Home জাতীয় সবধরণের শিশুশ্রম বন্ধে সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে : মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান

সবধরণের শিশুশ্রম বন্ধে সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে : মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান

66

স্টাফ রিপোটার: সবধরণের শিশুশ্রম বন্ধে সম্মিলিত ভাবে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, দেশে ৪০ শতাংশ শিশু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের প্রতিনিয়ত মারধরসহ নানাধরণের নিপীড়ন সহ্য করতে হচ্ছে। শিশুশ্রম বিশ্বের কোথাও গ্রহনযোগ্য নয়। তাই শিশুশ্রম বন্ধ করে শিশুদের মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।
আজ সোমবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সম্মেলন কক্ষে ‘ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের তালিকায় গৃহকর্ম অন্তর্ভূক্তকরণের অগ্রগতি ও আইনী বাস্তবতা’ শীর্ষক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন তিনি। উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি), শাপলা নীড় ও এডুকো-বাংলাদেশ আয়োজিত সংলাপে সভাপতিত্ব করেন এএসডি’র নির্বাহী পরিচালক এম এ করিম। আলোচনায় অংশ নেন মানবাধিকার কমিশনের সচিব নারায়ণ চন্দ্র সরকার, মানবাধিকার কমিশনের সদস্য মো. সেলিম রেজা ও রবিউল ইসলাম, শাপলা নীড়ের কান্ট্রি ডিরেক্টর তমকো উচিয়ামা, শিশু অধিকার ফোরামের সভাপতি মো. মাহবুবুল হক, কন্যাশিশু এডভোকেসি ফোরাম সেক্রেটারি নাসিমা আক্তার জলি, ইউনিসেফের চাইল্ড প্রোটেকশন স্পেশালিস্ট শাবনাজ জাহেরিন, সিনিয়র সাংবাদিক মোহসিনুল করিম, এডুকোর ম্যানেজার আফজাল কবির খান, স্ক্যানের মো. আফতাবুজ্জামান, গৃহকর্ম কাজে নিয়োজিত শিশু তানজিলা ও আফসারা, এএসডি’র হামিদুর রহমান ও ফিরোজা আক্তার রুপা প্রমূখ। সংলাপে মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ সরফুদ্দিন খান।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ড. কামাল উদ্দিন বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে সকল ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন করা হবে। এই জন্য শিশুশ্রমকে নিষিদ্ধির তালিকা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি শিশু নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু শিশুদের সঠিক পরিসংখ্যান নেই। সরকারের কাছে এই সংক্রান্ত অসংগতিগুলো জানালেও কোন ফল হয়নি। সকলে মিলে একসাথে কাজ করলে শিশুদের অধিকার রক্ষা করার সহজ হবে। মানবাধিকার কমিশন শিশুশ্রম বন্ধে সোচ্চার এবং কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সংলাপে উত্থাপিত প্রবন্ধে বলা হয়েছে, জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি অনুযায়ী, ২০১৩ সালে শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এই তালিকায় ৩৮টি কাজকে শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সম্প্রতি আরো ৫টি কাজ তালিকায় যুক্ত হলেও সেখানে গৃহকর্মকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। অথচ দেশে কর্মরত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সংস্থা এবং জাতিসংঘের বিশেষায়িত শিশু অধিকার সংস্থাসমূহ গৃহকর্মকে শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছে।
প্রবন্ধে আরো বলা হয়েছে, গৃহকর্মী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ব্যতীত শিশু গৃহকর্মীদের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। ইতিমধ্যেই গৃহকর্মী সুরক্ষা আইনের একটি খসড়া তৈরী করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে আপাততঃ ১৪ বৎসর বয়সের নীচে কোন শিশুকে যাতে গৃহকর্মে নিয়োগ দিতে না পারে সে বিষয়ে বিশেষ বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনার মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে খসড়া আইনটি চূড়ান্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে প্রবন্ধে।
গৃহকর্মে নিয়োজিত লক্ষ লক্ষ শিশুদের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান সংলাপের সভাপতি এম এ করিম। তিনি বলেন, শিশুশ্রম আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই। শিশুশ্রম বন্ধ করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। শিল্পকারাখানা বা বাসাবাড়িতে যারা স্বল্প মজুরিতে লেবার হিসেবে শিশুদের কাজ দিচ্ছে, তাদেরকে সচেতন করতে হবে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সুরক্ষা ও টেকসই উন্নয়ন এসডিজি (লক্ষ্যমাত্রা) অর্জনে স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। শিশুবিষয়ক অধিদফতর গঠনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।
মানবাধিকার কমিশনের সদস্য সেলিম রেজা বলেন, গৃহকর্ম কাজকে নিষিদ্ধ করার সময় চলে এসেছে। কারণ এটা এক ধরনের দাসত্ব।বিশেষ করে বাসাবাড়িতে শিশুদের কাজ এক ধরণের অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে বাতিল করার সুপারিশ করা হবে। তাই আলাদা গৃহকর্মী সুরক্ষা আইন করা যেতে পারে।
সরকারিভাবে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুদের তালিকা প্রকাশের দাবি জানান বক্তারা। তারা শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান ও মানবিক মর্যাদা নিয়ে বেড়ে উঠা নিশ্চিত করতে সরকার সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতনতার সঙ্গে এগিয়ে আসার আহবান জানান।