজ খবর নিতে যান তিনি। বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সবার কাছে ঢাকা মেডিকেল একটি আস্থা ও ভরসার জায়গা। প্রতিনিয়ত ঢাকা মেডিকেলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন শ্রেণীর রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। তবে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে অনেকে হয়রানির শিকার হন। তারা যেন সঠিক চিকিৎসা সেবা পান সে ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা সংবাদ পরিবেশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেলে সাংবাদিকদের কারণে এখন আর সাধারণ রোগীদের দালালের খপ্পরে পড়ে বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয় না। চিকিৎসকরা এখানে চিকিৎসা সেবা দেন এবং সাংবাদিকরা সঠিক তথ্য জাতির কাছে তুলে ধরেন; এটিও একটি ইবাদত। এর আগে তিনি, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বিভিন্ন রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের খোঁজ খবর নেন। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন, বাহাউদ্দিন নাছিমের ছেলে ইঞ্জিনিয়ার এ বি এম সিদ্দিকী, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল সায়েম, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ক সম্পাদক ওবায়দুল হক খান ও প্রতিবন্ধী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার পারভেজ টিংকু। ফেসবুকে সরব প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকেরা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণার সময় শেষ হয়েছে শুক্রবার সকাল আটটায়। এখন অপেক্ষা ভোটের। চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। এত দিন মাঠেঘাটে বিরামহীন প্রচার শেষে প্রার্থীরা এখন সরব হয়েছেন অনলাইনে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রার্থী ও তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা প্রচার চালাচ্ছেন। তাঁরা ছবি, পোস্টার, ভিডিও, গ্রাফিকসসহ নানা উপায়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন। পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৬ আসন। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাতজন প্রার্থী। তবে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. রশীদুজ্জামান ও ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ জি এম মাহবুবুল আলম ও তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের ফেসবুকে প্রচার সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের শফিকুল ইসলাম মধু ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) নোঙ্গর প্রতীকের প্রার্থী নেওয়াজ মোরশেদও সরব আছেন ফেসবুকে। মো. রশীদুজ্জামানের ফেসবুক আইডি থেকে নির্বাচনী প্রচার চালানো হচ্ছে। সেখানে বিভিন্ন এলাকায় তাঁর নির্বাচনী সভার বক্তব্যের ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর গণসংযোগের ছবি, পোস্টারের ছবি, কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলা নিয়ে পরিকল্পনা, প্রতিশ্রুতিসহ নানা বিষয় স্থান পেয়েছে ফেসবুকে। এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে মো. রশীদুজ্জামান লিখেছেন, নেত্রী মোদের ডাক দিয়েছে, সব সাথিদের খবর দাও। ষড়যন্ত্রকে কবর দিয়ে নৌকা ভরে ভোট দাও। ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জি এম মাহবুবুল আলমও তাঁর ফেসবুক আইডি থেকে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। তাঁর প্রচারে বিভিন্ন সময়ের গণসংযোগের ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হচ্ছে। প্রিয় কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলাবাসী, আমি আপনাদের সবার আবদার মেটাতে পারিনি, এ জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আপনারা আছেন আমার হৃদয়ে। ৭ তারিখ সারা দিন ঈগল মার্কায় ভোট দিন। লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম ও নোঙ্গর প্রতীকের প্রার্থী নেওয়াজ মোরশেদও ফেসবুকে নির্বাচনী গণসংযোগের ছবি ও ভিডিও পোস্ট করে প্রচার চালাচ্ছেন। প্রার্থীদের পাশাপাশি তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরাও আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষে অনলাইনকে প্রচারের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তাঁরা পছন্দের প্রার্থীর ছবি ও নানা কিছু পোস্ট করে ফেসবুকে সরব আছেন। ফেসবুকে কয়রা ও পাইকগাছা দুটি উপজেলার ভোট নিয়ে পাল্টাপাল্টি পোস্টও দিচ্ছেন কর্মী-সমর্থকেরা। ফেসবুকে প্রচার সম্পর্কে কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, যুগের সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারের ধরনেরও পরিবর্তন এসেছে। এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও প্রায় সবাই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। তাই অনলাইনে নির্বাচনী প্রচারও অনেক বেশি কার্যকর। সে কারণে এর ব্যবহারও বাড়ছে।