Home মতামত জাতীয় করণ ও সমঝোতার একটি জায়গায় আসার একটি প্রস্তাব

জাতীয় করণ ও সমঝোতার একটি জায়গায় আসার একটি প্রস্তাব

120

ড. মোল্লা আমীর হোসেনঃ
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাইকোর্ট এলাকায় একটি প্রোগ্রামে আগমন উপলক্ষে তাঁর নিরাপত্তা ও সম্মান বিবেচনায় আন্দোলনকারী শিক্ষকরা শুক্রবার বেলা ২টা পর্যন্ত মূল কর্মসূচি মূলতবী রাখায় তাদেরকে অভিনন্দন ও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শুধু আমাদের অভিভাবক নন, তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন ও ঐক্যের প্রতীক, তিনি আমাদের আশ্রয় স্থল। তাঁর কাছ থেকে আমরা বিগত পনেরো বছরে যে সেবা ও সামর্থ পেয়েছি, তা ছিল কল্পনাতীত, এ জন্য কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তাঁর সম্মানার্থে ও আগামী বাংলাদেশের জন্য তাঁর নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদেরকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে। কর্মসূচির এই মূলতবীকালে আলোচনা করে একটি সম্মানজনক জায়গায় পৌঁছানোর সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করি। এ জন্য আমি একটি প্রস্তাব করছি-
১. জাতীয়করণ বা সরকারিকরণ আগামী ১ জুলাই, ২০২৪ খ্রি. তারিখ থেকে কার্যকর হবে- নিম্নে উল্লেখিত শর্তে সরকার এমন একটি ঘোষণা দিতে পারেন-
ক) ৩০ জুন, ২০২৪ খ্রি. তারিখের মধ্যে যাচাই-বাছাই কাজ সম্পন্ন করা হবে
খ) ১ জুলাই, ২০২৪ খ্রি. তারিখে বর্তমানে কর্মরত পদের বিপরীতে সৃষ্ট সরকারি পদ ও স্কেলে যোগদান করবেন, যোগদানের তারিখ অর্থাৎ ১ জুলাই, ২০২৪ থেকে কেবল মাত্র এন্ট্রি পদের বিপরীতে নির্ধারিত মূল বেতন পাবেন,
গ) বাড়িভাড়া ভাতাসহ অন্যান্য ভাতা ও সুযোগসুবিধা জুন, ২০২৪ খ্রি. তারিখের অনুরূপ অর্থাৎ সরকারি প্রতিষ্ঠানে সৃষ্টি পদে যোগদানের পূর্বে যিনি যে পরিমাণ পেতেন, তিনি জুন, ২০২৫ খ্রি. তারিখ পর্যন্ত সেই পরিমাণ পাবেন। এ সব ভাতাদি পূর্ণহারে পাবেন ১ জুলাই, ২০২৫ খ্রি. তারিখ থেকে।

এতে জুলাই, ২০২৫ খ্রি. এর পূর্বে সরকারের একটি টাকাও বাড়তি ব্যয় হবে না, বরং এন্ট্রি পদের স্কেলের প্রথম ধাপের মূল বেতন প্রাপ্য হবেন বিধায় সরকারের অনেক টাকা সাশ্রয় হবে। কারণ ইতোমধ্যে প্রায় সকলেই বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট প্রাপ্ত হয়ে প্রথম ধাপের অনেক উপরের ধাপের বেতন পাচ্ছেন। এন্ট্রি পদে যোগদানের ফলে এই বাড়তিটা পাবেন না। এতে শিক্ষকদের সাময়িক ক্ষতি হলেও তারা সরকারি হবে এই নিশ্চয়তায় সসম্মানে প্রতিষ্ঠানে ফিরে যেতে পারবে। সরকারের অর্থের উপরও বর্তমানে কোনো চাপ পড়লো না, কারণ বেতনতো শতভাগ দিচ্ছেই, কেবলমাত্র ভাড়তি ভাতাদি দিবে জুলাই ২০২৫ খ্রি. থেকে। ততদিনে সরকারের সক্ষমতা আরো বাড়বে। তাছাড়া কর্মসূচি প্রত্যাহার হলে শিক্ষকদের মধ্যকার গ্রুপিং বন্ধ হবে, এ গ্রুপিং প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার জন্য ক্ষতিকর। বিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনকারীরাও পানি ঘোলা করার সুযোগ পাবে না। সরকারি হতে যাচ্ছেন বিধায় শিক্ষকরা সামাজিকভাবেও সাবধান হবেন, যাতে যাচাই-বাছাই কালে কোনো ধরনের মামলা বা অনৈতিকতার অভিযোগ না মেলে এবং সকল ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিত্যাগ করে শতভাগ পেশায় মনোনিবেশ করবেন। শিক্ষকরা আরো উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে পূরোদমে ক্লাস শুরু করবেন, মনের শান্তি তাদেরকে পেশায় শক্তি যোগাবে, জাতিও স্বস্তি পাবে।

