Home সারাদেশ পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বোতল দিয়ে ‘বোতল বাড়ি’

পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বোতল দিয়ে ‘বোতল বাড়ি’

39

ডেস্ক রিপোর্ট: বাতিল মানেই ফেলনা নয়; এবার রং-বেরঙের পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন এক দন্ত চিকিৎসক। স্থানীয়দের কাছে বাড়িটি ‘বোতল বাড়ি’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বাড়িটি ভূমিকম্পরোধক ও বুলেট প্রুফ।

পাঁচ কক্ষ বিশিষ্ট এ বাড়িটির নির্মাণকাজ চলমান। ছাদ ঢালাইয়ের কাজ বাকি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বোতল বাড়ির একাধিক ছবি ভাইরাল হয়েছে। এরপর বাড়িটি বরিশাল জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বোতল বাড়ি দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে উৎসুক মানুষ আসছে।

বোতল বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রামানন্দেরআঁক গ্রামের বাসিন্দা ও গৌরনদী মডেল থানা কমপ্লেক্সসংলগ্ন এলাকার দন্ত চিকিৎসক পলাশ চন্দ্র বাড়ৈ।

স্থানীয় বাসিন্দা রণজিৎ মিস্ত্রি বলেন, শুরুতে পলাশের ইচ্ছের কথা শুনে এলাকাবাসী তেমনভাবে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি। শুধু দেখেছেন ট্রাকে করে পলাশ প্লাস্টিকের বোতল বাড়িতে আনছেন। এরপর সেই বোতলগুলোর মধ্যে লোক দিয়ে বালু ভরাচ্ছেন, আর বলছেন এ দিয়েই বাড়ি বানাবেন। কিন্তু কীভাবে বাড়ি হবে, তা তাদের মাথায় আসছিল না। একই গ্রামের স্বপন কুমার বলেন, প্রথমে বিষয়টি ভ্রুক্ষেপ না করলেও যখন অবকাঠামোটি ধীরে ধীরে দাঁড়িয়ে যেতে থাকে, তখন সবাই অবাক হয়েছে। সবার মনের ভেতরেই অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করতে থাকে। আশপাশের সবাই এখন বোতল বাড়িটি দেখার মতো হয়েছে বলেই মন্তব্য করছেন। আশপাশের হাট-বাজারেও বোতল বাড়ি নিয়ে এখন আলোচনা হচ্ছে।

পলাশের বাবা অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জ্যোতিষ চন্দ্র বাড়ৈ বলেন, ইন্টারনেটে জাপানি প্রযুক্তির বোতল বাড়ি দেখে আমাদের কাছে পলাশ বোতল দিয়ে বাড়ি বানানোর কথা বলে। প্রথমে আমরা তাকে নিষেধ করি। পরে তার অনুরোধে বাড়ি বানানোর অনুমতি দিতে বাধ্য হয়েছি। এখন দেখি ভালোই হয়েছে। পলাশের স্ত্রী জুঁই রানী দাশ বলেন, নির্মাণাধীন বোতল বাড়ি দেখতে আসা মানুষের কাছে স্বামী পলাশ চন্দ্র বাড়ৈর প্রশংসা শুনে বেশ ভালোই লাগছে।

অভিনব পদ্ধতিতে বাড়ি নির্মাণের সঙ্গে জড়িত থাকতে পেরে ব্যাপক খুশি রাজমিস্ত্রি ও শ্রমিকরা। বোতল বাড়ি নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা বলেন, বাড়িটি নির্মাণে ইটের বদলে প্লাস্টিকের পরিত্যক্ত বোতল আর বালু ব্যবহার করা হয়েছে। পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতলগুলোর মধ্যে বালু ভরে তা ব্যবহার করা হয়েছে বাড়ির দেয়ালের গাঁথুনি তৈরিতে। ইতিমধ্যে ইটের বদলে প্লাস্টিকের বোতল দিয়েই বাড়ির দেয়ালের গাঁথুনির কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। পাশাপাশি বাড়ির পাশের পুকুরের ঘাটলাও নির্মাণ করা হয়েছে বোতল দিয়ে।

রাজমিস্ত্রি মতি সিকদার বলেন, কাজ যতদূর করা হয়েছে, তাতে নিশ্চিত বাড়ির নির্মাণকাজ খুবই মজবুত হয়েছে। যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাড়ির তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। আসন্ন দুর্গা পূজার পর বাড়ির ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শুরু করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বোতল বাড়ি নির্মাণের উদ্যোক্তা পলাশ চন্দ্র বাড়ৈ বলেন, প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে এভাবে বাড়ি নির্মাণের প্রযুক্তিটা মূলত জাপানি। প্রযুক্তিটা আমার কাছে ভালো লেগেছে। কারণ এ বাড়ির প্রতিটি দেয়াল শীতে গরম আর গরমে ঠাণ্ডা থাকবে। ফলে বাড়ির ভেতরটাও আবহাওয়া অনুযায়ী বসবাসের উপযোগী হবে। এছাড়া প্লাস্টিকের বোতলগুলো ফ্ল্যাক্সিবল হওয়ায় এটা ভূমিকম্প রোধক। পাশাপাশি দেয়ালগুলো বুলেট প্রুফ। আর বাড়িটি ইটের চেয়ে ৮০ গুণ বেশি শক্ত। তিনি আরও বলেন, ১ হাজার ৫২৫ স্কয়ারফিট বাড়িটির মাটির নিচে ফাউন্ডেশনের কাজে এক লিটারের বালুভর্তি প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করা হয়েছে। আর ওপরের দেয়ালগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে ২৫০ মিলিলিটারের বিভিন্ন কোমলপানীয়র বালুভর্তি প্লাস্টিকের বোতল। সব মিলিয়ে বাড়িতে ৪৮ মণ যা গণনায় প্রায় ৭৫ হাজার পিস প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করা হয়েছে।

বাড়িটি দোতলা করার ইচ্ছের কথা জানিয়ে দন্ত চিকিৎসক পলাশ চন্দ্র বাড়ৈ আরও বলেন, এসব বোতল ক্রয় করে বাড়িতে এনে তাতে বালু ভরে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু এই সমপরিমাণ জায়গায় সাড়ে ৩ লাখ টাকার ইটের প্রয়োজন হতো। সে হিসেবে আমার অর্ধেকের বেশি খরচ কম হয়েছে। ইট-সিমেন্ট দিয়ে তৈরি পাকা বাড়ির চেয়ে অন্তত ৩০ শতাংশ কম খরচে স্বপ্নের এ বাড়ি নির্মাণ করা সম্ভব বলেও মনে করছেন পলাশ চন্দ্র বাড়ৈ।

এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রকৌশলী শিপলু কর্মকার বলেন, এ ধরনের বাড়িতে খরচ কিছুটা কম হবে সেটা নিশ্চিত। তবে বোতল বাড়ি কতটা টেকসই, পরিবেশবান্ধব এবং দীর্ঘস্থায়ী তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলে বোঝা যাবে।
ইত্তেফাক