Home মতামত করোনায় পার হয় সময় আর বেলা! আনমনে খেলি মোরা কানামাছি খেলা!!

করোনায় পার হয় সময় আর বেলা! আনমনে খেলি মোরা কানামাছি খেলা!!

55

ইঞ্জিঃ সরদার মোঃ শাহীন:

মিডিয়ায় দেখলাম, টিকা নিয়ে বাঙালী জাতি বিভক্ত হয়ে গেছে। বিভক্ত হয়েছে মোট পাঁচ ভাগে। প্রথম ভাগে আছে ফুল ডোজ, মানে ডাবল ডোজ টিকা নিতে পারা লোকজন। তারা ‘গর্বিত বাঙালী’র গ্রুপে। ডাবল ডোজ টিকা নিয়ে তারা মহা গর্বিত। দ্বিতীয় ভাগে ‘চিন্তিত বাঙালী’ গ্রুপ। প্রথম ডোজ টিকা পেয়ে দ্বিতীয় ডোজের অনিশ্চয়তায় আছে। চিন্তায় চিন্তায় শেষ। বড়ই অসহায় তারা। তবে ‘অসহায় বাঙালী’ গ্রুপের দলভুক্ত নয়।
‘অসহায় বাঙালী’ গ্রুপের দলভুক্ত তারা, যারা এখন ‘নো ভ্যাকসিন’ এ আছে। মানে ভ্যাকসিন এখনো পায়নি। করি করি করে শেষমেষ অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করেও ভ্যাকসিন পায়নি। এখন শুধুই অপেক্ষা। অপেক্ষায় আশা যেমনি আছে, তেমনি নিরাশাও আছে। ডাবল কিংবা সিঙ্গেল ডোজ নেয়া কাউকে দেখলেই চোখ বড়বড় করে তাকায়। অসহায়ের মত তাকায়।
অসহায় নয় ‘কনফিউজড বাঙালী’ গ্রুপ। তারা কনফিউজড। কনফিউশনে কনফিউশনে তাদের অবস্থাও ভাল নয়। সামনের দিনগুলোতে কোন্ ভ্যাকসিন নেবে কিংবা নেয়া উচিত এসব নিয়েই কনফিউশন। তবে ভাল আছে ‘নো কনফিউশনে’র দল। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েই রেখেছে, “মরি আর বাঁচি, টিকা নিমু না।” খুবই কনফিডেন্ট এই ‘কনফিডেন্ট বাঙালী’ গ্রুপের লোকজন।
এই গ্রুপের লোকেরা করোনাকে ভয় পায় না। ভয় পাবে কি! উল্টো করোনাকে ইচ্ছেমত নিয়ন্ত্রণ করে। জেগেও করে, ঘুমের ঘোরেও করে। স্বপ্নে রীতিমত করোনার সাথে কথোপকথনও করে। “করোনা কাকে ধরবে, কাকে ধরবে না; কাকে মারবে, কাকে মারবে না” জাতীয় কথোপকথন এখন স্যোসাল মিডিয়ায় হটকেক। তারা এতটাই কনফিডেন্ট যে করোনা তাদের কাছে এখন খেলার বিষয়। মশকরা মশকরা খেলা।
খেলা করোনার টিকা নিয়েও চলছে। রাজনীতির চরম নোংরা খেলা। সব জায়গায় চলছে। ঘরে বাইরে, দেশে বিদেশে সব জায়গায়। কেউ বুঝে খেলছে। কেউ না বুঝে। কিন্তু খেলছে। হারার রিস্ক নেই বলেই খেলছে। এবং এ খেলায় কেউ হারছে না। হারছে স্বয়ং রাজনীতি। সুস্থ রাজনীতি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। যদিও রাজনীতি, সেটা দেশী কিংবা বিদেশী; সম্মুখভাগে যাই দেখাক, ভিতরের ভাগ চিরকালের জন্যেই অসুস্থ।
রাজনীতিকে ইংরেজীতে বলে পলিটিকস্। অথচ পলিটিকস্ এর বাংলা ব্যবহারিক অর্থ হলো কারো বিরুদ্ধে পেছনে কুটকৌশল করা। উদ্দেশ্য তার উপকার করা নয়, ক্ষতি করা। কারো বিরুদ্ধে কেউ যখন পরোক্ষভাবে কূটকৌশলে লিপ্ত হয়, তখন কৌশলের স্বীকার মানুষটি তা প্রকাশ করে পলিটিকস্ শব্দটি দিয়ে। এটা কেবল বাংলাদেশে নয়, তামাম দুনিয়ার একটি স্বীকৃত পন্থা। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সবার কাছে স্বীকৃত। সন্দেহাতীতভাবে কূটকৌশলের স্বীকার মানুষটির প্রকাশভঙ্গি এই রকম হয়, আরে ধূর! এসব আর কিছু না! জাস্ট আমার বিরুদ্ধে পলিটিকস্!!
