Home জাতীয় দৌলতপুরে বিদ্রোহী প্রার্থীদের চাপে আওয়ামী লীগের ১১ চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন শঙ্কায়

দৌলতপুরে বিদ্রোহী প্রার্থীদের চাপে আওয়ামী লীগের ১১ চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন শঙ্কায়

42

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের চাপে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের ১১ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন চরম শঙ্কায়। নৌকা প্রতীক পেলেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন এমন ধ্যান ধারণা পরিবর্তন হয়েছে। পার্শ্ববতী ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সুষ্ঠ পরিবেশ দেখে দৌলতপুরের সাধারণ ভোটার ও আওয়ামী লীগের বঞ্চিত বিদ্রোহী প্রার্থীদের মাঝে স্বস্থি ফিরেছে। অবাঁধ, সুষ্ঠ ও নিরেপেক্ষ নির্বাচন হলে দৌলতপুরের ১৪ ইউনিয়নের মধ্যে ১১ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ দলীয় নৌকার প্রার্থীদের ভরাডুবির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকায় ৩জন চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন অনেকটা চাপমুক্ত ও স্বস্থিতে।
দৌলতপুরের বিভিন্ন এলাকার আওয়ামী লীগের সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের ভাষ্যমতে, অনৈতিক সুবিধাভোগ করা উপর মহলের নেতাদের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত ও মত পরিবর্তন করা সময় এসেছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বার বার একই ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিয়ে তাদের উদর পূর্তি করার সুযোগ দিয়ে নিজেরাও থাকেন বহাল তবিয়্যতে। দিনের পরিবর্তন হয়েছে, সময় ও সুযোগ পেলেই নেতাদের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তের পরিবর্তন অনিবার্য। শহিদুল ইসলাম নামে আওয়ামী লীগের অন্ধ সমর্থক নেতাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একই ব্যক্তিকে তিন তিনবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হলে তৃনমুলে ক্ষোভ দানা বাঁধবে এটাই স্বাভাবিক। রাজনীতির প্রতি যাদের দুর্বলতা আছে তাদের প্রত্যেকেরই আশা আকাঙ্খা থাকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে। কিন্তু তাতে পেরেক ঠুকে পথ রুদ্ধ করে রাখেন নেতারা। একই মত পোষণ করেন, পিয়ার আলী নামে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী। তিনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগের কর্মী, তাই বলে ভুল সিদ্ধান্তের প্রতি বার বার সমর্থন দিতে পারছিনা।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যে প্রার্থীরা প্রচার প্রচারনাই নেমে পড়েছেন। তবে শঙ্কা, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা নিয়ে ১১ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ দলীয় নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের চাপে তাদের প্রচারণায় রয়েছে মন্থর গতি। এদের মধ্যে রয়েছেন দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. সরওয়ার জাহান বাদশাহ্র নিজ ইউনিয়ন ফিলিপনগর। সেখানে সাবেক চেয়ারম্যান নঈমদ্দিন সেন্টু, ওরুশ কবিরাজ ও বিএনপি দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলামের ত্রি-মুখী চাপে নৌকার প্রার্থী একেএম ফজলুল হক কবিরাজ রয়েছেন মলিন অবস্থায়। একই অবস্থা মরিচা ইউনিয়নে। সেখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জোয়াদুর রহমান জজ ও জাহিদুল ইসলাম জাহিদের প্রচারনার কোনঠাসা অবস্থায় আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী শাহ আলমগীর। পিয়ারপুর ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী আবু ইউসুফ লালু এখনও প্রচারনায় সেভাবে নামতে পারেননি। পিয়ারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম ও যুবলীগ নেতা সোহেল রানা বুলবুল স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় অনেকটা কোনঠাসা অবস্থায় নৌকার প্রার্থী আবু ইউসুফ লালু। রিফাইতপুর ইউনিয়নে দৌলতপুর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ বাবলুর পক্ষে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ঐক্যবব্ধ হওয়ায় বর্তমান চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যান প্রার্থী নৌকার মাঝি জামিরুল ইসলাম বাবু কোনঠাসা অবস্থায় রয়েছেন। আড়িয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হেলাল উদ্দিন শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। তবে প্রতিবারের ন্যায় এবারও আত্মীয়তার সুবাদে মিরপুরের হস্তক্ষেপ না হলে বিএনপি ঘরনার আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান সাঈদ আনছারী বিপ্লবের বিজয় কষ্টসাধ্য হবে। বোয়ালিয়া ইউনিয়নেও একই অবস্থা। প্রচার বিমুখ বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী মহিউদ্দিন বিশ্বাস মহি বিদ্রোহী প্রার্থীদের চাপে কোনঠাসা অবস্থায় রয়েছেন। বিগত দিনের দুর্নীতি ও সাবেক ইউপি সদস্যদের অনাস্থা মহিউদ্দিন বিশ্বাস মহির জন্য গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। আদাবাড়িয়া ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী মকবুল হোসেনের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি নিজ দলের সদস্য ও জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুলøাহেল বাঁকী। অন্য প্রার্থীরাও অবস্থান তৈরীর চেষ্টায় প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছেন। প্রাগপুরের বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ দলীয় ক্লিন ইমেজের প্রার্থী আশারাফুজ্জামান মুকুল সরকারের মুল প্রতিদ্বন্দ্বি দৌলতপুর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম হালসানা ও সাবেক চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম গেদু। দুই প্রার্থীর অবস্থান নিজ নিজ এলাকায় সুদৃড় হওয়ায় নৌকার প্রার্থীর বিজয় অনেকটা অনিশ্চয়তায় পড়েছে। মথুরাপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী সরদার হাসিম উদ্দিন হাসু বয়সের ভারে নুহ্য হয়ে পড়ায় নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী তরুন প্রজন্মের মাঝে আস্থার জায়গা করে নেওয়া মনোয়ার কবীর মিন্টুর পক্ষে জনমত বেড়েছে। সেখানেও নৌকার প্রার্থীর বিজয় অনেকটা দুরহ হবে। সদর ইউনিয়ন দৌলতপুরে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী মহিউল ইসলাম মহির বিপক্ষে আওয়ামী লীগের সকল বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার বিপক্ষে জনজোয়ার তৈরীতে অনেকটা এগিয়ে।
তবে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি না থাকায় রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী সিরজ মন্ডল, চিলমারী ইউনিয়নের সৈয়দ আহমেদ ও হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সেলিম চৌধুরী রয়েছেন ফুরফুরে মেজাজে। এই তিন প্রার্থীর বিজয় হাতের নাগালে রয়েছে। অপেক্ষা শুধু ২৮ নভেম্বর ভোটের দিন পর্যন্ত।
সর্বপরি নিজ দলের বিদ্রোহীদের চাপে দৌলতপুর উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের মধ্যে ১১ ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থীদের বিজয় অনেকটা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। সেক্ষেত্রে অতীত কর্মকান্ড ও প্রশাসন নির্ভরতা তাদের একমাত্র ভরসা হতে পারে।