Home জাতীয় উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে ৩০টি স্পটে ‘কৃষকবন্ধন’ পালিত

উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে ৩০টি স্পটে ‘কৃষকবন্ধন’ পালিত

22

বিশেষ প্রতিনিধি: পঞ্চগড় থেকে যমুনা সেতু ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলাসমূহের মহাসড়কে ‘কৃষকবন্ধন’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।কৃষক সমিতির আয়োজিত ‘কৃষকবন্ধন’ আজ ১৭ জুন শনিবার সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত পালিত হয়।
সারসহ সকল প্রকার কৃষি উৎপাদন উপকরনের দাম কমাও, ন্যূনতম ১৫০০ টাকা মণ দরে প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় কর, বরেন্দ্র অঞ্চলসহ সারাদেশে কৃষি সেঁচে অনিয়ম-হয়রানি-দুর্নীতি বন্ধ কর, চাহিদা ও সময়মতো ন্যায্য দামে সেঁচের পানি বিতরণ নিশ্চিত কর, প্রকৃত কৃষককে কৃষি কার্ড দাও, শস্য বীমা ও পল্লী রেশন চালু কর এই দাবিতে উত্তরবঙ্গের ১৬ টি জেলার মহাসড়কের প্রধান প্রধান স্পটে ব্যাপক সংখ্যক কৃষকের অংশগ্রহণে এই ‘কৃষকবন্ধন’ কর্মসূচি পালিত হয়।
পঞ্চগড় ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে একযোগে শুরু হয়ে যমুনা সেতুর সন্নিকটে সিরাজগঞ্জ জেলার কড্ডার মোড় পর্যন্ত কৃষকরা তাদের দাবি আদায়ের জন্য একযোগে অবস্থান করেন।
কৃষকবন্ধন কর্মসূচির প্রধান স্পটগুলোতে কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড়ে সংগঠনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. এসএমএ সবুর, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌরাঙ্গ মল্লিক, শহিদুল্লাহ সবুজ, কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ও জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন; পঞ্চগড় জেলায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জহির চন্দন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবিদ হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হুমায়ুন কবির, হাসেন আলী নীলফামারীর সৈয়দপুরে সহসভাপতি নিমাই গাঙ্গুলী ঠাকুরগাঁও বাস স্ট্যান্ডে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পুলক কুমার দাশ, খোঁচাবাড়ীতে জেলার নেতৃবৃন্দ; দিনাজপুরের বীরগঞ্জে কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মো: আলতাফ হোসাইন, দশমাইল, রাণীরবন্দরে জেলার নেতৃবৃন্দ; রংপুরের মেডিকেলে কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপদেষ্টা শাহাদাত হোসেন, মিঠাপুকুরে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আমজাদ হোসেন সরকার, মডার্ন মোড়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নুর মোহাম্মদ আনসার, পাগলাপীরে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আলতাফ হোসেন, বাসস্ট্যান্ড, জায়গীর, পীরগঞ্জ, ধাপেরহাটে জেলার নেতৃবৃন্দ; গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন খান, পলাশবাড়ীতে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাদেকুল ইসলাম; বগুড়ার মোকামতলায় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হুমায়ুন কবির, সিপিবি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড আমিনুল ফরিদ, সাতরাস্তায় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য লাকী আক্তার, হাসান আলী সেখ, বনানীতে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাড. মহসিন রেজা, মাটিডালি, শেরপুরে জেলা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ কুমার পাল, মাটিঢালিতে জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ; লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলা রংপুরে মডার্ন মোড়ে; সিরাজগঞ্জের ঘুরকায় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোবারক হোসেন ঝন্টু, রায়গঞ্জে জেলার নেতৃবৃন্দ; রাজশাহীতে বরেন্দ্র আন্দোলন সমন্বয় কমিটির সদস্য রাগীব আহসান মুন্না, নাটোরের বনপাড়ায় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আসাদুল্লাহ টিটো; পাবনার দাসুরিয়ায় কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আহসান হাবিব অবস্থান করেন; নওগাঁ জেলার কৃষকবৃন্দ বগুড়ার বনানী ও জয়পুরহাট জেলার কৃষকবৃন্দ বগুড়ার মোকামতলা মহাসড়কের স্পটে অংশগ্রহণ করেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে গভীর নলক‚প দিয়ে ভ‚-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে পরিবেশ প্রকৃতি ধ্বংসের মুখে পরেছে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সেচ অপারেটররা কৃষকদের চাহিদামতো ও সময়মতো পানি দেয় না। নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে পানি বিতরণে করে কৃষদের জিম্মি করে থাকে। সময়মতো সেচের পানি না পেয়ে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় আদিবাসী কৃষক রবি মার্ডি ও অভিনাথ মার্ডি কীটনাশক বিষপান করে আত্মহত্যা করেন। গত এপ্রিল মাসে একই কারণে মুকুল সরেণ আদিবাসী কৃষক কীটনাশক বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে বেঁচে যান। নেতৃবৃন্দ দাবি করেন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনিয়ম হয়রানি দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষি পরিবেশ প্রাণ প্রকৃতি রক্ষায় গভীর নলক‚প দিয়ে ভ‚গর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধ করে নদী-খাল-বিল খনন করে ভ‚-উপরিস্থ পানির সংরক্ষণ করতে হবে, নদী খাল বিল জলাশয় দখল মুক্ত করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে, জাতীয় বাজেটে কৃষিখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সারা বিশ্বে যখন সারের দাম কমে তখন সরকার আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বৃদ্ধি, ডলার সংকট আর রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধের দোহাই দিয়ে দেশবাসীকে হতবাক করে গত ১০ এপ্রিল সকল প্রকার সারের দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা বাড়িয়ে দিলো। আন্তর্জাতিক বাজারে গত একবছরে সারের দাম কমেছে। বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক বাজার সংক্রান্ত প্রতিবেদনে গত একবছরের সারের দামের তুলনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, গত মার্চ ২০২২ থেকে মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত ইউরিয়া প্রতি টন ৮২১ ডলার থেকে কমে ৩১৩.৫ ডলারে ৬১.৮১%, ডিএপি ৪৯৪.৯ ডলার থেকে কমে ৬০৬ ডলার ২৩.৭৩%, টিএসপি ৭১৫.৬ ডলার থেকে কমে ৫৩৭.৫ ডলার ২৪.৮৮%, এমওপি ৮৫১.৭ ডলার থেকে কমে ৪৫৩ ডলার ৪৬.৮১% নেমেছে। জানুয়ারি থেকে মার্চ ২০২২ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও মার্চ মাসের পর তা নি¤œমুখী, যা এখনো অব্যাহত। অবিলম্বে সকল প্রকার সারের দাম কমাতে হবে।
এক মণ ধানের উৎপাদন খরচ ১২৬৭.৫০ টাকা। কেজিপ্রতি ৩১.৬৮ টাকা। অথচ সরকার ধান ক্রয় করবে ৩০ টাকা কেজি বা ১২০০ টাকা মণ দরে। সরকার ১২০০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে দেয়ার পরও কৃষক সারাদেশেই লুটেরা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ফরিয়া দালালদের কাছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এভাবেই কৃষক প্রতিবছর লোকসান দিয়ে দিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে। ন্যূনতম ১৫০০ টাকা মণ দরে প্রকৃত উৎপাদক কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, অবিলম্বে দাবি আদায় না হলে সারাদেশের কৃষকের অংশগ্রহণে কঠোর করে দাবি আদায় করা হবে।