Home জাতীয় ঢাকা-বরিশাল নৌরুট: লোকসানেও যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন লঞ্চ

ঢাকা-বরিশাল নৌরুট: লোকসানেও যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন লঞ্চ

50

ডেস্ক রিপোর্ট: ভাড়া কমানোর কথা বললেই লোকসানের অজুহাত দেন ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের লঞ্চ মালিকরা। মহামারি করোনার মধ্যে নানা আন্দোলন-সংগ্রাম করে দুই দফায় বাড়িয়েছেন লঞ্চ ভাড়া। তারপরও লঞ্চের যাত্রীসেবা নিয়ে প্রশ্ন তুললে লাঞ্ছিত হতে হয়। আর লঞ্চ মালিকরা এমন একটা ভাব দেখান-তারা যেন বাড়িঘরের জায়গা-জমি বিক্রি করে এই সার্ভিস দিচ্ছেন। এভাবে লোকসানের রুট হিসাবে প্রমাণ করা ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে প্রতিবছরই তিন-চারটি করে নতুন লঞ্চ নামাচ্ছেন তারা। প্রশ্ন উঠেছে, কেবলই লোকসানের রুটে মালিকরা কেন এভাবে একের পর এক বিলাসবহুল অত্যাধুনিক লঞ্চের সমাহার ঘটাচ্ছেন। লোকসানের কথা বলে যাত্রী ভাড়া বাড়ানো রুটে একের পর এক নতুন লঞ্চ নামালেও সেই তুলনায় যাত্রীসেবার মান বলতে কিছু নেই। ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে লঞ্চের নিরাপত্তাব্যবস্থা অপ্রতুল। যার প্রমাণ একের পর এক নৌদুর্ঘটনা ও অগ্নিকাণ্ডে লঞ্চবোঝাই যাত্রী পুড়ে অঙ্গার হওয়ার ঘটনা।

জানা যায়, ঢাকা-বরিশাল নৌপথের তিন-চারতলাবিশিষ্ট লঞ্চে লিফট, এয়ারকন্ডিশন, টিভি, ফ্রিজ, সোফাসহ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি যুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি বর্ণিল আলোকসজ্জায় মুগ্ধ হতে হয় যে কাউকে। কিন্তু ওপরটা ফিটফাট থাকলেও ভেতরটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যাত্রী ও সচেতন মহল। বয়া, বাতি, বিকন, লাইফ জ্যাকেট, অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা থাকার কথা থাকলেও সব লঞ্চে তা নেই বলে অভিযোগ যাত্রীদের। যার সবশেষ সংযোজন ঝালকাঠিতে শতাধিক মানুষ হতাহতের ঘটনা। এর পেছনে সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করলেন বরিশাল বিভাগের ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া।

বছর দুয়েক আগে একটি লঞ্চের ছাদের, যেখানে ছুরিকাঘাতে মারা যাওয়া যুবকের লাশ মিলছে, তার পাশেই নৌ-নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের কক্ষ। সেই কক্ষটিও টাকার বিনিময়ে যাত্রীদের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, সার্ভের সময় আনসার সদস্যদের থাকার বিষয়টি লঞ্চ মালিকরা নিশ্চিত করছেন। কিন্তু বাস্তবে অপেশাদার কর্মীদের দিয়ে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। তাই প্রায়ই লঞ্চে দুর্ঘটনা ঘটছে।

লোকসানের অজুহাত লঞ্চ মালিকদের দীর্ঘদিনের। কিন্তু তাতে থেমে নেই নতুন লঞ্চ আগমনে। সর্বশেষ এই রুটে যুক্ত হয়েছে এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০। এর আগে সুন্দরবন কোম্পানির একটি, সুরভীর একটি যুক্ত হয়েছে।

নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়েই প্রতিদিন রাতে বরিশাল-ঢাকা রুটের ১৫০ কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দিচ্ছেন কয়েক হাজার যাত্রী। এ কারণেই যাত্রী লঞ্চ থেকে নদীতে ঝাঁপ দিচ্ছেন, আর কেবিনের যাত্রীদের খুন হতে হচ্ছে। প্রায়ই অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে যাত্রীরা।

সর্বশেষ কীর্তনখোলা লঞ্চে ৫ মার্চ অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পরে এক যাত্রী। লঞ্চ কর্তৃপক্ষ তাকে উদ্ধার করে নৌপুলিশের কাছে হস্তান্তর ও পরিবারকে জানায়। জনস্বার্থ রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মানুওয়ারুল ইসলাম অলি বলেন, লঞ্চের মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টি, ছিনতাইকারীদের তৎপরতা এখনো রয়েছে।

লঞ্চগুলো হাজার হাজার যাত্রী নিয়ে দীর্ঘ ১৫০ কিলোমিটার নৌপথ পাড়ি দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়াই। যাত্রাপথে লঞ্চযাত্রীদের ঝুঁকি দিনদিন বেড়েই যাচ্ছে। আর লোকসানের কথা বলে শুধু যাত্রী ভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যাত্রী পরিবহণ) সংস্থার পরিচালক ও কীর্তনখোলা লঞ্চ মালিক মনজুরুল আহসান ফেরদৌস বলেন, প্রতিটি লঞ্চে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। মাইকিং করে নানা সতর্ক বার্তা যাত্রীদের দেওয়া হয়। যাত্রীদের সেবা দিতেই আমরা নানা সুযোগ-সুবিধা দিই। বি

আইডব্লিউটিএ বরিশাল বন্দর ও পরিবহণ বিভাগের উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যাত্রীসেবা নিশ্চিতকরণে আমাদের তদারকি অব্যাহত আছে। নৌপরিবহণ অধিদপ্তর সার্ভে রিপোর্ট দেয়। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই আমরা লঞ্চগুলোকে রুট পারমিট (টাইম) দিয়ে থাকি। তবে সেই সার্ভে রিপোর্টে যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য লাইফ বয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। একসময় যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য অস্ত্রধারী আনসার সদস্যদের রাখা হতো। এখন মালিকরা নিজস্ব কর্মীবাহিনীর মাধ্যমে নিরাপত্তা দিচ্ছেন।-যুগান্তর