Home জাতীয় ঢাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় অভিমুখে চার সংগঠনে বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের বাধা

ঢাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় অভিমুখে চার সংগঠনে বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের বাধা

51

বান্দরবানে বম জাতিসত্তার ৮ জনকে ঠান্ডা মাথায় হত্যার অভিযোগ

ডেস্ক রিপোর্ট: ইউপিডএফ সংগঠক মাইকেল চাকমা গুমের ৪ বছর উপলক্ষে ঢাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় অভিমূখে বিক্ষোভ মিছিল ও রাজু ভাস্কর্য পাদদেশে সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামে সক্রিয় চারটি সংগঠন ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউডব্লিউডিএফ), বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ) ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ)।

বিক্ষোভ মিছিলের পূর্বে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে বক্তারা এ রাষ্ট্র ৪ বছরেও গুমের শিকার মাইকেল চাকমার সন্ধান দিতে না পারায় নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং অবিলম্বে মাইকেল চাকমার সন্ধান দেয়ার দাবি জানান। এছাড়া বক্তারা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়িতে বম জাতিসত্তার ৮ গ্রামবাসীকে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তারা অবিলম্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত খুনীদের গ্রেফতারপূর্বক শাস্তি প্রদান, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সারাদেশে খুন-অপহরণ-গুম-ধর্ষণ, নির্বিচারে ধরপাকড়সহ মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করার দাবি করেছেন।

আজ রবিবার (৯ এপ্রিল ২০২৩) সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যে অনুষ্ঠিত সমাবেশে ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রমোদ জ্যোতি চাকমার সভাপতিত্বে ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পাঠচক্র ফোরামের সদস্য বেলাল চৌধূরী, নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চার কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বিপ্লব ভট্টাচার্য, মায়ের ডাক’র আহ্বায়ক ও গুম হাওয়ার ব্যক্তি সুমনের বড় বোন আফরোজা ইসলাম আখি, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ছায়দুল হক নিশান, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা।

এসময় সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন লেখক রেহেনুমা আহম্মেদ, লেখক ও অনুবাদক ওমর তারেক চৌধূরী, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটভূক্ত ছাত্র সংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক দীলিপ রায়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রগতি বর্মন তমা। এছাড়াও সংহতি জানিয়েছিলেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে সাবেক অধ্যাপক মেঘনা গুহঠাকুরতা, জাহাঙ্গীর নগর বিশ^বিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার হারুনুর রশিদ, গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটভুক্ত ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের নজির আহম্মেদ জয়, বাংলাদেশ ছাত্র-যুব আন্দোলনের তাওফিকা প্রিয়া প্রমুখ।

সমাবেশে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন, মাইকেল চাকমাকে ফিরে পেতে সংগঠনগুলো মানবাধিকার কমিশনসহ সরকারের সকল এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করেছে। পুলিশ প্রথম দিকে মাইকেল চাকমার সন্ধানে উদ্যোগ নিলেও অজ্ঞাত কারণে তারা নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। আমরা সর্বশেষ কচুক্ষেত এলাকায় মাইকেল চাকমার অবস্থান সম্পর্কে জেনেছিলাম।
তিনি বলেন, সরকার বিরোধী মত ও দল দমনের জন্য গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যা, আটক অবস্থায় নির্যাতন, গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা দিয়ে জনগণের কণ্ঠস্বরকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ বিভিন্ন নিবর্তনমূলক আইন দিয়ে তারা মানুষের কণ্ঠকে চেপে রাখার চেষ্টা করছে।

তিনি আরো বলেন, এই সরকারের মন্ত্রীরা জনগণকে ধোঁকা দেয়ার জন্য প্রকাশ্যে বলছে বাংলাদেশে কোন গুম নেই। কিন্তু জনগণ জানি, পরিবারগুলো জানে, সংগঠনগুলো জানে কীভাবে মানুষ গুম করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা ১৯৭১ সালে দেখেছি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কিভাবে গুম করেছিলো, বাড়ি থেকে তুলে নিয়েছিলো। আমরা দেখেছি ’৭২ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত রক্ষী বাহিনী কিভাবে গুম করেছিলো। সে সব ঘটনার কথা আমরা ভুলে যায়নি।

