Home সারাদেশ খ্রিষ্টান ক্রেডিটে চলছে রমরমা নিয়োগ বাণিজ্য অর্থের চার ছক্কা

খ্রিষ্টান ক্রেডিটে চলছে রমরমা নিয়োগ বাণিজ্য অর্থের চার ছক্কা

23

পাভেল ইসলাম মিমুল রাজশাহী অফিস রাজশাহীর মহানগরীর পূর্ব টালিপাড়ায় ক্রেডিট অফিসে চলছে সভাপতির ক্ষমতা বলে ৩ টি শূন্যপদে নিয়োগ দুর্নীতি । যেখানে প্রতিষ্ঠানের সেক্রেটারিকে ও ঐ প্রতিষ্ঠানের খন্ডকালিন কর্মরত অফিস সহায়ক সহ প্রতিষ্ঠানের পিয়োনের বন্ধুকে বিশাল বানিজ্য করে নিয়োগ দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন সচেতন নাগরীক মহল।

গত মাসের (২৩জুন) শুক্রবার সকালে শহরের কারিতাস অফিসে অনুষ্ঠিত হয় নিয়োগ পরিক্ষা। ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করে এই নিয়োগ পরিক্ষা পরিলাচিত হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে বিভাগীয় সমবায় অফিসার মো: জাহিদ কাদের বাকিদের সিভি ও পরিক্ষার ফলাফল দেখতে দেননি। তিনি নিয়ম বহিভূত ভাবে নিয়োগ পরিক্ষায় হস্ত্যক্ষেপ করে । যার ফলে কমিটি থেকে ভাইস চেয়ারম্যান বেঞ্জামিন সরেন স্তফা দিয়েছেন।

বিষয়টি রহস্যজন মনে হলে গণমাধ্যম কর্মী তার কাছে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন : নিয়োগ কমিটিতে আমরা তিনজন থাকলেও বিভাগীয় সমবায় অফিসার মো: জাহিদ কাদের সরাসরি হস্তক্ষেপ করেন। যেটি নিয়মের বাইরে । এই বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যানকে বললে তিনি বিষটি এরিয়ে যান ও বলেন সমস্যা নাই ওই কিছু করবে না। পরে সিভি ও পরিক্ষার খাতা দেখার কথা আমাদের কিন্তু সেটাও দেখতে দেয় নাই। এমন অনিয়ম ও দূর্নীতি দেখে আমার মধ্যে বিতৃষ্ণা জন্মায় এবং আমি স্তফা দেই।

তিনি আরো বলেন,বর্তমান সভাপতি ও সেক্রেটারি দায়িত্বে আসার পর থেকে অফিসের মধ্যে নানা ভাবে টাকা ছয় নয় হয়ে চলেছে। যেটি গত এজিএমএ প্রমাণিত হয়েছে। যা সাধারণ জনগণও জানেন। তিনি আরো বলেন, এই নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে অতপ্রত ভাবে জড়িত আছেন বিভাগীয় সমবায় অফিসার।

সূত্র ধরে বিভাগীয় সমবায় অফিসারের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। তিনি প্রশ্নর জবাবে বলেন,আমি নিয়োগ কমিটির কেউ না। আমাকে সভাপতি ভাইবা পরিক্ষার নেয়ার জন্য ডেকেছেন।আর সে কেন এই অভিযোগ করেছেন সেটি আমি জানি না।
গত ২৪ মে ২০২৩ তারিখে নিয়োগ সার্কুলার দেয়া হয়। যেটি পুরোটায় নিয়ম বহিভূত বলে বলছেন কমিটিন অনেক সদস্য। তারা বলেন গত এজিএমএ বলা হয়েছে ১জন ম্যানেজার, ১জন অফিস সার্পোটিং স্টাফ ও ১জন অফিস কর্মী নিয়োগ দেয়া হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সভাপতি ও সেক্রেটারির একক ক্ষমতা বলে কমিটির সকলকে অবজ্ঞা করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যারা অনেকেই যানেন না।