এখানে পলিটিকস্ এর অর্থই দাঁড়ায় এরকম যে, অমুক লোকটি প্রকাশ্যে যাই বলুক বা করুক, আসলে পেছনে তার বিরুদ্ধে কুটকৌশল করছে। এটি যে কেবল সাধারণ মানুষরাই বলেন, সেটাও নয়। রাজনীতিবিদগণও বলেন। হরহামেশা নিজেদের কথায় শব্দটি ব্যবহার করে থাকেন তারা। কাজেই রাজনীতি মানেই যে কোন নেগেটিভ টার্ম, তা আমার বলার অপেক্ষায় থাকেনি। এটা প্রতিষ্ঠিত। রাজনীতিবিদগণই টার্মটিকে নেগেটিভ টার্মে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
হয়ত এজন্যেই, কি দেশে কিংবা বিদেশে সাধারণ জনগণের চেষ্টাই থাকে, সকল সময় রাজনীতিকে এড়িয়ে চলার। এবং সবাই এড়িয়েই চলছে। দিনদিনই বিষয়টি বাড়ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মাঝে বিষয়টি প্রকট হিসেবে দেখা দিয়েছে। তারা রাজনীতির কথা শুনতেই চায় না। রাজনীতির অপ্রকাশ্য নোংরা রূপ ওরা না দেখলেও, কিংবা না বুঝলেও, মাঝেমধ্যে প্রকাশিত রূপ দেখেই ওরা এড়িয়ে চলছে।
নোংরা রাজনীতির চরম প্রাকটিস্ এখন বিশ্ব জুড়েই হচ্ছে। চলমান বিশ্বরাজনীতির নাম হলো টিকা রাজনীতি। টিকা এখন দেশীয় এবং বিশ্ব রাজনীতির হটকেক। টিকা নিয়ে যে যেভাবে পারছে রাজনীতি করছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এই রাজনীতির শুরুটা হয়েছে বিলগেটস্রে হাতে। ব্যাপারটি গেল বছর থেকে বাজারে আসলেও আমি বিশ্বাস করতে চাইনি। তখন অবিশ্বাস্য মনে হলেও এখন বিশ্বাসের পাল্লাটা ভারী হচ্ছে।
ভারী হচ্ছে এই বেটার বর্তমানের কথাবার্তা শুনে। সে চাচ্ছে না টিকা বানানোর ফর্মুলা বিশ্বব্যাপী ওপেন হোক। বুঝুন এবার ব্যাপারটা। মানুষ মরে করোনায়, আর তিনি আছেন বাণিজ্য নিয়ে। আর কত বাণিজ্য চাই তার! অর্থ কামাতে কামাতে আরো অর্থ পাবার লিপ্সা চরমে উঠেছে। কে জানে এ জন্যেই ঘরের বউ পর্যন্ত হারাতে হয়েছে কিনা। বাকী এখন কেবল জীবন হারানোটা। তারপরও ভয়ডর নেই তাঁর।
২০১৫ সালে কানাডায় বসে করোনা নিয়ে করা তার অগ্রীম বক্তৃতাটি এখন না মেনে বিশ্ববাসীর কোন উপায় নেই। তিনি তো আর আধ্মাতিক কোন গুরু নন যে, করোনা মহামারীর কথা আগেভাগেই জেনে যাবেন। অথচ জেনেছেন এবং বক্তৃতায় মানুষকে জানিয়েছেন। করোনা নিয়ে নোংরা রাজনীতির শুরুটা হয়ত এখান থেকেই। হয়ত করোনা প্রাকৃতিক কোন ভাইরাস নয়; হয়ত তাদেরই বানানো জৈবিক কোন মারনাস্ত্র। তবে তার এই কুকর্মে আমেরিকান সরকারের কোন সম্পৃক্ততা কোথায়ও পাওয়া যায়নি। বরং আমেরিকান সরকার সন্দেহের তীর ছুঁড়েছে চীনের দিকে।
একেবারেই অমূলক নয় জটিল এই সন্দেহ। কেননা পুরো বছরজুড়ে আমেরিকাকে বড় অসহায় মনে হয়েছে করোনা যুদ্ধে। তাদের সম্পৃক্ততা থাকলে এতটা অসহায় লাগতো না। কিন্তু টিকা হাতে পেয়ে যখনই তাদের অসহায়ত্ত্ব কাটতে শুরু করলো অমনি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে আমেরিকার সকল উদ্যোগ। বেরিয়ে পড়েছে তাদেরও নোংরা চেহারা। কৌশলটা তাদের এমন যে কেবল তারাই টিকা দেবে। পাশাপাশি সারাবিশ্বে কেবল আমেরিকাই টিকার ব্যবসা করবে।
এ নিয়ে যত চতুরতা তথা নোংরা রাজনীতি করা যায়, আমেরিকা সবই করছে। রাশিয়া, চীন এমনকি বৃটেনের পরীক্ষিত এস্ট্রেজেনেকার টিকাকে নানা ছুঁতোনাতায় বারবার বাজারে ঢুকতে বাধাগ্রস্থ করেছে। যদিও তাদের অগ্রযাত্রাকে থামাতে পারেনি। কিন্তু এস্ট্রেজেনেকার কাঁচামাল রফতানী বন্ধ করে আমেরিকা বিশ্ববাসীর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। পাকা খেলোয়ারের মত খেলেছে।
আমেরিকা পাকা খেলোয়ার। পাকা হাতে খেলে। কিন্তু সেদিন আমলারা সাংবাদিক রোজিনাকে নিয়ে বড় কাঁচা হাতে খেলেছেন। সরকারের ভিতরের লোকেরা প্রায়শই কাঁচা হাতে খেলে সরকারকেই বরং বিপদে ফেলে। যেমন খালেদা জিয়াকে বিপদে ফেলেছে বিএনপিরই ভেতরের লোকেরা। তারা জীবনভর কাঁচা হাতে খেলে ওনাকে বিপদে ফেলেছে। একবার না, দুইবার না; বারবার ফেলছে। বিএনপি তাদের নেত্রী, দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জন্মদিন নিয়ে খুবই কাঁচা হাতে খেলছে। আজ পর্যন্ত বিএনপি নির্ধারণ করতে পারেনি বেগম জিয়ার আসল জন্মদিন। সর্বশেষ, করোনা রিপোর্টে নতুন তারিখ পেল জাতি। বিএনপির দেয়া তথ্যানুযায়ী বেগম জিয়ার নতুন জন্মদিন ৮মে, ১৯৪৬।
বুঝতেছি না; হাসবো, না কাঁদবো। বেগম জিয়ার এসএসসি পরীক্ষার মার্কশিট অনুযায়ী ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৬। ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী হবার পর তৎকালীন সরকারি পত্রিকায় তাঁর জন্মতারিখ উল্লেখিত ছিল ১৯ আগস্ট, ১৯৪৫। আবার তাঁর কাবিন নামায় লেখা আছে ৪ আগস্ট, ১৯৪৪। অথচ সর্বশেষ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট অনুযায়ী বেগম জিয়ার জন্মদিন ৫ আগস্ট, ১৯৪৬।
এটা কি খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপির একটা ফাজলামি! তিনি কি যদু, মধু কিংবা হদু? তিনি তো খুবই উঁচু স্ট্যাটাসের একজন নাগরিক। দেশের অন্যতম বৃহত্তম দলের নেত্রী তথা দুইবারের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর জন্মদিন নিয়ে কি বিএনপি যা ইচ্ছে তাই করতে পারে? ইস্যুটি নিয়ে সঠিকভাবে ভেবে কেবল একটি দিনতারিখে কি আনা যায় না? ইস্যুটি নিয়ে ভাবার মত একটি মানুষও কি বিএনপিতে নেই? প্রচন্ড জনপ্রিয় দলটির এই দৈন্যদশা মেনে নেয়া যায়? নিশ্চয়ই যায় না।
বিষয়টিকে বিএনপি কিভাবে দেখে, জানি না। তবে বাঙালী ভালভাবে দেখে না। বাঙালী মনে করে এটা আর কিছুই না; নোংরা রাজনীতির দেশীয় চমৎকার উদাহরণ মাত্র। মিথ্যের বেসাতীতে ভরা অসত্য অনুশীলনের উদাহরণ। কিন্তু মনে রাখা দরকার, দীর্ঘদিন মানুষ অসত্যের সাথে চলতে পারে না। পারে না সত্যকে লুকিয়ে রাখতে। হাতের তালু দিয়ে যেমন আকাশ ঢাকা যায় না, তেমনি সত্যকেও কখনো আড়াল করে রাখা যায় না। সত্য সত্যের মতই একদিন উদ্ভাসিত হয়। সাংবাদিক বেঁধে রাখলেও হয়, ভুল তারিখে জন্মদিন পালন করলেও হয়।