Home সারাদেশ ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাংয়ের প্রভাবে ভোলায় লন্ডভন্ড, প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষের ক্ষয়ক্ষতি

ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাংয়ের প্রভাবে ভোলায় লন্ডভন্ড, প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষের ক্ষয়ক্ষতি

23

কামরুজ্জামান শাহীন,ভোলা॥ ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ভোলায় প্রায় ৫ হাজার বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যা থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত গাছচাপা পড়ে ও পানিতে ডুবে ৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। জেলার প্রায় ২ লাখ মানুষ কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলা প্রশাসন নিশ্চিত করেছেন।
জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, জেলার ৪ টি উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাথমিক হিসেবে প্রায় ২ লাখ মানুষ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ৩ হাজার ৮ ত ৯০টি বাড়ি আংশিক ও ১ হাজার ৪ শত ৩৩টি ঘর বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় ৪ জন মৃত্যু হয়েছে। চূড়ান্ত তালিকায় ক্ষতির পরিমাণ কমবেশি হতে পারে।
জেলা ত্রাণ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভোলা সদর উপজেলার ৫শত বাড়ি আংশিক ও ১ শত ৬০টি বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে চেউয়াখালী গ্রামের বাসিন্দা মফিজুল ইসলাম (৭০) নামের এক বৃদ্ধ ঘরচাপা পড়ে মারা গেছেন। দৌলতখান উপজেলায় ২শত ৬৯টি বাড়ির আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৫১টি বাড়ি। এই উপজেলায় পৌর শহরের ৫ নং ওয়ার্ডে সোমবার রাতে গাছচাপা পড়ে বিবি খাদিজা (৮০) নামের এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে।
চরফ্যাশন উপজেলায় আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার ২ শত ৭২টি বাড়ি ও ৫শত ২টি বাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। চরফ্যাশন উপজেলার শশীভূষণ থানা এলাকায় সড়ক দিয়ে দুই মোটরসাইকেল আরোহী যাওয়ার সময় গাছ পড়ে ঘটনাস্থলে মনির হোসেন (৩০) নামের একজন মৃত্যু হয়েছে। অপরজনকে আহত অবস্থায় চরফ্যাশন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মনপুরা উপজেলার ৫শতটি বাড়ি আংশিক ও সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৩ শত ১টি বাড়ি। এ ছাড়া বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ২০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখানে ১ হাজার ৩ শত ৫০টি ঘর আংশিক ও ৪ শত ২০টি ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। ও লালমোহনে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তা-বে ৩ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া আংশিক ক্ষতি হয়েছে আরো ৭শত বাড়ি-ঘর। উপজেলার লর্ড হার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ফাতেমাবাদ গ্রামের ফরিদুল ইসলামের স্ত্রী রাবেয়া বেগম (২৫) নামের এক গৃহবধূ পুকুরের পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে ভোলার সাগর মোহনার ইউনিয়নগুলোতে সোমবার রাতে জোয়ারের সময় প্রায় ১০ ফুট পানি উঠেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) হিসাবে, জোয়ারের উচ্চতা ছিল প্রায় ৫ মিটার। অনেক এলাকায় বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছিল। মঙ্গলবার ভোর নাগাদ অধিকাংশ এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে। তবে লালমোহন, মনপুরাসহ বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের কিছু এলাকায় এখনো জলাবদ্ধতা আছে।
ভোলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, রাতে জোয়ারের উচ্চতা ছিল প্রায় ৫ মিটার, যা ৯ ফুটের কাছাকাছি। তবে ডিভিশন-১এর বাঁধের কোনো ক্ষতি হয়নি।
সিত্রাংআতঙ্কে আশ্রয়কেন্দ্রে সারা রাত কাটানোর পর জেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ বাড়ি-ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার সকাল ৬ টার দিকে ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের ৩৬ নং ধনিয়া সরকারি প্রাথমিক কাম সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেওয়া অধিকাংশ মানুষ বাড়ি-ঘরে ফিরে গেছে।
আশ্রয়কেন্দ্রে বিবি আয়শা (৫৫) নামের এক বৃদ্ধা বলেন, কাল রাতের বেলা তিনি নাতি-নাতনিদের সঙ্গে নিয়ে বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সকালে বাড়িতে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে বৃষ্টির পানিতে বাড়ি-ঘর তলিয়ে আছে বলে তিনি শুনেছেন।
ওই বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মো. মাসুদুর রহমান বলেন, সোমবার রাতে ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি বাড়লে লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে শুরু করে। রাত ১০টা নাগাদ প্রায় ৫ শত মানুষ এখানে আশ্রয় নিয়েছিল। রাতে তাদের শুকনা খাবার দেওয়া হয়। তবে ভোরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় সবাই বাড়ি-ঘরে চলে গেছে।
এদিকে সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় খাবারের সংকট ছিল। প্রশাসনের কর্মকর্তারাও খোঁজখবর নেননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের উত্তর গঙ্গাকির্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. মহিউদ্দিন বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে প্রশাসনের কোনো লোকজন ছিলেন না। রাতে খাবার দেওয়া হয়নি। পরে নিজের টাকায় তিনি খাবার কিনে দিয়েছেন। এ ছাড়া বিদ্যুৎ না থাকায় আশ্রয় নেওয়া মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম হাওলাদার বলেন, এই ইউনিয়নে কোনো সাইক্লোন শেল্টার নেই। রাত ১০টার দিকে পুলিশ ফাঁড়ি, কোস্ট ফাউন্ডেশন ও বন বিভাগের ভবনে সহস্রাধিক মানুষ গাদাগাদি করে রাত কাটিয়েছে। তাদেরকে রাতে খিচুড়ি খাওয়ানো হয়েছে।চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর ইউনিয়নের পুলিশ ফাঁড়িতে সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাতে ৩ শত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন।