Home জাতীয় করোনা মহামারিতে শ্রম বিক্রিতে বাধ্য হচ্ছে শিশুরা

করোনা মহামারিতে শ্রম বিক্রিতে বাধ্য হচ্ছে শিশুরা

69

ডেস্ক রিপোর্ট : শ্যামলীর একটি গ্যারেজে চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে কাজে আসে রাসেল মিয়া (১২)। সে গ্রামের একটি স্কুলে পড়ত। দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ থাকার কারণে তার বাবা রুহুল আমিন ছেলেকে দিয়ে গেছেন কাজ শেখার জন্য। রাসেলের কাজের পারিশ্রমিক নির্ধারিত হয়েছে তিন বেলা খাওয়া ও থাকা। বিনিময়ে সে গ্যারেজে বড় মেকারদের সঙ্গে সহকারী হিসেবে পাশে থাকবে। এভাবে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে দেশে বহু শিশু শ্রম বিক্রিতে বাধ্য হচ্ছে। পরিবারের অসচ্ছলতা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা এবং কারখানাগুলো লোকসানের কারণে কম বেতনে শিশু শ্রমিক নিয়োগ দিচ্ছে।

এখন আগের চেয়ে বেশি শিশু শ্রমিক কম মজুরিতে পাওয়া যাচ্ছে। সরকার শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম থেকে সরে আসতে ২০১৬ সালের প্রথম টার্গেট অর্জনে ব্যর্থ হয়ে ২০২১ সাল পর্যন্ত নতুন টার্গেট নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাশেম ফুডস লিমিটেডের ছয়তলা ভবনের অগ্নিকাণ্ডে শিশুশ্রমের ভয়াবহ রূপ আবার সামনে উঠে আসে। কারখানাটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৫২ শ্রমিকের মৃত্যু হয়, যার অধিকাংশই ছিল শিশু-কিশোর।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুকে কাজে নিয়োগের ক্ষেত্রে আইনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। দেশে করোনায় পরিস্থিতিতে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে। মহামারির আগেও দেশে বিভিন্ন সেক্টরে উল্লেখযোগ্য শিশু শ্রমিক থাকলেও তারা সরকারি বা এনজিও পরিচালিত স্কুলেও যেত। কিন্তু মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় এবং পরিবারে আর্থিক অনটনের কারণে দরিদ্র এই শিশুরা পুরো সময় কাজে নিয়োজিত হয়েছে, ফলে স্কুলে ফিরে যাওয়া তাদের পক্ষে আর সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১ মার্চ পর্যন্ত দেশে সাড়ে ৩৪ লাখ শিশু কর্মরত ছিল। এর মধ্যে প্রায় ১৭ লাখ শিশুর কাজ শিশু শ্রমের আওতায় পড়ে। আর ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত ছিল ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশু। ২০২০ সালের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং আইএলওর অর্থায়নে দেশে শিশু শ্রম নিয়ে আরেকটি জরিপ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মহামারির কারণে এ কাজটি শুরু হয়নি।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্টের উদ্যোগে ‘কোভিড-১৯-এর প্রভাবে ঢাকায় কর্মরত শ্রমজীবী শিশুদের অবস্থা যাচাই’ শীর্ষক জরিপ থেকে জানা যায়, করোনায় অনেক শিশু পেশা পরিবর্তন করেছে। যেসব শিশু আগে কাজ করত এমন ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশের এখন কাজ নেই। আর এমন ৩১ শতাংশের ওপর শিশুগুলোর পরিবার নির্ভরশীল। এদের মধ্যে ৩২ শতাংশ মহামারিতে কোনো সরকারি-বেসরকারি সাহায্যও পায়নি।-আমাদের সময়.কম