বর্তমান রাষ্ট্র নিপীড়ন হিসেবে হাজির হয়েছে উল্লেখ করে ফয়জুল হাকিম বলেন, আজকে শুধু বাংলাদেশের মানুষ নয়, দুনিয়ার বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে এই গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যার খবর প্রকাশিত হচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণের ওপর এই সরকার কী পরিমাণ নিপীড়ন চালাচ্ছে তা আজ কোন অজানা বিষয় নয়।

তিনি বলেন, মাইকেল চাকমাকে গুম করার কারণ হচ্ছে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশের জাতিসত্তার জনগণ, কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের মুক্তির জন্য, গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিগত নিপীড়ন চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে অঘোষিত সেনাশাসন চলছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১১ দফা নির্দেশনা দিয়ে কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা রূপক চাকমা, অনিমেষ চাকমা, মিঠুন চাকমাকে হারিয়েছি, যাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, আজকে মাইকেল চাকমা গুমের শিকার হয়েছেন। তার বাবা তাকে দেখতে না পেয়ে মারা গেছেন। তার বোন যিনি কোনদিন রাজধানী ঢাকায় আসেননি তিনি ঢাকায় এসে মাইকেল চাকমাকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। আজকে গুম হওয়া ব্যক্তিদের মায়েরা, বোনেরা সংগ্রাম করছেন। বাংলাদেশের মানুষ এই নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে মুক্তি চায়। এই মুক্তির একমাত্র পথ হচ্ছে প্রতিরোধ। এছাড়া এই নিপীড়ন থেকে মুক্তির কোন পথ নেই।

এই ফ্যাসিবাদী সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে পাহাড় ও সমতলের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জনগণের সরকার ছাড়া, জনগণের রাষ্ট্র ছাড়া, জনগণের কাছে জবাবদিহিতা প্রশাসন ছাড়া জনগণের কোন মুক্তি নেই।

তিনি বলেন, আমরা যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছিলাম, অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজকে বাঙলাদেশের দুর্নীতিবাজ শাসকশ্রেণী এই রাষ্ট্রকে লুটেরাদের রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। জগণের কন্ঠকে রোধ করার জন্য, রাজনৈতিকভাবে জনগণকে পরাধীন করার জন্য নানা রকম কালো আইন করা হচ্ছে। ধর্মঘট নিষিদ্ধ করতে সরকার জাতীয় সংসদে বিল উত্থাপন করেছে। যাতে এদেশের শ্রমিক ও পেশাজীবীরা তাদের নিজেদের দাবি আদায়ে ধর্মঘটে যেতে না পারে।

তিনি দেশে লুটপাট, কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার, দ্রব্যমূল্যর উর্ধ্বগতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলো সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি মাইকেল চাকমাসহ গুম হওয়া ব্যক্তিদের সুস্থ দেহে পরিবারের নিকট ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, নিপীড়ন-নির্যাতন করে জনগণের আন্দোলন দমন করা যায় না। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে কেউই দমন করতে পারে না, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ন্যায়সঙ্গত।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, মাইকেল চাকমা অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের যে ন্যায়সঙ্গত পতাকা উর্ধ্বে তুলে ধরেছেন সেই পতাকাকে নিশ্চয় এদেশের শ্রমিক, কৃষক, জাতিসত্তার জনগণ এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান, রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন নিশ্চয় সফল হবে।

