Home বাণিজ্য ও অর্থনীতি চাপ থাকলেও ব্যাংকিং খাতে স্বস্তি ফিরেছে : এবিবি

চাপ থাকলেও ব্যাংকিং খাতে স্বস্তি ফিরেছে : এবিবি

30

ডেস্ক রিপোর্ট: ব্যাংকিং খাতে চাপ থাকলেও এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে এমনটাই দাবি করছে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি)। দুই-একটি ব্যাংক ছাড়া কোনো ব্যাংকে ‘ডেফার্ড পেমেন্ট’ বাকি নেই। বিদেশি যেসব ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে লেনদেনের ‘লিমিট’ কমিয়ে দিয়েছিল, বন্ধ করে দিয়েছিল তারা আবার ফিরে আসছে। আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খুলতে এখনো নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, কিন্তু এলসি খোলার পরিমাণ বাড়ছে। খবর ইত্তেফাক
গতকাল সোমবার ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এবিবি আয়োজিত ‘ব্যাংকিং সেক্টর আউটলুক-২০২৩’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই দাবি করেন এবিবি চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন।

তিনি বলেন, ২০২২ সালে যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট, সামষ্টিক অর্থনীতির চাপ, রিজার্ভের সংকট গেছে, তা আমরা আমাদের ব্যাংকিং ক্যারিয়ারের ৩৫ বছরেও দেখিনি। তবে গেল বছরের জুন-জুলাইয়ের পরিস্থিতি এখন আর নেই। তিনি বলেন, এক বছরের ব্যবধানে টাকার মান কমেছে ২৫ শতাংশ, যা অকল্পনীয়। ডলার-সংকট কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি শুরু করায় পরিস্থিতি সামলানো গেছে। যদি শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের মতো ডলারের দাম বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়া হতো তাহলে এখনকার ১১০ টাকার ডলার ১৫০ টাকার উপরে উঠে যেত, মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যেত। সরকার সময়োচিত পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এখন স্বস্তিতে ফিরেছে দেশের ব্যাংক খাত। দুই-একটি ব্যাংক ছাড়া কোনো ব্যাংকে ডেফার্ড পেমেন্ট বাকি নেই। তবে ২০১৮ বা ২০১৯ সালের মতো অবস্থায় আসতে এখনো বেশ সময় লাগবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন এবিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন, এবিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাশেম শিরিন, এবিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী।

এক প্রশ্নের উত্তরে মাসরুর আরেফিন বলেন, এলসি এখনো নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ব্যাংকে ১০টা আবেদন করা হলে তিন-চারটা করা হচ্ছে। কারণ অগ্রাধিকার পণ্য ছাড়া অন্য পণ্য আনতে এখনো নিরুত্সাহিত করা হচ্ছে। তবে গত বছরের মতো চাপ এখন আর নেই। এলসি নিয়মিত হচ্ছে, এটা বাড়ছে। তিনি দাবি করেন, এখন ডলারের হুন্ডির দর ব্যাংক রেট হতে কম। এতেই বোঝা যায় ডলার-সংকট কেটে যাচ্ছে। দেশের ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত তারল্য আছে। টাকা তুলতে এসে কোনো গ্রাহক ব্যাংকে টাকা পাননি, এমন ঘটনা ঘটছে না।

বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, বিষয়টি এখন গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য সব ধরনের এলসি পরীক্ষা করা হচ্ছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, মূলধনী পণ্যের ক্ষেত্রে একই পণ্য ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দাম রয়েছে। এজন্য শুধু এলসির দর দেখে অর্থ পাচারের বিষয়টি বুঝা যায় না। বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

খেলাপি ঋণ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপি অবশ্যই বড় চ্যালেঞ্জ। খেলাপিদের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে গত চার-পাঁচ বছরে যে শিথিলতা আনা হয়েছে, তাতে ধারণা করা হয়েছিল তারা পুনরায় ঋণ নিয়ে ব্যবসা বাড়িয়ে পরিশোধ করবেন। কিন্তু তার সুফল মিলেনি। কোনো বড় ঋণ খেলাপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিলেই তিনি উচ্চ আদালতে গিয়ে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসছেন। এজন্য পর্যাপ্ত আইনি কাঠামো, মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুদের হার বাজারভিত্তিক করার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিকল্পনা করছে। এটা যখন সিঙ্গেল ডিজিটে বেধে দেওয়া হয়, সেটি ঐ সময়ের জন্য প্রাসঙ্গিক ছিল। এখন বাজারভিত্তিক হলেও ঋণের সুদ হার ১০ শতাংশের উপরে যাবে না বলে তিনি আশা করেন। তবে এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

একটি বিশেষ শিল্পগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠানে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করলেও বোর্ড থেকে কোনো চাপ সৃষ্টি হয় না বলে জানান, এবিবির ভাইস চেয়ারম্যান ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী। তিনি বলেন, কোনো কিছু পর্ষদ থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয় না। তবে পরামর্শ করা হয়। তিনি বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরে চাপ অনেকটাই কমেছে। ব্যাংক থেকে গ্রাহকরা প্রচুর টাকা তুলে নিচ্ছিলেন। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তারল্য সহায়তা দেওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।