স্টাফ রিপোটার : ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী আইআরজিসি’র কুদস ফোর্সের সাবেক প্রধান লে. জেনারেল কাসেম সোলায়মানির চতুর্থ শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকাস্থ ইরান দূতাবাসের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মিলনায়তনে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘জেনারেল সোলায়মানি : সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বিশ্ববীর’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ রেযা মীরমোহাম্মাদীর সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. তৌহিদুল ইসলাম।ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত এই সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দৈনিক ইনকিলাবের সহকারি সম্পাদক জনাব জামালউদ্দিন বারী।আর অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, লে. জেনারেল কাসেম সোলায়মানি ছিলেন অত্যন্ত সাহসী ও বিচক্ষণ সমরবিদ। তিনি কখনো মত্যুকে ভয় পেতেন না। তাকে বলা হতো জীবন্ত শহীদ। তারমতো এমন সমরবিদ এই সময়ে মুসলিম বিশ্বে আর দ্বিতীয়টি নেই । গেরিলাযুদ্ধ কাকে বলে তা তিনি বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন। আজকে ফিলিস্তিনের হামাস ও লেবাননের হিজবুল্লাহর যে শক্তিমত্তা আপনার লক্ষ্য করছেন তার পেছনে মূল শক্তি যোগিয়েছে শহীদ জেনারেল কাসেম সোলায়মানি।

সেমিনারের সভাপতি ঢাকাস্থ ইরান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কালচারাল কাউন্সেলর সাইয়্যেদ রেযা মীরমোহাম্মাদী বলেন, লে. জেনারেল কাসেম সোলায়মানি ছিলেন একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান একজন মানুষ।তিনি যা কিছু করেছেন তা কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করেছেন। যে কারণে আল্লাহ তাকে এতো বড় করেছেন।তিনি আল্লাহর দিনকে রক্ষার জন্য অস্ত্র ধরেছেন।তিনি ছিলেন অত্যন্ত সাহসী, বিচক্ষণ, প্রজ্ঞাবান ও কৌশলী সমরবিদ। সন্ত্রাসী আই এস এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিনি যে কৌশল ও বিরত্ব দেখিয়েছেন এবং আইএস নির্মূলে যে অবদান রেখেছেন তা বিশ্বের সকল সমরবিদকে অবাক করে দিয়েছে।

বিশেষ অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, জেনারেল কাসেম সোলাইমানি একজন কৌশলী সমরবিদ ছিলেন। ইরান-ইরাক যুদ্ধে গৌরবজনক ভূমিকা পালনের পর থেকে তাঁর ক্রামান্বয়ে উত্থান হতে থাকে । ধীরে ধীরে তিনি একজন মহাসমরনায়ক হিসেবে আবির্ভূত হন। ১৯৯৮ সালের পর থেকে তিনি কুদ্স ব্রিগেডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শুরু করেন। তিনি দেশের বাইরেই বিভিন্ন ফ্রন্টে ব্যস্ত থাকতেন বেশি। বিশ্বের বড় বড় জেনারেল তাঁকে বিভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করেছেন এবং তাঁর কৌশলগত অতুলনীয় সক্ষমতাকে স্বীকার করেছেন।

সেমিনারের প্রবন্ধকার দৈনিক ইনকিলাবের সহকারি সম্পাদক জনাব জামালউদ্দিন বারী বলেন, বলেন, জেনারেল কাসেম সোলায়মানি ছিলেন তার সময়কালে দুনিয়ার এক নম্বর জেনারেল। মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাস নির্মূল ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। জেনারেল সোলায়মানি শুধু প্রতিরোধ বাহিনীর গাইড লাইনই দেননি, নিজের উন্নত চিন্তা, ইমানি জজবা এবং অকুতোভয় সংগ্রামী চেতনাকে তার নির্দেশিত প্রতিটি বাহিনীর যোদ্ধাদের মধ্যে উজ্জীবিত করতেও সক্ষম হয়েছেন। এটিই বিশ্বের অন্য সব সামরিক কমান্ডারদের সাথে জেনারেল কাসেম সুলাইমানির বড় পার্থক্য টেনে দেয়।
তিনি আরো বলেন, জেনারেল সুলাইমানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৃতিত্ব হচ্ছে, তিনি মধ্যপ্রাচ্যের বিবদমান মুজাহিদ গ্রুপগুলোকে আইএস বিরোধী যুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।পশ্চিমা সমরশক্তি ও গতানুগতিক যুদ্ধ কৌশলকে ব্যর্থ করে দিতে এটাই সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছে। বিশ্বের এক নম্বর জেনারেল ও সমরবিদ কাসেম সুলাইমানির মধ্যে যে অসামান্য দূরদৃষ্টি, উচ্চতর মনুষ্যত্ববোধ, আধ্যাত্মিক চেতনা ও নিরলস কর্মবীরের গুণাবলির সন্নিবেশ ঘটেছিল, তা মধ্যপ্রাচ্যের জায়নবাদবিরোধী প্রতিটি মুক্তিকামী সৈনিকের মধ্যে পরশ পাথরের মতো প্রভাব সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে।