Home স্বাস্থ্য জামালপুরে প্রচন্ড গরমে রোগীর চাপ সামলানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে হাসপাতালে

জামালপুরে প্রচন্ড গরমে রোগীর চাপ সামলানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে হাসপাতালে

15

সুমন আদিত্য, জামালপুর প্রতিনিধিঃ প্রচন্ড গরমে বাড়ছে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, হাইপ্রেসার, ইউরিন ইনফেকশন, হিটস্ট্রোকসহ বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই। এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন জামালপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ অধিক রোগী।

হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, সোমবার পর্যন্ত কাগজে কলমে ৩ হাজারের অধিক রোগী ভর্তি রয়েছে। যা ২৫০ শয্যার বিপরীতে ভর্তির সংখ্যা আট গুণের বেশি। ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালে মেডিসিন, ডায়রিয়া, গাইনী ও শিশু ওয়ার্ডসহ ১২টি ওয়ার্ড রয়েছে। প্রতি ওয়ার্ডে বেড সংখ্যা ২৪টি।
শুধুমাত্র মেডিসিন ও শিশু ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা দুই সহস্রাধিক।

এই জেলার প্রায় ২৬ লাখ মানুষের চিকিৎসার প্রধান ভরসা জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল। কিন্তু বেডসহ নানা সমস্যায় কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদনদী বিধৌত জামালপুর জেলার মানুষ ও প্রতিবেশী আরোও দুটি জেলার চারটি উপজেলার মানুষ।

সোমবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ওয়ার্ডের মেঝে, বারান্দার মেঝেসহ যেখানে সেখানে বিছানা পেতে পড়ে আছেন শত শত রোগী। পাঁ ফেলার জায়গা পর্যন্ত নেই। ডাক্তার কক্ষে যেতে হয় রোগী ডেঙ্গিয়ে। শিশু ওয়ার্ডে রোগীর সাথে বাবা-মাও শুয়ে বসে আছে।

শিশু ওয়ার্ডের এক রোগীর বাবা রাকিবুল ইসলাম জানান, তার সন্তান তিনদিন থেকে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে এখনো কোন সিট পান নাই। সন্তান নিয়ে চিকিৎসার জন্য অবস্থান করছেন বারান্দায়। তিনি বলেন বারান্দা বা ওয়ার্ডের মেজে পা ফেলার স্থানও নেই।

মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত মেলান্দহ উপজেলা থেকে আসা আরেক রোগীর স্বজনরা জানান, চারদিন আগে ভর্তি হয়েছেন এখনো বারান্দার মেজেতে অবস্থান করছেন তারা এবং সিট পাবো বলে মনে হয় না। যারা কয়েক দিন আগে ভর্তি হয়েছেন তাঁরাই ওয়ার্ডে জায়গা পায় নাই। তিনি আরও বলেন, অসুস্থ রোগীরা বারান্দা ও ওয়ার্ডের ফ্লোরে গাদাগাদি করে পরে থেকে প্রচন্ড গরমে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

মেডিসিন ওয়ার্ডের নার্সরা জানান, প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। জ্বর, ঠান্ডা, ইউরিন ইনফেকশন, ডায়রিয়া জনিত রোগ নিয়েই রোগী বেশি আসছে।

শিশু ওয়ার্ডের নার্স আলপনা জানান, এই গরমে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি, জ্বরসহ আরো বিভিন্ন রোগে শিশুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। শিশু ওয়ার্ডে জায়গার সংকুলান না হওয়ার কারণে আমরা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছি।

এবিষয়ে হাসপাতালের নার্সিং কর্মকর্তা জানান, গরম শুরুর পর থেকে প্রতিদিনই ৫০০ থেকে ৬০০ রোগি ভর্তি হচ্ছে। এরমধ্যে মেডিসিন ও শিশু ওয়ার্ডেই রোগী সবচেয়ে বেশি। এত রোগীকে জায়গা দিতেই আমাদের হিমসিম খেতে হচ্ছে।

শিশু ওয়ার্ডের ডাক্তার ওয়ালীউল্লাহ জানান, যেভাবে হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে আমরা সামাল দিতে পারছি না এবং সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এইভাবে যদি আর কিছুদিন রোগী ভর্তির চলমান প্রক্রিয়া বিদ্যমান থাকে তবে হাসপাতাল থেকে এতগুলো রোগীর সেবা একসাথে দেওয়া সম্ভব হবে না বলে মনে করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, বেড এবং জায়গা সংকুলান থাকায় সদরের রোগীদের আমরা বাসায় থেকেই হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিতে বলছি। আর অন্যান্য উপজেলার জটিল রোগীদের এখানে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছি। তারপরও হাসপাতালে জায়গা দেয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

জামালপুরের বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, জেলার লোক সংখ্যানুযায়ী জেনারেল হাসপাতালের বেড সংখ্যা বৃদ্ধি জরুরি হয়ে পড়েছে। এই হাসপাতালে জামালপুর জেলা ছাড়াও টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী, মধুপুর উপজেলা, কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজিপুর উপজেলার রোগীরাও এখানে আসেন চিকিৎসা নিতে। আমি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে বলবো হাসপাতালটিকে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট করার জন্য।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মাফুজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তীব্র দাবদাহের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। হাসপাতালে রোগীর ভিড় বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা সেবা প্রদানে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। তবে আমরা চেষ্টা করছি আমাদের সাধ্যমত চিকিৎসা দিতে।