Home মতামত ঝুঁকিরমুখে লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কি ‘কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড’!

ঝুঁকিরমুখে লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কি ‘কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড’!

58

আহমেদ জালাল : বরিশাল-ঢাকা নৌপথে দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর ধরে রোটেশন কৌশল চলে আসছে। এ নিয়ে বিগত সময়ে অনেক আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছিল। কিন্তু মালিকদের কৌশলীপন্থায় যাত্রীরা জিম্মি রয়েই গেছে। দেশের জনগুরুত্বপূর্ণ নৌরুটে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ রোটেশন প্রথা চালু রেখে যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে প্রতিদিন প্রয়োজনের তুলনায় কম লঞ্চ চলাচল করছে। এরফলে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে লঞ্চ সার্ভিস চালু রয়েছে। আর দুর্ঘটনায় নিয়মিত ঘটছে প্রাণহানি। এসব প্রাণহানিকে ‘কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বিভিন্ন সংগঠন। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে চলাচলরত লঞ্চ মালিকরা সুকৌশলে নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষকে নিয়ন্ত্রণে রেখে উপর্যুপরি মুনাফা লাভে ২০০২ সাল থেকে মালিকগণ লঞ্চচালনায় নিয়ন্ত্রণসুচী বা রটেশন পদ্ধতির সূচনা করেন। রোটেশন অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট দিনে শুধূ মাত্র একটি মালিকের লঞ্চ চলাচল করবে ফলে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝায় ও ভাড়া আদায় সাপেক্ষ মালিকগণ একচেটিয়া লঞ্চ চালনা করে থাকেন। ফলে যাত্রীরা ভিন্ন লঞ্চের প্রতিযোগীতার মাধ্যমে কম ভাড়া নির্ণয়ের সুযোগ হতে বঞ্চিত হয়ে পড়ছে এবং অনৈতিক বা চাপিয়ে দেওয়া নির্ধারিত ভাড়ায় যাতাওয়াত করতে যাত্রীরা বাধ্য। দেশের ঐতিহ্যগতভাবে নৌপথ একটি নিরাপদ ও সাশ্রয়ী এবং পরিববেশ ও দরিদ্রবান্ধব যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। কিন্তু নৌপরিবহন ব্যবস্থাপনায় অপেশাদারী এবং মুনাফাকেন্দ্রিক মনোভাব ও দুর্নীতির কারণে এই খাত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দেশে নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাওর মিলে সর্বমোট প্রায় ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌপথ রয়েছে। এই বিস্তৃত নৌপথে উপকূল, হাওর ও নদীতীরবর্তী জেলাসমূহের বসবাসরত দরিদ্র জনসাধারণ শিশু, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে দৈনন্দিন প্রয়োজনে প্রতিদিনই পারাপার হচেছ এবং তাদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এ অবস্থায় একদিকে নৌপথগুলোর উপর যেমন মানুষের চাপ বাড়ছে তেমনি ক্রমশ কমছে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, ব্যবস্থাপনা ও যথাযোথ আইনকানুনের প্রয়োগ। যার প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে বাড়ছে নৌদুর্ঘটনা; লঞ্চ, ট্রলার, কার্গো ডুবি এবং শত শত লোকের প্রাণহানী-এ এক প্রতিকারহীন খবর। দুর্ঘটনায় রয়েছে দীর্ঘ তালিকা! সদ্য ঘটে যাওয়া ঝালকাঠিতে সুগন্ধা নদীতে অভিযান-১০ নামের লঞ্চের অগ্নিদুর্ঘটনাই এর জলন্ত উদাহরণ।
সবচেয়ে বেশি লঞ্চ চলে ঢাকা-বরিশাল নৌপথে। এই পথে রুট পারমিট আছে ১৭টি লঞ্চের। মানে হলো, দিনে অন্তত আটটি করে লঞ্চ ঢাকা ও বরিশাল থেকে ছাড়বে। তবে ছাড়ে ছয় থেকে সাতটি লঞ্চ। দু-একটি অগুরুত্বপূর্ণ পথ ছাড়া বাকি রুটের কোনোটিতেই নির্ধারিত সংখ্যক লঞ্চ একই দিনে চলে না। যাত্রীদের অভিযোগ, মালিকদের এই রোটেশন প্রথা ও লঞ্চে ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী নেওয়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তাদের অজানা নয়। ঢাকা থেকে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া পথে চলার অনুমতি বা রুট পারমিট নেওয়া আছে নয়টি লঞ্চের। অর্থাৎ প্রতিদিন ঢাকা থেকে ভান্ডারিয়ার উদ্দেশে অন্তত চারটি লঞ্চ ছেড়ে যাবে। আর ভান্ডারিয়া থেকে চারটি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবে। কিন্তু ছেড়ে যায় আসলে দুটি করে লঞ্চ। মালিকদের এই কৌশলের নাম ‘রোটেশন’ প্রথা বা পালা করে চলাচল। এহেন অপকৌশলের উদ্দেশ্য-যে লঞ্চটি চলবে, সেটিতে গাদাগাদি করে যাত্রী নেওয়াা, প্রতিযোগিতার বদলে অনেকটা একচেটিয়া ব্যবসা নিশ্চিত করে বেশি ভাড়া আদায় এবং মুনাফার হার বাড়ানো। শুধু রোটেশন নয়, নতুন লঞ্চ নামানোর ক্ষেত্রেও মালিকেরা বাধা দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নতুন কোনো মালিকের পক্ষে নির্দিষ্ট রুটে লঞ্চ নামানো কঠিন। কারণ, মালিকেরা চান না, প্রতিযোগিতা তৈরি হোক। এর ভুক্তভোগী সাধারণ যাত্রীরা। তাঁরা বলছেন, লঞ্চমালিকদের মধ্যে প্রতিযোগিতার অভাবে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। গাদাগাদি করে ওঠানোয় যাত্রীসেবার মান খারাপ হয়। লঞ্চ চলাচলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়। এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ ঝালকাঠিতে সুগন্ধা নদীতে অভিযান-১০ নামের লঞ্চের অগ্নিদুর্ঘটনা। যাত্রীদের ভাষ্য, এই লঞ্চে যাত্রী ছিল প্রায় ৮০০ জন। অথচ বিআইডব্লিউটিএর সদরঘাটের পরিবহন পরিদর্শক লঞ্চটি ছাড়ার আগে অনুমোদনপত্রে লিখে দিয়েছিলেন, এতে ৪২০ জন যাত্রীর ধারণক্ষমতার (রাত্রিকালীন) বিপরীতে যাত্রী আছে ৩১০ জন। কেউ কেউ এ–ও বলছেন যে অভিযান-১০ লঞ্চে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী না থাকলে এত মানুষের মৃত্যু হতো না।
রোটেশন প্রথা বাতিলের দাবিতে বরিশাল সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা কর্মসূচীতে আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে অংশ গ্রহন করেছিলেন বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ। ২০১৭ সালে রোটেশন প্রথা বাতিলের দাবিতে ভোলায় একটি মানববন্ধন হয়েছিল। এতে অংশ নিয়েছিলেন জেলার সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি মোবাশ্বের উল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, লঞ্চ কম চলার কারণে গাদাগাদি করে যাত্রীদের যাতায়াত করতে হয়। বেশির ভাগ সময় কেবিন পাওয়া যায় না। মাঝে মাঝে প্রভাবশালীদের দিয়ে তদবির করিয়ে কেবিন নিতে হয়। তিনি বলেন, রোটেশন প্রথার কারণে যাত্রীর ব্যয় বেশি হয় এবং ঝুঁকি তৈরি করে। বলাবাহুল্য : ঢাকা-ভোলা রুটে ছয়টি লঞ্চের রুট পারমিট আছে। তিনটি করে লঞ্চ প্রতিদিন উভয় প্রান্ত থেকে ছাড়ার কথা। কিন্তু ছাড়া হয় দুটি করে। বিআইডব্লিউটিএর হিসাবে, সদরঘাট থেকে ৪৪টি নৌপথে চলাচলের জন্য ২২২টি যাত্রীবাহী লঞ্চের রুট পারমিট রয়েছে। এসব লঞ্চ নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার পথে বিভিন্ন জায়গায় থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করায়। ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চ যাত্রীদের ভাষ্য, লঞ্চে একটি কেবিনের জন্য তদবির করতে হবে, দালাল ধরে দুই থেকে তিন শ টাকা বেশি দিতে হবে—এটা কোনো কথা হতে পারে না। ঢাকা থেকে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া পথে রুট পারমিট আছে চারটি লঞ্চের। প্রতিদিন দুটি করে লঞ্চ উভয় প্রান্ত থেকে ছাড়ার কথা। কিন্তু ছাড়ে একটি করে। ঢাকা থেকে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ (ভাসানচর) রুটের অবস্থাও একই। এই পথে ৪টি লঞ্চের রুট পারমিট থাকলেও চলাচল করে উভয় প্রান্ত থেকে একটি করে। একটি পুড়ে যাওয়ার আগে ঢাকা-বরগুনা রুটে রুট পারমিট ছিল ছয়টি লঞ্চের। দিনে চলে দুটি করে চারটি। লঞ্চমালিকদের সংগঠন অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যাপ) সংস্থার সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে কোন রুটে কয়টি লঞ্চ চলবে, তার কোনো মাপকাঠি নেই। কারও কাছে টাকা থাকলেই যদি লঞ্চ নামিয়ে দেন, তাহলে তো কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। মালিক সমিতির এই নেতা প্রশ্ন করেন, যাত্রী বেশি হলে যদি নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি হয়, তাহলে ঈদের সময় কীভাবে লঞ্চ চলাচল করে। যাত্রীবাহী লঞ্চকে এক বছরের জন্য রুট পারমিট ও চলাচলের সময়সূচির অনুমোদন দেয় বিআইডব্লিউটিএ। রুট পারমিট দেওয়ার শর্তে বলা হয়, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে লঞ্চ বন্ধ রাখলে এবং সময়সূচি অনুযায়ী লঞ্চ পরিচালনায় ব্যর্থ হলে অনুমোদন বাতিল করা হবে। অবশ্য বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানিয়েছে, রোটেশন প্রথায় মালিকের ইচ্ছা অনুযায়ী চালানোর কারণে কোনো লঞ্চের নিবন্ধন, সার্ভে সনদ বাতিল বা কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার নজির নেই। কোনো রুটে নতুন লঞ্চের রুট পারমিট দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট রুটটির যাত্রী পরিবহন বিষয়ে জরিপ করা যেতে পারে বলে বিধান রয়েছে। মালিকদের দাবি, বিআইডব্লিউটিএ ঠিকমতো জরিপ না করেই রুট পারমিট দিয়ে দেয়। বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা হিসাব করি সার্ভিস দিয়ে এক দিনে কয়টি লঞ্চ ছাড়বে। এখন যে মালিকদের লঞ্চ আছে, তাঁরাই লঞ্চ বাড়ান। বাইরের লোক কম।’ বিশেষ করে বিআইডব্লিউটিএর এই ‘সার্ভিসে’র হিসাব নিয়ে প্রশ্ন আছে। যেমন ঢাকা-ভান্ডারিয়া রুটে ‘সার্ভিস’ আছে ছয়টি। এর বিপরীতে লঞ্চ থাকার কথা ১২টি। আছে ৯টি। চলে দৈনিক উভয় প্রান্ত থেকে দুটি করে চারটি। লঞ্চে যাত্রীরা চলাচল করেন তিনভাবে। কেবিন, চেয়ার ও সাধারণ ডেক। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লঞ্চে কেবিন চাইলেই পাওয়া যায় না। হয় অনেক আগে বুকিং দিয়ে রাখতে হয়, নয়তো দালালদের ধরে বাড়তি টাকা দিয়ে কেবিন নিতে হয়। সাধারণ যাত্রীদের জন্য আগে থেকে টিকিট কাটার কোনো ব্যবস্থা নেই। লঞ্চ ছাড়ার পর টিকিট দিতে আসেন মালিকপক্ষের কর্মীরা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই ব্যবস্থার কারণে একটি লঞ্চে কত যাত্রী উঠল, এর কোনো হিসাব থাকে না। লঞ্চ ছাড়ার আগে বিআইডব্লিউটিএর পরিদর্শক নামকাওয়াস্তে যাত্রীর একটি হিসাব লিখে দেন, যেখানে ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী দেখানো হয় না। অভিযোগ আছে, এই অনিয়মের বিনিময়ে লঞ্চের কাছ থেকে ঘুষ নেন বিআইডব্লিউটিএর পরিদর্শক। ঝালকাঠিতে আগুনে পুড়ে যাওয়া অভিযান-১০ লঞ্চে যাত্রীসংখ্যা কম দেখানোর অভিযোগের বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর সদরঘাটের পরিবহন পরিদর্শক দিনেশ কুমার সাহা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনিই লিখে দিয়েছিলেন লঞ্চটিতে ৩১০ জন যাত্রী আছে। কোনো ত্রুটি নেই। যদিও পরে দেখা যায়, যাত্রী অনেক বেশি ছিল। যাত্রীরা বলছেন, প্রতিটি লঞ্চেই ধারণ ক্ষমতার বেশি যাত্রী নেওয়া হয়। