Home রাজনীতি দক্ষিণের ৬১-৬৪ নং ওয়ার্ডে দুইবার সম্মেলনের প্রস্তুতি গঠনতন্ত্র মানার কোন বালাই নেই...

দক্ষিণের ৬১-৬৪ নং ওয়ার্ডে দুইবার সম্মেলনের প্রস্তুতি গঠনতন্ত্র মানার কোন বালাই নেই নগর আওয়ামী লীগে

23

স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ চলছে নেতাদের ইচ্ছেমত। গঠনতন্ত্রের কোন বালাই নেই। যে যার মতো করে সিদ্ধান্ত দিচ্ছে তৃণমূলের ইউনিট-ওয়ার্ড ও থানা নেতাদের। চলমান থানা-ওয়ার্ডের সম্মেলনগুলোতে বিশৃঙ্খলা যেন লেগেই আছে। নগরের দুই শীর্ষনেতার ব্যাক্তিবলয় গড়ার প্রতিযোগিতায় সম্প্রতি লালবাগ-হাজারিবাগসহ বেশ কয়েকটি থানা-ওয়ার্ড সম্মেলনে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে দলের হাইকমাণ্ডের নেতারা ও বিরক্ত। এরইমধ্যে দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজের অভিযোগে শোকজ করা হয়েছে ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরকে। এককথায় বলতে গেলে নগরের সম্মেলনগুলোতে কেউ কারো কথা শুনছেন না। এইসব সম্মেলনগুলোকে উপস্থিত থেকে ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম কঠোর হুসিয়ারি দিয়েও শৃঙ্খলায় ফেরাতে পারছেন না ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী বলেছেন, নিয়মের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। থানার নেতারা যা ইচ্ছে,তাই করবে এটা মেনে নেওয়া হবে না। তবে এ বিষয়ে বার বার যোগাযোগ করেও ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের কোনো বক্তব্যে পাওয়া যায়নি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণের ৬১ নম্বর ওয়ার্ড কদমতলী থানা এবং ৬৪ নম্বর ওয়ার্ড ডেমরা থানার অধীনে। এ দুটি ওয়ার্ডেই সম্মেলন হয়েছে। আবারও আগামী ১৩ অক্টোবর এই দুই ওয়ার্ডের সম্মেলন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে যাত্রাবাড়ী থানা। দুই ওয়ার্ডে দুই দুইবার সম্মেলন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে নেতাকর্মীরা। স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, ভেঙ্গে পড়েছে সংগঠনের চেন অব কমান্ড। দলের গঠনতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নেতারা যে যার মতো ইচ্ছে স্বাধীন সংগঠন পরিচালনা করছেন। এর আগে সম্মেলনের তারিখ দিয়েও নেতাদের কোন্দলের কারণে সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ্যে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে কেন্দ্র থেকে শোকজ পেয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন কী হচ্ছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগে!
ডেমরা-যাত্রবাড়ী ও কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,দুই ওয়ার্ড নিয়ে যাত্রাবাড়ী থানার টানাটানির মূলে রয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন। ডেমরা-যাত্রাবাড়ী থানা এবং কদমতলী থানার ৬১ নম্বর ওয়ার্ডের আংশিক নিয়ে ঢাকা-৫ আসন। বর্তমানে এ আসনের এমপি কাজী মনিরুল হক মনু। যাত্রাবাড়ী থেকে এ আসনে নৌকা পেতে চান যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ মুন্নাসহ একাধিকজন। ওয়ার্ড নেতাদের সঙ্গে রাখতেই মুন্নার ইচ্ছেতে ৬৪ ও ৬১ নম্বর ওয়ার্ডে দুইবার সম্মেলন হচ্ছে বলে দাবি একাধিক নেতার। এক ওয়ার্ডে দুইবার কেন সম্মেলন এ প্রসঙ্গে হারুনুর রশিদ মুন্না বলেন, জনসংখ্যার ভিত্তিতে ৬১ ও ৬৪ নম্বর ওয়ার্ড যাত্রাবাড়ী থানার অংশ। সে কারণেই আমরা সম্মেলনের তারিখ দিয়েছি। আগে সম্মেলন হয়েছে ঠিক, কমিটি হয়নি। আবার এখন যে সম্মেলন করা হবে সেটাতেও কিন্তু কমিটি দেওয়া হবে না। যখন কমিটি গঠন করা হবে তখন বিষয়টি মহানগর ও কেন্দ্র সমন্বয়ন করবেন।
ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, এক ওয়ার্ডে একাধিকবার সম্মেলন করার কোন দরকার নেই। ওয়ার্ডের সাংগঠনিক সীমানা নিয়ে কোন জটিলতা থাকলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সেটাকে নিয়ে সলিশন দিতে পারেন। কিন্তু থানা বা ওয়ার্ড নেতারা এর সমাধাণ করতে পারবে না।
জানা যায়, ৬১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে কদমতলী থানাধীন এবং ৬৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে ডেমরা থানার অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রে ওই দু’টি ওয়ার্ডেও কিছু অংশ এলাকা যাত্রাবাড়ী থানাধীন হলেও দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েই ইতোপূর্বে সম্মেলন শেষ করা হয়েছে। তবে সদ্য অনুষ্ঠিত ৬১ ও ৬৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠিত সম্মেলনের পর আবারও ওই দু’টি ওয়ার্ডের সম্মেলন হতে যাচ্ছে আগামী ১৩ অক্টোবর যাত্রাবাড়িতে। বিষয়টি দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় নেতারা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য নৌকার প্রার্থী ওয়ার্ড নেতাদের সাথে রেখে তাঁর পাল্লা ভারী করতেই দুইবার করে ওয়ার্ড সম্মেলন করছেন। এতে যারাই নেতা হবেন তাদেরকে বোঝাতে সক্ষম হবেন, উনিই তাদেরকে নেতা বানিয়েছেন। সুতরাং সংসদ নির্বাচনেও তার পক্ষে তারা থাকবেন।