পর্যবেক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক বুলবুলি হাঁসদা বিষয়টি নিয়ে বলেন,সভাপতি ও সেক্রেটারি একক ক্ষমতা বলে এই নিয়োগ দিয়েছে। আমরা সার্ভির রুলে এই নিয়োগ নিয়ে কোন আলোচনা করি নি। তাৎক্ষণিক ভাবে পরে আমরা জানতে পারি যে এই নিয়োগ হচ্ছে। তবে এজিএমএ একটি বিষয় উল্লেখ করা আছে প্রস্তাবিত ১জন ম্যানেজার, ১জন অফিস কর্মী ও ১জন সার্পোটিং স্টাফ নিয়োগ করা হবে। অর্থাৎ যে কোন একটি পদে মাত্র নিয়োগ দিতে পারবে প্রয়োজন সাপেক্ষে। তবে মজার বিষয় সভাপতি ও সেক্রেটারি নিজের জোরে পদ পরিবর্তন করে পরিক্ষা কার্যক্রম করছেন। আবার সার্ভিস রুলস ও তিনি একা হাতে করেছেন । যেখানে হাউজের কারো কোন পরামর্শ নেন নাই । এমন দুর্নীতি সত্যি আমাদের জন্য হতাসার । এভাবে চলতে থাকলে এই সমবায় হয়ে উঠবে দুর্নীতির আখড়া। আমি যে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সেই নিয়োগ এর বাতিল চাই। নতুন ভাবে নতুন কমিটির মাধ্যমে সুষ্ঠু নিয়োগ পরিক্ষা হবে যেন আমার আপনার টাকা সততার সাথে সংরক্ষিত থাকে।

বিশত্বসূত্রে জানা গেছে,অফিসে বেশ দুর্নীতি চলমান রয়েছে বহুদিন আগে থেকে। অফিসের সিনিয়ন দুজন স্টাফ লাজারুশ বিশ্বাস ও ব্রিজেট তাদের অফিসে কোন রকম তওক্কা করা হয় না। তারা সারাদিন যে কাজ করে তা অফিসের সার্ভারে এন্ট্রি দিতে হয়। কিন্তু এন্ট্রি তা দিতে ঠিকই পারে কিন্তু কোন হিসাব নিকাশ চেক করার যে এক্সেস ছিল তা অফিসের পিওন অদৃশ্য ক্ষমতা বলে তাদের থেকে নিয়ে নিয়েছে এমনটি ঔ সূত্রের মাধ্যমে জানা গেছে।

সূত্র আরো বলে,ক্রেডিট অফিসে প্রতিনিয়ত টাকার ছয় নয় হয়ে চলেছে। নিয়োগ নিয়ে তো রিতিমতো দুর্নীতি ও প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ছে মনে করছি। কোন একসময় অফিসে হঠাৎ নিজের অজান্তে অফিসের পিয়োন রাফায়েল বলে ফেলেন আমি তো প্রশ্ন পত্র দেখার সময় মোবাইলে ছবি তুলেছিলাম। বিষয়টি নিয়ে বড় একটি প্রশ্ন আসে সে পিয়োন কিভাবে পরিক্ষার আগের রাত্রে প্রশ্নপত্র দেখতে পায় ও তার ছবি তুলে ? অবশ্যই এখানে প্রশ্নপত্র ফাঁস করছে নতুবা সে কিভাবে প্রশ্নপত্র দেখতে পারে এত ক্ষমতা তার কোথা থেকে এসেছে?

সূত্র আরো বলছে,অফিসের সকল সার্ভারের পার্সওয়ার্ড পিয়োনের কাছে সেটা টাকা পয়সার হিসাব নিকাশ অফিসে সিনিয়র স্টাফদের চেক করতে দেয় না। এমনকি তাদের সাথে প্রায় সময় তর্কে জড়িয়ে পড়েন। প্রশ্ন হলো এত ক্ষমতা সে কোথায় পেল ? কে বা তাকে অফিসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সাইট হিসাব নিকাশ এবং কম্পিউটার ধরার সাহস পেল? অবশ্যই সভাপতি ও সেক্রেটারি ক্ষমতায় সে চলে বলেই এগুলো করতে পারছে।