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোর সময় কেবিনের সামনের হাঁটার জায়গায় ও ছাদে যাত্রী নেওয়া হয়। কাউন্টার দিয়ে টিকিট বিক্রি করলে বেশি যাত্রী নেওয়ার সুযোগ থাকে না। অভিযোগ আছে, এ কারণে কাউন্টার ব্যবহার করেন না মালিকেরা। সার্বিক বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, বিআইডব্লিউটিএকে রুট পারমিট দিতে হবে যাত্রীসংখ্যার সঙ্গে সংহতি রেখে। রুট পারমিট দেওয়ার পর কত লঞ্চ চলবে, তা মালিক সমিতি নির্ধারণ করে, এটা আইনসম্মত নয়। বিআইডব্লিউটিএ যদি নিজেদের দায়িত্ব পালন করে, তাহলে যাত্রীদের দুর্ভোগ হবে না।
বিগত সময়ে রোটেশন প্রথার বাতিলের আন্দােলনে বক্তারা বলেছিলেন, ১৯৭৬ সালের অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল অধ্যাদেশের ৫৪ ও ৮৩ ধারা এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ বিধির ১৯৭০ এর বলে লঞ্চ চলাচলের সময়সূচি দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু লঞ্চ মালিকরা একত্রিত হয়ে রোটেশন পদ্ধতিতে নৌযান চালাচ্ছে। এতে করে অনেককে মালপত্র নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে দীর্ঘ নৌপথ পার হতে হয়।
কথা হচ্ছে- এরকম প্রাণহানিকে ‘দুর্ঘটনা’ বলা যায় কিনা? ঝুঁকির সব দিক খোলা রেখে নিরাপত্তা!‌ কোন ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহাল না রেখে যাত্রা করা যদি দুর্ঘটনা হয়, সেক্ষেত্রে হত্যাকাণ্ড কাকে বলব? নরওয়েজিয়ান সমাজবিজ্ঞানী জোহান গ্যালটাঙ গত শতকের ষাটের দশকে ‘কাঠামোগত সহিংসতা’ তত্ত্ব দিয়েছিলেন। মানুষের মৌলিক সব প্রয়োজন মেটানোর পথ আনুষ্ঠানিকভাবে রুদ্ধ করা হলে তখন তাঁর প্রাণহানি অনিবার্য হয়ে ওঠে। এ তত্ত্ব থেকেই এসেছে ‘কাঠামোগত হত্যা’ ধারণা। বাস্তবে নৌপথে কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড নতুন নয়। আগে পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়েছে, আর এখন আগুনে পুড়িয়ে হত্যা! এসব প্রাণহানিকে ‘কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড’ আখ্যা দিয়েছেন বিভিন্ন সংগঠন।
মূলত : লঞ্চের কাঠামোগত ও কারিগরি ত্রুটি, সামর্থ্যের অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন, লঞ্চের নকশায় অনুমোদনহীন পরিবর্তন, চালকের দায়িত্বহীনতা ও আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস এড়িয়ে যাওয়ার কারণে যার প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে বাড়ছে নৌদুর্ঘটনা; লঞ্চ, ট্রলার, কার্গো ডুবি এবং শত শত লোকের প্রাণহানী-এ এক প্রতিকারহীন খবর। দুর্ঘটনায় রয়েছে দীর্ঘ তালিকা! এরুপ দুর্ঘটনায় আর কত মায়ের কোল খালি হবে! আর কত প্রাণ গেলে এই সমস্ত সমস্যাগুলোর সমাধান হবে? প্রতিবছর লঞ্চ দুর্ঘটনায় কতো যে প্রাণহানি ঘটছে, সেসবের কি কোন হিসেব আছে? এসব দুর্ঘটনায় শ’শ প্রাণ কেড়ে নিলেও কারও তেমন কোনো শাস্তি হয় না। আর এ কারণেও দুঘটনা ঘটেই চলছে। নৌপথকে নিরাপদ করতে অচিরেই এগুলোর সুরাহা করাটা অত্যাবশ্যাক। এজন্য প্রচলিত আইনকে যুগোপযোগী করার সময় এসেছে।-লেখক : নির্বাহী ও বার্তা প্রধান,
রণাঙ্গণের মুখপত্র “দৈনিক বিপ্লবী বাংলাদেশ”।

*মতামত বিভাগে প্রকাশিত সকল লেখাই লেখকের নিজস্ব ব্যক্তিগত বক্তব্য বা মতামত।