Home জাতীয় ঢাকার পঙ্গু ভিক্ষুকদের ৮২% সড়ক দুর্ঘটনার শিকার

ঢাকার পঙ্গু ভিক্ষুকদের ৮২% সড়ক দুর্ঘটনার শিকার

37

ডেস্ক রিপোর্ট: মাস ছয়েক আগের কথা। এক সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের সদর এলাকায় রিকশা চালিয়ে যাচ্ছিলেন আব্দুল সামাদ। পেছন থেকে বাস এসে ধাক্কা দেয় তাঁর রিকশায়। চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় আসেন, কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলতে হলো ডান পা। সামাদ এখন রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার আনন্দ সিনেমা হলের পেছনে ফুট ওভারব্রিজের নিচে ভিক্ষা করেন। রাতে থাকেন ফার্মভিউ সুপারমার্কেটের নিচে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক জরিপের তথ্য বলছে, ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে সামাদের মতো ভিক্ষা করছে এমন মানুষের মধ্যে ৮২.৫৩ শতাংশ ভিক্ষুক সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়েছে। তার চেয়ে বড় কথা, এই পঙ্গু ভিক্ষুকদের ৩২.৬৯ শতাংশ আগে পরিবহন শ্রমিক ছিল।

আব্দুল সামাদের মতো দুর্ঘটনার শিকার হওয়া ব্যক্তি বা তাঁদের পরিবারের মানুষকে স্মরণ করতে আজ পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তের স্মরণে দিবস’। প্রতিবছর নভেম্বরের তৃতীয় রবিবার দিবসটি পালন করা হয়।

সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করতে ব্রিটিশ রেড ক্রস ‘রোড পিস’ নামের একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান চালু করে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ব্রিজিত চৌধুরী দিবসটি প্রবর্তন করেন। ১৯৯৩ সাল থেকে বিশ্বের ৩০টি দেশে দিনটি পালিত হয়ে আসছে। ধাপে ধাপে ‘ইউরোপিয়ান ফেডারেশন অব রোড ট্রাফিক ভিকটিমস’, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতিসংঘ দিনটির স্বীকৃতি দেয়।

তবে বাংলাদেশে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনগুলো জানিয়েছে যে তারা কখনো দিবসটি পালন করেনি। সড়ক নিরাপত্তার মৌলিক বিষয় নিয়েই তাদের সব কাজ।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের জরিপে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় ৬৩ জন পঙ্গু ভিক্ষুকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। গত জুলাইয়ে জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। এই জরিপ বলছে, সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের ১৭.৩০ শতাংশ স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন চালানোর সময় দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়। ৪২.৩০ শতাংশ মোটরযানের যাত্রী হিসেবে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। আর আহতদের ৭.৬৯ শতাংশ পথচারী।

সড়ক দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের কথা কিছুদিন পর কেউ মনে রাখে না—এমন আক্ষেপ করে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, ‘প্রতিদিনই সড়কে মানুষ মরছে, পঙ্গু হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সরকারের পরিকল্পনাও কাজে আসছে না। সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা গেলেই সেটা পত্রিকার খবরে আসে। এর বাইরে প্রতিদিন কত মানুষ আহত হচ্ছে, দীর্ঘ সময়ে তারা পঙ্গু হচ্ছে, সেই খবর আমরা কেউ জানি না।’

দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের অনেকেরই নেই অর্থনৈতিক সচ্ছলতা। আব্দুল সামাদের টানাটানির সংসারে যেটুকু সঞ্চয় ছিল, সেটা তাঁর চিকিৎসার পেছনেই চলে যায়। এর পরও সামাদ সৌভাগ্যবান। প্রতি তিন মাস পর প্রতিবন্ধী ভাতা হিসেবে সরকারের কাছ থেকে দুই হাজার ৫০ টাকা করে পান তিনি। দুই মেয়ে, এক ছেলে নিয়ে পাঁচজনের সংসার তাঁর। বাকিরা সবাই গ্রামেই থাকে। ছেলেটা আগে স্কুলে পড়লেও এখন কাজে ঢুকেছে। ছেলের আয়ের সঙ্গে সামাদের ভাতা ও ভিক্ষার টাকা যোগ হয়েই তাঁর গ্রামের সংসার চলে।

রোড সেফটির জরিপে উঠে আসা তথ্য বলছে, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসার জন্য পারিবারিক সম্পত্তি বিক্রি করেছে ৬৫.৩৮ শতাংশ ভুক্তভোগী পরিবার। বিক্রি করার মতো তেমন সম্পত্তি ছিল না ৩৪.৬১ শতাংশ পরিবারের। দুর্ঘটনার পর মাত্র ১১.৫৩ শতাংশ ভুক্তভোগী পরিবহন শ্রমিক তাঁদের মালিকদের কাছ থেকে চিকিৎসার জন্য সামান্য সহযোগিতা পেয়েছেন। তবে কেউই মোটরযানের ত্রিপক্ষীয় ঝুঁকি বীমার মাধ্যমে কোনো আর্থিক সুবিধা পাননি।

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, প্রতিবছর ১২ থেকে ১৫ হাজার পরিবার সড়ক দুর্ঘটনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের পক্ষ থেকে সব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সাহায্য করা হচ্ছে না। তাদের দাবি সরকারের কানে পৌঁছাতে রাস্তায় নেমে চিৎকার করতে হবে। তা না হলে তাদের কথা কেউ শুনবে না।-আমাদের সময়.কম