Home আন্তর্জাতিক কিশোরী নিকা হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা ইরানের

কিশোরী নিকা হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা ইরানের

28

ডেস্ক রিপোর্ট: ইরানের নীতি পুলিশের হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। এই বিক্ষোভে যোগ দেওয়ায় এক কিশোরীকে হত্যার অভিযোগ করেছেন তাঁর মা। তবে ১৬ বছরের ওই কিশোরীকে একটি ভবনের ছাদ থেকে শ্রমিকেরা সম্ভবত ফেলে হত্যা করেছেন বলে দাবি ইরানি কর্তৃপক্ষের। খবর বিবিসির।

ওই কিশোরীর নাম নিকা শাহকরামি। তার মা নাসরিন শাহকরামি গত বৃহস্পতিবার মার্কিন অর্থায়নে চলা রেডিও ফারদাকে পাঠানো এক ভিডিওতে বলেন, তিনি মেয়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন যা কর্তৃপক্ষের বক্তব্যের সঙ্গে মিলছে না।

নিকার খালা আতাশ শাহকরামি শুক্রবার বিবিসি ফারসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, নিকা গত ২০ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটা নাগাদ বাসা থেকে বের হয়। সাতটা পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল।

আতাশ বলেন, তাঁকে নিকার এক বন্ধু জানিয়েছিল নিকা তার হিজাব পোড়ানোর একটি ভিডিও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছিল। নিকা বন্ধুকে বলেছিল, এরপর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাকে অনুসরণ করছে। নিকার সঙ্গে ১০ দিন আর পরিবারের যোগাযোগ হয়নি। পরে একটি বন্দিশিবিরের মর্গে তাঁরা ওই কিশোরীর লাশ খুঁজে পান।

নিকার খালা বলেন, ‘আমরা যখন লাশ শনাক্ত করতে গিয়েছিলাম, কর্তৃপক্ষ আমাদের লাশ দেখাতে চাচ্ছিল না। শুধু কয়েক সেকেন্ডের জন্য তার মুখটা দেখতে দিয়েছিল।’

নিকার মা নাসরিন বলেন, তাঁর বোন গত বুধবার টেলিভিশনে বলেছেন, তাঁর ভাগনি নিকাকে একটি ভবনের ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। মূলত জোর করে তাঁর কাছ থেকে এ স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছিল।

নাসরিন বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ অন্যদের, আমার মামাদের ডেকে বলেছে যে, যদি নিকার মা এগিয়ে না আসেন এবং আমরা যা চাই তা না বলেন, মূলত তারা যে দৃশ্যপট সাজিয়েছে তার সঙ্গে সুর না মেলাই, তাহলে তারা যে কোনো কিছু করতে পারে বলে আমাকে হুমকি দিয়েছে।’

নিকার খালুকেও টিভিতে এই বিক্ষোভের বিরুদ্ধে কথা বলতে দেখা গেছে। অথচ ওই সময় স্ক্রিনের বাইরের অন্য একটি কণ্ঠস্বর স্পষ্টতই তাঁকে ফিসফিস করে বলছিল, ‘এটা বল, বদমাশ।’
সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, যেই রাতে নিকাহ নিখোঁজ হয়, সে রাতে সে একটি ভবনে যায়। সেখানে আটজন নির্মাণশ্রমিক ছিলেন। পরদিন সকালে তাঁরা বাইরের আঙিনায় নিকার লাশ দেখতে পান।

তেহরানের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহরিয়ারি বুধবার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে বলেন, ময়নাতদন্তে দেখা গেছে নিকার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ভেঙে গেছে। যা অনেক উঁচু থেকে পড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়।

তবে নিকার মা নাসরিন বলছেন, এটি সত্য নয়। তিনি বলেন, ‘আমি নিজে আমার মেয়ের লাশ দেখেছি। …তার মাথার পেছনে শক্ত কিছু দিয়ে এমনভাবে আঘাত করা হয়েছে, যার ফলে তার মাথার খুলিতে গর্ত হয়ে গেছে। এভাবেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।’

নাসরিন বলেন, ফরেনসিক রিপোর্ট অনুযায়ী নিকা যে দিন বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে, সেই দিনই তার মৃত্যু হয়েছে। মাথায় ভোঁতা কিছুর আঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে।
তেহরানের একটি কবরস্থান থেকে দেওয়া নিকার মৃত্যু সনদ বিবিসি ফারসির হাতে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, ‘একটি শক্ত বস্তুর আঘাতে একাধিক জখমে’ নিকার মৃত্যু হয়েছে।

এ ছাড়া নিখোঁজের ১০ দিন পর একটি বন্দিশিবিরে মর্গে নিকার লাশ খুঁজে পায় তার পরিবার। নিরাপত্তা বাহিনী লাশটি চুরি করে নিয়ে গোপনে দাফন করে ফেলে।

এর আগেও ১৬ বছরের আরেক কিশোরী সারিনা ইসমাইলজাদেহকে পিটিয়ে হত্যার বিষয়টি অস্বীকার করে ইরানি কর্তৃপক্ষ। গত ২৩ সেপ্টেম্বর উত্তর-পূর্ব ইরানের কারাজে বিক্ষোভ চলাকালে সারিনার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করা হলে তার মৃত্যু হয়।

আধা সরকারি বার্তা সংস্থা ইসনা আলবোর্জ প্রদেশের প্রধান বিচারপতিকে উদ্ধৃত করে তখন বলেছে, সারিনা পাঁচতলা ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।

মৃত্যুর আগে সারিনা অনেকগুলো ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছিল। একটি পোস্ট ছিল স্কুলের পরীক্ষা শেষ করার পর। সেখানে সে বলছিল, ‘স্বাধীনতার চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না।’
প্রথম আলো