এমন বিষয় স্থানীয় জনগণের কাছে পৌছাল বর্তমান নিয়োগ নিয়ে মিডিয়াতে উঠেছে নানা আলোচনা, সমালোচনার ঝড়।একই সাথে শহরের বিভিন্ন চায়ের দোকানে,রাস্তার মোড়ে বিষয়টি নিয়ে সংশিষ্টদের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ জানাচ্ছেন সচেতন নাগরিক।

উক্ত বিষয়ে প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য,সাবেক সভাপতি ও সেক্রেটারি তিমথী মুর্মু কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমেই বলে উঠেন একজন মানুষকে দায়িত্ব দেয়ার আগে প্রথমে তার পরিবার দেখতে হবে। সে কোথা থেকে এসেছে কেমন পরিবার থেকে এসেছে। সে তো সমাজের কাছে বির্তকিত। সমাজকে সে অবজ্ঞা করে কত ক্ষমতা তার। আমার কাছে গোপন সূত্রে অনেক তথ্য আসে। সে ক্রেডিটের টাকায় প্যাকেট খাবার খায় আরাম আয়েশে মিটিং করে যেখানে মিটিয়ে প্রায় সময় কোটা পুরণ হয় না। অথচ মিটিং চালিয়ে নিয়ে যায় এবং বেক ডেটে সদস্যদের কাছে তার চামচা রাফায়েলকে দিয়ে কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে আনায়। আর আমাদের খ্রিষ্টান ও বাঙ্গালির সকলেই সহজসরল তারা বিশ্বাস ও ভরসা করে স্বাক্ষর করে দেন। আজকে তার ফলাফল সকল মানুষ দেখতে পাচ্ছেন।তিনি আরো বলেন,এই নিয়োগ আমি ব্যক্তিগত ভাবে মানি না। এটা বাতিল করতে হবে ও নতুন কমিটি করে আবার নিয়োগ পরিক্ষা দিতে হবে।

একটি সূত্র জানাচ্ছে,অফিসে সভাপতি ব্যবস্থাপনা কমিটির অগোচরে মিথ্যা বলে ফাঁকা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে নিচ্ছেন তার চামচা অফিসের পিয়োন রাফায়েলের মাধ্যমে। অনেকে বলছে রাফায়েল হলো সভাপতির সকল দুর্নীতির হাতিয়ার। যাকে দিয়ে টাকা লেন-দেন,ভাওচারও বানানো থেকে শুরু করে সকল ছয় নয়ের কাজ করানো হয়ে থাকে। তবে তারা বলছেন উপযুক্ত প্রমানের অভাবে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি।

যতসময় যাচ্ছে এই নিয়োগ তত বির্তকিত হচ্ছে। তবে সভাপতির এমন অদৃশ্য ক্ষমতা দেখে সমবায়ের তিন হাজারের উপরে যে সদস্য সদস্যা রয়েছেন চোখ যেন তাদের কপালে। যেখানে সদস্যদের টাকায় তারা চলতে পারে সেখানে এত ফূঁর্তি এত ছয় নয় কিভাবে আসে। যে সমবায়ের আমরাই মালিক সেখানে আমাদের বৃদ্ধা আঙ্গুলি দেখিয়ে দিচ্ছে এটি কোন ভাবেই মেনে নিবো না। যদি এই নিয়োগ বাতিল করা না হয় এবং সভাপতি পদত্যাগ না হয় ও এই সকল দূর্নীতির ইনভেস্টিগেশন না হয় তাহলে সাধারণ জনগণের ক্ষমতা দেখবে এই সভাপতি এবং যারা এই দূর্নীতির সাথে জড়িত তারা বলে বক্তব্য দেন সাধারণ জনতা।