বান্দরবান রোয়াংছড়িতে বম জাতিসত্তার ৮ জনকে হত্যার ঘটনা পরিকল্পিত উল্লেখ করে পিসিপি নেতা অঙ্কন চাকমা বলেন, রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে বম জাতিসত্তার ৮ জন গ্রামবাসীকে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে। সেনাবাহিনী মদদপুষ্ট ঠ্যাঙারে গ্রুপ নব্য মুখোশ ও সংস্কারপন্থী সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিগত বিভেদ সৃষ্টি করে দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাচ্ছে। পাহাড়ে ছাত্র-যুব-জনতা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, পাহাড়ি জনগণের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব-সংঘাত লাগিয়ে দিয়ে হত্যালীলায় মেতে উঠবেন না, এ সকল ষড়যন্ত্র বন্ধ করুন। আগামীতে পাহাড়ে কোন কিছু হলে এর সম্পূর্ণ দায় এই রাষ্ট্র ও সরকারকে নিতে হবে।

তিনি বলেন, বান্দরবান হত্যাকাণ্ডের আগে সন্ত্রাসীরা প্রথমে বমদের গ্রাম ঘেরাও করে ফাঁকা গুলি করে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছিল। পরে সেখান থেকে ২২ জন বমকে অপহরণ করে পরে সেখান থেকে ১৫ জনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও বাকীদের “দু’পক্ষো গোলাগুলি”র নাটক সাঁজিয়ে নৃশংসকভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা বান্দরবানে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং অবিলম্বে নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

সমাবেশে বেলাল চৌধুরী বলেন, একজন বলিষ্ট রাজনৈতিক সংগঠক, নিপীড়িত জাতিসত্তার প্রতিনিধি মাইকেল চাকমাকে আজ থেকে ৪ বছর আগে গুম করা হয়েছিল। এ ঘটনার আগে ও পরে বাংলাদেশে আরো অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছেন, অসংখ্য মানুষকে নিজেদের বাড়ি থেকে, রাস্তাঘাট থেকে, সভা-সমাবেশ থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। কেউ কেউ ফিরে আসলেও এখনো অসংখ্য মানুষের কোন হদিস পাওয়া যায়নি। তারা ফিরে আসেননি স্বজনদের কাছে।

গোটা বাংলাদেশ এখন একটা বৃহৎ আকারের কারাগারে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাতের অন্ধকারে, ভোররাতে মানুষকে তুলে নেয়া হয়। কিন্তু সরকার স্বীকার করে না, পুলিশ স্বীকার করে না, র‌্যাব স্বীকার করে না। মাত্র কয়েকদিন আগে প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে তার বাসা থেকে তুলে নেয়া হয়েছিল। এরপর ৩০ ঘটনা তার কোন হদিস পাওয়া যায়নি। পুলিশ স্বীকার করেনি, সরকারের কোন এজেন্সি তাকে গ্রেফতার কথা স্বীকার করেনি। ৩০ ঘন্টা পর তাকে আদালতে পাঠানো হয়, এরপর তাকে পাঠানো হয় কারাগারে। এ রকম ঘটনা প্রতিদিন প্রায় ঘটছে। শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, বাংলাদেশের প্রান্তে প্রান্তে এ রকম জুলুম, নিপীড়ন, হত্যা, মামলা দিয়ে জনগণের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদী আক্রমন চলছে।

তিনি বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় এসে এখন ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার প্রতিবাদী জনগণের উপর অত্যাচার, নির্যাতন পরিচালনা করছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। মানুষ যেন প্রতিবাদ করতে না পারে, যেন সংগঠিত হতে না পারে, যাতে আন্দোলনমুখর হতে না পারে সেজন্য জনগণের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদী মানুষের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর পাশাপাশি সরকারি ছাত্র সংগঠন, যুব সংগঠনের মাস্তানদের লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। গত দেড় দশক ধরে বাংলাদেশেরম মানুষের ওপর এমন নিপীড়ন চলছে।
তিনি বলেন, পাহাড়-সমতলে, শহরে-বন্দরে, কারখানায়, ক্ষেত-খামারে সর্বত্র সংগঠিত হতে হবে। এই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে, শোষণ-নির্যাতন-জুলুমের বিরুদ্ধে শোষিত, নিপীড়িত মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ ছাড়া আর কোন পথ নেই।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র নির্বাচন দিয়ে মানুষের মুক্তি আসবে না। জনগণের অধিকার যদি অর্জিত না হয়, শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজ যদি প্রতিষ্ঠিত না হয় তাহলে শুধুমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার হাতবদলে মানুষের মুক্তি নেই। বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ, পাহাড়-সমতলের নিপীড়িত জনগণকে ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত হয়ে চূড়ান্ত মুক্তির লক্ষ্যে আন্দোলনের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করার জন্য তিনি আহ্বান জানান।

