Home সারাদেশ নিষেধাজ্ঞা শেষে মধ্যরাত থেকে শুরু হচ্ছে মেঘনা ও তেতুঁলিয়ায় ইলিশ শিকার

নিষেধাজ্ঞা শেষে মধ্যরাত থেকে শুরু হচ্ছে মেঘনা ও তেতুঁলিয়ায় ইলিশ শিকার

31

কামরুজ্জামান শাহীন,ভোলা: দীর্ঘ ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে ভোলার মেঘনা, তেতুঁলিয়া নদীতে ইলিশ ধরতে পারবেন জেলেরা। শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে পুনরায় ইলিশ শিকার শুরু হবে জেলেদের । ইতোমধ্যে জাল বুনন, ট্রলার মেরামত ও পুরাতন জাল রিপুসহ সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন জেলেরা।
টানা ২২ দিনের অলস সময় পার করে নিষেধাজ্ঞার শেষ সময় জেলে পরিবারের সদস্যরা আনন্দিত। ইলিশের মৌসুম শেষের দিকে হলেও গত কয়েক বছর শীতের সময় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ায় জেলেদের আগ্রহ বেড়েছে এবার।
সরজমিনে ঘুরে ও বিভিন্ন সূত্রে জানাযায়, ভোলা সদরের ইলিশা ফেরিঘাট, নাছিরমাঝি, তুলাতুলি, ভোলার খাল, ইলিশা বিশ্বরোড, ঢালচর, বকসি, সামরাজসহ মেঘনা পাড়ের বেশকিছু এলাকায় জেলেদের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। নদীর কুল ঘেষে বাঁধের উপর রাখা হয়েছে সারি সারি নৌকা ও ইঞ্জিন চালিত ট্রলার। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে নদীতে নামার অপেক্ষায় জেলেরা। সব মিলিয়ে একটা উৎসাবের আমেজ বিরাজ করছে জেলে পল্লী ও মাছ ঘাটগুলোতে। জেলে পরিবারগুলো স্বপ্ন দেখছে ইলিশের প্রাচুর্যতায় তাদের অভাব দূর হবে। ফিরে আসবে পরিবারে স্বচ্ছলতা।
এদিকে ভোলার ৭ উপজেলায় মা ইলিশ শিকার নিষেধাজ্ঞার ২২ দিনের জন্য ১ লাখ ৩৫ হাজার জেলে পরিবারের জন্য ২৫ কেজি করে চাল বিতরণ করেছে সরকার। ফলে কিছু জেলে ছাড়া অধিকাংশ জেলেই আইন মান্য করে মাছ ধরা থেকে বিরত রেখেছে নিজেদের। তারপরেও যারা আইন ভঙ্গ করছে মৎস্য বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় ২৩৬ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে জেল-জরিমানা করা হয়েছে
জেলা ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম বলেন, সরকারের মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রমের ফলে নদীতে ইলিশের উৎপাদন প্রতিবছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এবছর অধিকাংশ জেলেই আইন মান্য করেছে। বর্তমানে জেলেরাও বুঝতে পেরেছে এ অভিযান তাদের জন্য মঙ্গলজনক। বর্তমানে জেলেদের নৌকা-ট্রলার-জালসহ অনান্য সরাঞ্জম ইলিশ শিকারের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। আশা করছেন সামনের দিনগুলোতে ব্যাপক ইলিশ মাছ পাবেন জেলেরা।
ইলিশা এলাকার জেলে ইসমাইল ও আব্দুল ওহাব বলেন, টানা ২২ দিন নদীতে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় ধার দেনা করে দিন পার করেছি। মধ্যরাত থেকে পুনরায় মাছ শিকার শুরু হবে। তাই নৌকা, জালসহ অনান্য সকল সরঞ্জাম প্রস্তুত করে রেখেছি। রাত ১২ টা বাজার অপেক্ষা এখন।
মাছ শিকারে যাওয়ার জন্য নৌকা শেষ মুহূর্তের মেরামত নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন জেলে আকবর, হাসান ও ইদ্রিস। তারা বলেন, এ বছর ভরা মৌসুমে তেমন ইলিশ ধরা পড়েনি। যখন ইলিশ পাওয়া শুরু হলো, তার কিছুদিন পরই সরকারী ভাবে ইলিশ শিকাওে উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তাই আশা করি নিষেধাজ্ঞার পর ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে। ইজাজ মাঝি এলাকার জেলে কুদ্দুস মাঝি ও হারুন মাঝি বলেন, নদীতে দীর্ঘদিন ইলিশ শিকার হয়নি। তাই প্রথম দিকে ব্যাপক ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশা তাদের।
অন্যদিকে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর চালু হচ্ছে ইলিশের ঘাট, তুলাতলী, সামরাজ, বকসি, পাচঁকপাটসহ জেলার আড়ৎগুলো। ছুটিতে থাকা শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়ে সবকিছু পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। রাত পোহালেই ঘাটে ট্রলার ণৌকা নিয়ে ভিড়বে চকচকে রুপালী ইলিশ। ক্রেতা-বিক্রেতা ও আড়ৎদারদের হাঁক-ডাকে সরগরম হয়ে উঠবে মৎস্য ঘাটগুলো। একইসাথে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বন্ধ থাকা বরফলগুলো। সর্বত্রই ব্যবস্ততা চোখে পড়ার মতো।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাতউল্লাহ বলেন, ২৮ অক্টোবর রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে। আশা করছি এবছর নির্বিঘেœ মা ইলিশ তাদের ডিম ছাড়তে সক্ষম হয়েছে। সরকারের ব্যাপক প্রচার প্রচারণা ও কঠোর অভিযানের ফলে ৯৫ ভাগ জেলেই ইলিশ শিকার থেকে বিরত ছিলো। তারপরেও অসাধু কিছু জেলে আইন ভঙ্গ করছে এমন ৮৬ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড ও ১৫০ জেলেকে মোট ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অবৈধ জাল উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ৮ লাখ মিটার।
তিনি বলেন, এবছর ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে নদী ছিলো জেলে শুন্য। অভিযানে জেলেরাও আমাদের সহায়তা করেছে। তাই অভিযান সফল হওয়ায়, আশা করছি জেলায় ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে । সকাল থেকেই সকল জেলেরা তাদের ট্রলার ও নৌকা ঘাটে সাজিয়ে অপেক্ষা করছেন ইলিশ শিকারের অপেক্ষায়।
উল্লেখ্য- উৎপাদন বাড়াতে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম গত ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে ২২ দিনের জন্য ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুত, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করে সরকার।