এখানে উল্লেখ্য যে, শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি শুধু বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির নয়, সকল শিক্ষক সংগঠনের। সকলেই নিজ নিজ কৌশলে নিজ নিজ পদ্ধতিতে এ দাবি আদায়ের চেষ্টা করছে। এটা তাদের দীর্ঘদিনের চেষ্টা।

কয়েক বছর ধরে বেছে বেছে সরকারিকরণ করার প্রক্রিয়ায় একটা বৈষম্য হয়ে যাচ্ছে যে, যে প্রতিষ্ঠানটি সরকারিকরণ করা হলো, তাতে অনেক জুনিয়র শিক্ষকও সুযোগ পেয়েছেন, অথচ পার্শ্ববর্তী অন্য প্রতিষ্ঠানের অনেক প্রবীণ ও নামকরা শিক্ষক সে সুযোগটি পাননি। এমনও আছেন যে, যে জুনিয়র শিক্ষক সরকারিভুক্ত হলেন তিনি পার্শ্ববর্তী প্রতিষ্ঠানের প্রবীণ শিক্ষকেরই সরাসরি ছাত্র। এ সুযোগ না পাওয়া ঐ প্রবীণ শিক্ষকের জন্য পীড়াদায়ক, যা তাকে হতাশাগ্রস্থ করেছে। বেছে বেছে সরকারিকরণের আর একটি কুফল হলো- তদবিরের নামে একটা শ্রেণির বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়া। যেগুলো সরকারিকরণ হয়েছে, সেগুলো বিনা ব্যয়েই হয়েছে, সরকারের ইচ্ছাতেই হয়েছে। তবে চলমান অবস্থায় স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি শঠতার আশ্রয় নিয়ে চেষ্টা করছেন বলে দাবি করে খরচাপাতি স্বরূপ মোটা অংক হাতিয়ে নিয়েছেন। এ রকম আশ্বাশ দিয়ে টাকা নিয়ে সরে পড়েছেন, এমন প্রমাণও আছে, যা এখনো সরকারি হয়নি, সম্ভাব্য তালিকায়ও নেই, কিন্তু শিক্ষকরা সর্বস্ব হারিয়েছেন।

কিছু সম্পদশালী প্রতিষ্ঠান আছে, যারা সরকারিকরণ চায় না। কারণ প্রতিষ্ঠানের প্রচুর আয় থাকা তারা প্রতিষ্ঠান থেকে যা পায়, তা সরকার থেকে প্রাপ্যতার চেয়ে অনেকগুণ বেশি। তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও অধিক বেতন, উন্নয়ন ফি সহ বিভিন্ন নামে বেনামে অর্থ আদায় করে। সরকারিকরণ হলে এসব দুর্নীতি বন্ধ হবে। বঙ্গবন্ধুর শোষণ মুক্ত স্বপ্নের বাংলাদেশ থেকে এ সব শোষণ দূর করা জরুরি।

সুতরাং ঢালাওভাবে হলেও সেই তদরিরের নামে টাকা নেবার সুযোগ আর থাকবে না। তবে ঢালাইভাবে হলেও যাচাই-বাছাইতো হবে।

-লেখক: সাবেক চেয়ারম্যান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, যশোর