Home সারাদেশ দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে: রাসিক মেয়র লিটন

দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে: রাসিক মেয়র লিটন

84

পাভেল ইসলাম মিমুল রাজশাহী ব্যুরো: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, ‘রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় ফ্লাইওভার নির্মাণ সহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করছে।’ এ সময় তিনি বিভ্রান্তকরণ তথ্যে বিভ্রান্ত না হয়ে চলমান উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে নগরবাসী সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।অ

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (০৯ মে) বেলা ১২টায় নগর ভবনের সিটি হল সভাকক্ষে নগরীর চলমান উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিতকরণের লক্ষ্যে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সভায় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন রাসিক মেয়র।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে নগরীর বিভিন্ন রেল ক্রসিং এ ফ্লাইওভার নির্মাণ। ফ্লাইওভারসহ নগরীতে যখন নাগরিকগণের জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলমান রয়েছে, ঠিক সেই সময়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ নিয়ে কিছু বিভ্রান্তকর তথ্য প্রচারিত হচ্ছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আলোচিত বিষয়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ব্যাখাসহ নগরীর চলমান উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, রাজশাহী মহানগরীর কেন্দ্রস্থলের বুক চিরে রেললাইন। রেলের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী শীঘ্রই ট্রেন চলাচলের জন্য রেলের ডাবল লাইন হতে যাচ্ছে। চালু হতে যাচ্ছে ডাবল ডেকার ট্রেন। কোর্ট স্টেশন সংলগ্ন নির্মিতব্য ইয়ার্ডে ভারত ও নেপাল থেকে আনিত পণ্য সামগ্রী নামানো ও ওঠানো হবে। আরডিএ এর মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী সিটি এলাকা উত্তর দিকে বৃদ্ধি পাবে। ফলে উত্তর-দক্ষিণে চলাচল বাড়বে। রাজশাহী সিটির আয়তন তিন থেকে চারগুণ বৃদ্ধির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। শহরের মধ্যে রেলক্রসিংগুলোতে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটে। আগামীতে মানুষ ও যানবাহন সংখ্যাধিক্যের কারণে শহরের উত্তর-দক্ষিণে চলাচল ক্রমবৃদ্ধিতে ভবিষ্যতে যানজটসহ দুর্ঘটনাও বাড়বে।সার্বিক দিক বিবেচনায় জনস্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে দুর্ঘটনারোধ ও নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত এবং ভবিষ্যতে উদ্ভূত যানজট নিরসনে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আগামী ৫০/১০০ বছরের বাস্তবতায় রাজশাহী মহানগরীতে রেলক্রসিং-এ ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া বর্তমান মুহুর্তে ফ্লাইওভার তৈরি করা না হলে ভবিষ্যতে তা করা কঠিন হবে, নির্মাণ ব্যয় বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।

সবুজায়ন ও বৃক্ষরোপণের ব্যাপারে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, নগরীর প্রধান প্রধান গুরুত্বপূর্ণ সড়কসমূহ চারলেন থেকে ছয়লেনে উন্নীত করা হয়েছে। প্রশস্ত সড়ক নেটওয়ার্ক, দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত ও আলোকায়নে নগরীর নান্দনিকতা ও সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পেয়েছে। রাস্তা প্রশস্ত করতে গিয়ে সড়কে কিছু গাছ কাটা পড়েছে। এক্ষেত্রে একটি গাছ কাটা পড়লে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক তার পরিবর্তে পরিকল্পনামতো ১০টির অধিক গাছ রোপণের পরিকল্পনা রয়েছে। গত ৫ বছরে দুই লক্ষ ৫০ হাজার এর অধিক স্থায়ী বড় গাছ, সড়কের আইল্যান্ড ও বিভিন্ন মোড়ে হেজ জাতীয় ১০ লক্ষাধিক গাছ এবং বিভিন্ন মৌসুমে ৭ লক্ষাধিক বিভিন্ন প্রজাতির ফুল গাছ লাগানো হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০০৯, ২০১২, ২০২১ সালেও বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার এবং ২০১২ ও ২০২১ সালে জাতীয় পরিবেশ পদক লাভ করেছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। বিপুল পরিমাণ বৃক্ষরোপণসহ বহুমুখী উদ্যোগের কারণে ২০১৬ সালে বাতাসে ক্ষতিকারণ ধূলিকণা হ্রাসে বিশ্বের সেরা শহর নির্বাচিত হয় রাজশাহী।

রাসিক মেয়র বলেন,জনগণের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নিজস্ব অর্থায়নে মুসরইল মৌজায় ১৫ বিঘা ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে জনস্বার্থে কবরস্থান ও ঈদগাহ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। কবরস্থান ও ঈদগাহ নির্মাণের প্রস্তাব ১০/০৪/২০২২ তারিখে সিটি কর্পোরেশনের ১১তম সাধারণ সভায় অনুমোদিত হয়। ০৭/০৯/২০২২ তারিখে স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক প্রস্তাবিত ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে ক্রয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন লাভ করে। স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন,২০০৯ ধারা ৮০ উপ-ধারা ২ (ঘ) অনুযায়ী ভূমি ক্রয় করতে পারে সিটি কর্পোরেশন। আইন অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশনের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শুরু করে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। কবরস্থান ও ঈদগাহ নির্মাণের ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমের বিষয়ে যে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন প্রচার চালানো হচ্ছে, তা সম্পূর্ণভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