মায়ের ডাকের আহ্বায়ক আফরোজা ইসলাম আখি বলেন, দেশে স্বাধীনভাবে চলা, কথা বলার জন্য আমরা একটা পরিবেশ তৈরি করতে চাই। সরকার বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের স্বজনদেরকে গুম করেছে। শুধুমাত্র বিরোধী দল ও বিরোধী মত প্রকাশ করার কারণে তাদের কণ্ঠরোধ করে দেশে সন্ত্রাসবাদ চালু রাখার জন্য এসব লোকজনকে গুম করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকার গুম করেও ক্ষান্ত না হয়ে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানি করছে। আমরা যেন প্রতিবাদ করতে না পারি, আমাদেরকে ভয় দেখিয়ে নিবৃত্ত করতে চাচ্ছে সরকার।

তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, সরকার ভয় দেখিয়ে আমাদেরকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। আমাদের স্পষ্ট দাবি র্যাব, পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক যাদের তুলে নেয়া হয়েছে তাদেরকে ফিরিয়ে দিতে হবে।

নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চা নেতা বিপ্লব ভট্টাচার্য বলেন, আমরা ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে মাইকেল চাকমাকে খোঁজ করেছিলাম। আজকে ৪ বছরেও তার খোঁজ আমরা পাইনি। এর আগে ইউপিডিএফ নেতা মিঠুন চাকমাকে হত্যা করা হয়েছে। তারও আগে কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করে গুম করা হয়েছিল।

তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের ভয়াবহ পরিস্থতি তুলে ধরে বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের আহ্বানে আমরা ঢাকা থেকে প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলো পাহাড়ে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে যে আমরা ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলাম। যে বাঙালিরা সমতলে বাস করেন তারা আন্দাজও করতে পারবে না ওই পার্বত্য চট্টগ্রামে কী পরিমাণ নির্যাতন হয়। সে সময় আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কোন একটা জায়গায় বেশিক্ষণ থাকতে পারিনি। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সমাবেশ খুব সংক্ষিপ্তভাবে শেষ করতে হয়। কালো পোশাকধারী র‌্যাবের বাহিনী ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পিছনে তাড়া করছিল। আমরা যেখানে নিরাপত্তার জন্য শেল্টার নিয়েছিলাম সেখানেও নিরাপদে থাকতে পারিনি।

তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের সত্য ঘটনাগুলো আড়াল করা হয় উল্লেখ করে বলেন, দেশের পত্রিকাগুলো মিথ্যার ফুলঝুরি দিয়ে সেখানকার সত্যকে আড়াল করে রাখে। এ সমাজে এখন মিথ্যাটাই হয়ে গেছে সত্য। তিনি সেখান যাদেরকে সম্ভাবনাময়ী মনে করা হয় তাদের টার্গেট কিলিং করা হয় বলে অভিযোগ করেন।

সমাবেশে শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, দোয়েল চত্ত্বর হয়ে হাইকোর্ট সামনে শিক্ষা অধিকার চত্ত্বরে পৌঁছলে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে বাধা সৃষ্টি করে। এ সময় মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা ব্যারিকেড ভেঙ্গে সামনে এগোতে চাইলে পুলিশ সাথে ধস্তাধস্তি হয়। প্রায় ১৫-২০ মিনিট ধস্তাধস্তির পরে সেখান থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবে গিয়ে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে মিছিলটি শেষ হয়।