আদিবাসী ও খ্রিষ্টান বাঙ্গালিদের একমাত্র ভরসার প্রতিষ্ঠান এই সমবায়।যেখানে খেটে খাওয়া দিনমুজুর থেকে শুরু করে প্রায় ৩ হাজারের অধিক আদিবাসী খ্রিষ্টান ভাই বোনেরা সামর্থ অনুযায়ী কেউ ২০ টাকা কেউ বা তার অধিক টাকা রাখেন। কিন্তু এই খেটে খাওয়া মানুষের টাকায় খেয়ে নিচ্ছেন সভাপতি ও সেক্রেটারি নামক রাঘোব বোয়াল। আর এভাবে তারা তাদের পূর্ব পরিকল্পনা মতো চালাচ্ছে নিয়োগ বানিজ্য অর্থের ছয় নয়।

বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ জের্ভাস রোজারিও বলেন,এই সকল দূর্নীতি কোন ভাবেই উচিৎ না। এখানে পরিস্কার ও সততা থাকা প্রয়োজন।যে সকলে বিষয়টি নিয়ে বুঝতে পারে ও জানতে পারে। আমাদের খ্রিষ্টায় সম্প্রদায়ে নৈতিকতা,সততা ও মানবতা সহ নানা বিষয়ের উপরে প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা দেয়া হয়।তবুও যদি এমন ঘটে তাহলে সত্যি বিষয়টি দুঃখজনক।

সাধারণ জনগণ ও সচেতন মহল দাবি করছেন এভাবে চলতে থাকলে এই নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান ধবংস হয়ে যাবে। যারা এই দুর্নীতির সাথে জড়িত তাদের উপযুক্ত শাস্তি হওয়া দরকার ।

রাজশাহী জজ কোর্টের আইনজীবি ও সাবেক সভাপতি এ্যাড: নরেন্দ্রনাথ টুডু নিয়োগ নিয়ে বলেন,নিয়োগ কমিটিতে যারা ছিল তিন সদস্য কিন্তু দুর্নীতির জন্য নিয়োগ কমিটিতে থাকা ভাইস চেয়ারম্যান স্তফা দিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলছেন কমিটির দুজনকে কোন সিভি ও পরিক্ষার খাতা দেখতে দেওয়া হয়নি। যেটি সরাসরি বিভাগীয় ও জেলা সমবায় অফিসারের দুজনে মিলে দেখেছেন। যা নিয়ম বহির্ভূত। আবার এই নিয়োগ রেজাল্ট নিয়ে ভাইস চেয়ারম্যানকে বলেন যে আপনি বেকডেট দিয়ে এটি হালাল করে দেন। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে বলবো এমন সমস্যা নিয়ে নিয়োগ দেয়া যাবে না। সকলে মিলে বসে সিন্ধান্ত নিয়ে তারপর নতুন কমিটি করে নিয়োগ দিতে হবে। সেই পর্যন্ত এটি স্থগিত থাকুক।

গোপন সূত্রে জানা গেছে বর্তমান সভাপতি বৈদ্যনাথ হাঁসদা সামাজিক ভাবে বির্তকিত। সমাজের অনেকেই বলছেন
অন্যায় ভাবে আরেক গরিব আদিবাসীর বাড়ি দখল করে বাড়ি করছেন। যেটি নিয়ে কোর্টে কেশ চলমান রয়েছে ও বাল্ডিং করার নিশেদ্ধাজ্ঞা রয়েছে। তবে আইনকে বৃদ্ধাআঙ্গুলি দেখিয়ে রাতের অন্ধকারে বিলডিং এর কাজ করছেন এমনটি প্রমান মিলেছে।

অভিযোগের ভিত্তিতে বৈদ্যনাথ হাঁসদার অফিসে বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীগণ জানতে গেলে ১ঘন্টার বেশি বসে থেকেও তিনি নানা তালবাহানা করে দেখা করেনি। পরবর্তীতে তার মুঠো ফোনে ৫বার কল দিলেও তিনি কল ধরেনি।

সকলের একটি দাবি এমন দুর্নীতিবান ও বির্তকিত মানুষের থেকে কোন দিন ভালো কিছু আশা করা যায় না। তাকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে ও এই নিয়োগ বাতিল করে নতুন ভাবে আবার নিয়োগ পরিক্ষা দিতে হবে।