সিটি মেয়র বলেন, প্রায় ১০ লক্ষ জনগোষ্ঠীর রাজশাহী মহানগরী দেশীয় ও আর্ন্তজাতিকভাবে সবুজ, পরিচ্ছন্ন, পরিবেশসম্মত, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসযোগ্য নগরী হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। বিগত ৫ বছরে নগরীর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। প্রধান প্রধান সড়ক চার থেকে ছয় লেনে উন্নীত করা হয়েছে। যার সুফল পাচ্ছেন নগরবাসী। গরীর সুনাম দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রাজশাহী মহানগরীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। দেশে ও দেশের বাইরে অবস্থানকারী বাংলাদেশীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের নগরীর প্রশংসা করেন, শহরকে নিয়ে গর্ববোধ করেন।

নগরীর উন্নয়নের কার্যক্রম তুলে ধরে রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন জানান, ২৯৩১ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামোর উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় সর্বমোট ২২৯ টি প্যাকেজের ২০৫০ কোটি ৩ লাখ টাকার টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এরমধ্যে ১৯৭৬ কোটি ২২ লাখ টাকার কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। সর্বমোট ২২৯টি প্যাকেজের মধ্যে ১৮৩টি প্যাকেজের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং ৪৬টি প্যাকেজের কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় ৬০ শতাংশের অধিক। সম্মানিত নাগরিকদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে রাস্তা পারাপার ও দুর্ঘটনা রোধে নগরীর ১০টি জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে দৃষ্টিনন্দন ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৬টি নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে, যা শীঘ্রই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। ২৩৮.৭৫কি.মি. কার্পেটিং সড়ক, ২৬০.৩০কি.মি. সিমেন্ট-কংক্রিট সড়ক, ৩৫০.০৫কি.মি. নর্দমা, ৪০.২২কি.মি. ফুটপাথ ও ২৪০৯৯.৫০মি. সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। ১৬টি জলাশয়ের উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২৯টি ঈদগাহ, ৫২টি গোরস্থান ও ১টি শ্মশান ঘাটের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। শালবাগান কাঁচাবাজার, নওদাপাড়া কাঁচাবাজার ও ৬ নং ওয়ার্ড কার্যালয় নির্মাণ কাজ চলছে। প্রকল্পের আওতায় শেখ রাসেল পার্ক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও ভুবন মোহনপার্কের উন্নয়ন কাজ চলমান। হযরত শাহ মখদুম রূপোশ (র.) দরগাহ শরীফের উন্নয়ন প্রকল্প’ কাজ চলছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ইপিআই কার্যক্রমে জাতীয়ভাবে পর পর ১০ বার ১ম স্থান এবং জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রমে জাতীয়ভাবে পরপর ২ বার প্রথম হয়েছে রাসিক। শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠীর ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে রাসিক এমপ্লয়মেন্ট স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট।

সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহীর উন্নয়নে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন রাসিক মেয়র। তিনি জানান, ৫ বছর স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, ব্যাপক কর্মসংস্থান এবং বেকারত্ব হ্রাস ও উদ্যোক্তা সৃষ্টি। নদী ও বরেন্দ্র অঞ্চলভিত্তিক আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা। সিটি কর্পোরেশন এলাকা সম্প্রসারণ। রাজশাহী মহানগরীর প্রাকৃতিক জলাশয় সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্প। রাজশাহী মহানগরীর কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ এবং অপসারণ ব্যবস্থাপনার আধুনিক প্রকল্প। রাজশাহী মহানগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণার্থে নর্দমা নির্মাণ প্রকল্প (৪র্থ পর্যায়) শুরু করা। রিজিলিয়েন্ট আরবান এ্যান্ড টেরিটরিয়্যাল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট। আন্তর্জাতিক নৌবন্দর স্থাপন। রাজশাহীতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন। রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন ও বাস চলাচল চালু করা। বঙ্গবন্ধু রিভারসিটি‘র কার্যক্রম শুরু করা। দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, ১৫০ শয্যা রাজশাহী সিটি হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প। রাজশাহী মহানগরীর সম্প্রসারিত এলাকায় সড়ক নেটওয়ার্কের উন্নয়ন প্রকল্প। রাজশাহী মহানগরীর ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থাপনার অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প। রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়া এলাকায় পরিচ্ছন্ন কর্মনিবাস নির্মাণ কাজ প্রকল্প। রাজশাহী মহানগরীতে শেখ রাসেল সায়েন্স সিটি ও সাফারি পার্ক নির্মাণ প্রকল্প। রাজশাহী মহানগরীর ফ্লাইওভার/ওভারপাস/ আন্ডার পাস নির্মাণ প্রকল্প।

এছাড়া ইতিবাচক কার্যক্রম লিখনীর মাধ্যমে তুলে ধরে নগরীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল ও সুনাম বৃদ্ধি করতে গণমাধ্যম কর্মীদের সহযোগিতাও কামনা করেন রাসিক মেয়র।

সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোঃ জিয়াউল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর রুহুল আমিন প্রামাণিক, প্যানেল মেয়র-১ ও ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিযাম উল আযীম, প্যানেল মেয়র-২ ও ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মোমিন, ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু, ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রজব আলী, ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন, ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বেলাল আহম্মেদ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল মান্নান, ড. তসিকুল ইসলাম রাজা, কবি আরিফুল হক কুমার, সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর হবিবুর রহমান,রাবির গণযোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর সাজ্জাদ বকুল-সহ কাউন্সিলগণ, প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার সহ অন্যান্য কর্মকর্তাগণ। সঞ্চালনা করেন রাসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাফিজ মিশু।