Home স্বাস্থ্য ‘ক্যাডাভেরিক ডোনেশনই বাঁচাতে পারে লাখো প্রাণ’

‘ক্যাডাভেরিক ডোনেশনই বাঁচাতে পারে লাখো প্রাণ’

196

মানব কল্যাণে অঙ্গদান করুন: বিএসএমএমইউ উপাচার্য

স্টাফ রিপোটার: ‘ক্যাডাভেরিক ডোনেশনই বাঁচাতে পারে লাখো প্রাণ’ প্রতিপাদে নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) সফল ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্টেশনের বর্ষপূর্তি আয়োজিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় (১৮ জানুয়ারি ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে সারাহ ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট সেল এর আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের শুরুতে বি-ব্লকের সামনে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রা শেষে একটি আলোচনা সভা শহীদ ডা. মিল্টান হলে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. গওহর রিজভী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেনাল ট্রান্সপ্লান্ট প্রধান ও প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান দুলাল।

অনুষ্ঠানে আইসিইউ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোঃ আশরাফুজ্জামান সজীব একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। সারাহ্ ইসলামের চক্ষু গ্রহীতা সুজনও উপস্থিত হয়ে নিজের সুস্থতার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। সুজনের অভিব্যক্তি প্রকাশকালে সারাহ্ ইসলামের মা শবনম সুলতানা আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে সারাহ্ ইসলামের কিডনি গ্রহীতা শামিমা আক্তার এক ভিডিও বার্তায় নিজের সুস্থতার কথা জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুদানের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান। শামীমা সারাহ্ ইসলামের ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্যের প্রতি কৃতজ্ঞা প্রকাশ করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. গওহর রিজভী বলেন, অঙ্গদানের বিষয়টি ব্যক্তির নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়। অঙ্গদানের মতো মহৎ বিষয়টিকে আন্দোলনে পরিণত করতে মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। অঙ্গদান কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য ‘লিভিং উইল’ এর ধারণাটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। লিভিং উইলটা খুব প্রয়োজনীয় জিনিস। কেননা এক সেকেন্ডের মধ্যেই আপনার সঙ্গে যে কোনো কিছু হয়ে যেতে পারে। আপনি হয়তো কথা বলতে পারবেন না, মুভ করতে পারবেন না, কিন্তু আপনার অর্গানগুলো কাজ করবে। তখন আত্মীয়রা চাইবে আমরা একে যতদিন বাঁচিয়ে রাখতে পারি। কিন্তু যদি অর্গান ও বডি তিনি যদি বলে যান, যদি লিভিং উইল আমরা দিয়ে যাই তাহলে তখন নিকটতমদের সিদ্ধান্ত নিতে এবং অনেক কাজই সহজ হয়ে যায়। কাজেই আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ করবো- কার্ড করেন এবং যদি পারেন লিভিং উইল করে যান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ মানব কল্যাণে অঙ্গদানের আহ্বান জানিয়ে বলেন, অ্যাকসিডেন্ট বা যেকোনো দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন কারণেই অনেক রোগীকে দীর্ঘদিন আইসিইউতে থাকতে হয়। এ সময় অনেকেই ব্রেন ডেথ হয়ে যায়। অর্থাৎ তাদের কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করে কিন্তু তাদের মস্তিষ্ক মারা যায়। এমন মস্তিষ্ক মৃত (ব্রেইন ডেথ) ব্যক্তির দেহ থেকে কিডনি, কর্নিয়া ও লিভারসহ অন্যান্য আট ধরনের পৃথক অঙ্গ সংগ্রহ করে আটজন মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপন সম্ভব। তিনি বলেন, মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশগুলোতেও এখন ক্যাডাভেরিক অঙ্গ প্রতিস্থাপন বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। শীর্ষ দেশগুলোও আমাদের মুসলিম অংশীদারদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আমাদের স্বাস্থ্যসেবা নীতিমালাগুলো পরিমার্জন করতে পারি। অঙ্গ সংগ্রহ এবং এর প্রক্রিয়াগুলোকে সহজতর করতে পারি এবং অঙ্গ দানের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে জনসচেতনতা বাড়াতে পারি। কেননা এ প্রতিস্থাপন ব্যবস্থার মাধ্যমে মৃত্যু পথযাত্রী অন্য মানুষদের সম্পূর্ণ সুস্থ ও কর্মক্ষম করে তোলা সম্ভব। আর ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যদি দেখা হয়, তবে পবিত্র কোরআনেও বলা হয়েছে, ‘যে মানুষের প্রাণ বাঁচালো, সে যেন তামাম মানুষকে বাঁচালো। ’

ক্যাডাভেরিক কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে দৃষ্টি ফিরে পেয়েছেন নারায়ণগঞ্জের সুজন। তিনি বলেন, আমি আগে অন্ধ ছিলাম, কিছুই দেখতে পেতাম না। এখন আমি পৃথিবীর আলো দেখতে পাচ্ছি।

আলোচনায় ব্রেন ডেথ রোগীর অঙ্গ বা ক্যাডাভেরিক ডোনেশনে কার্ড ও লিভিং উইলের আহ্বান জানান বক্তারা।