Home জাতীয় ইউপি নির্বাচন: উত্তপ্ত বাউফলের নওমালায় বহিরাগত সন্ত্রাসীদের আনাগোনায় জনমনে আতঙ্ক

ইউপি নির্বাচন: উত্তপ্ত বাউফলের নওমালায় বহিরাগত সন্ত্রাসীদের আনাগোনায় জনমনে আতঙ্ক

204

আহমেদ জালাল :পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নওমালা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তপ্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: শাহজাদা হাওলাদার ও তাঁর কর্মী-সমর্থকদের অভিযোগ, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কামাল হোসেন বিশ্বাসের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা দফায় দফায় ঘোড়া প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি-ঘর-দোকানপাটে হামলা-ভাঙচুরের তাণ্ডবলীলা চালিয়ে আসছে। বিশেষ করে কালো টাকার বিনিময়ে নির্বাচনী এলাকায় বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ভাড়ায় এনে জনগণের মাঝে ভয়াবহ আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে। রোববার (৭ নভেম্বর) বাউফল উপজেলার নওমালা ইউনিয়নে কয়েক’শ বহিরাগত লোকজন প্রবেশের লক্ষে দাসপাড়া ইউনিয়নের খেজুরবাড়ীয়া এলাকার (চৌমুহনী বাজার) সংলগ্ন মোঃ সোহরাব খানের বাড়িতে দুপুরে খাবারের আয়ােজন করা হয়। কামাল বিশ্বাসের পক্ষে গণসংযোগের নামে এসব বহিরাগতরা এলাকায় প্রবেশ করে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টির পায়ঁতারায় লিপ্ত রয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বহিরাগতদের খাবারের আয়োজন বন্ধ করে দিয়েছে। অবশ্য ওইসব বহিরাগতরা রাতের আধারে বা যেকোন সময়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রবেশের আশংকা করেছেন এলাকার শান্তিপ্রিয় জনগণ। এজন্য প্রশাসনকে কঠোর ভূমিকায় থাকার জন্য আশু দৃষ্টি কামনা করেছেন সাধারন জনগণ। একইদিন রোববার সন্ধ্যায় ইউনিয়নের নগরের হাটে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাদা হাওলাদারের কর্মী কামাল সরদার নামের এক যুবককে মারধর করে কামাল বিশ্বাসের পালিত সন্ত্রাসী মামুন ওরফে চোরা মামুনসহ বেশ কয়েকজন। স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত শুক্রবার (৫ নভেম্বর) রাতে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী কামাল হোসেন বিশ্বাসের কর্মী সমর্থকরা অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জ্বিত হয়ে বাবুরহাট ও বিডিসি এলাকায় ৭ টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কুপিয়ে ক্ষয়ক্ষতি করে। এবং ৪-৫ টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এসময় ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা নিরব ভূমিকায় ছিলো। শনিবার (৬ নভেম্বর) সকালে পূর্ব নওমালা ৮ নং ওয়ার্ড চৌকিদার বাড়ির সংলগ্ন নৌকা প্রতীকের কর্মী সমর্থকরা আ’লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: শাহজাদা হাওলাদারের (ঘোড়া প্রতীক) কর্মী সমর্থকদের ওপর অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে হামলার চেষ্টা করে। এসময় ঘোড়া প্রতীকের কর্মীরা নৌকা প্রতীকের কর্মীদের পাল্টা ধাওয়া দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের ১৫ থেকে ২০ জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় শনিবার সকাল ১০ টার দিকে উভয় পক্ষের ১১ জন বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এরআগে সোমবার (১ নভেম্বর) বেলা ১১ টার দিকে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা অস্ত্রেসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: শাহজাদা হাওলাদারের নগরেরর হাট সংলগ্ন বাসভবনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। এছাড়া চেয়ারম্যানের বাসভবনের সামনে একটি দোকান গুড়িয়ে দেয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। ঘটনার সময়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহজাদা হাওলাদার নওমালার বাবুর হাট এলাকায় গণসংযোগ করছিলেন। খবর পেয়ে শাহাজাদা হাওলাদারের সমর্থকরা ঘটনাস্থলে এসে কামাল বিশ্বাস সমর্থক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এসময় উভয়পক্ষে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তৎসময়ে ফাঁকা গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে শাহজাদা হাওলাদারের সমর্থকদের জোরোলো প্রতিরোধের মুখে সটকে পড়েন কামাল বিশ্বাস অনুসারীরা। ওইদিন সোমবার সন্ধ্যারাতে বটকাজল গ্রামের মোঃ আইয়ুব আলী ওঝা ও সাদ্দাম ওঝার বসত ঘর এবং বেল্লাল ওঝার দোকানে কামাল বিশ্বাসের কর্মী জাকির ফকির, আমির ফকির, দুলাল মৃধা ও হারুন মৃধার নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। এরআগে শনিবার (৩০ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে বাউফলের নওমালা ইউনিয়নের আব্দুর রশিদ খান ডিগ্রি কলেজের পূর্ব পাশে গাজী বাড়ির সামনে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাদার কর্মীদের লক্ষ্য করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আ’লীগ নেতা কামাল হোসেন বিশ্বাসের অস্ত্রধারী ক্যাডার বাহিনী গুলি করে। এতে ছাত্রলীগ নেতা সজীব প্যাদা গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। আহত সজিব বলেন, চেয়ারম্যান প্রার্থী কামাল হোসেন বিশ্বাসের সমর্থক শাহাবুদ্দিন আকনের (৪৬) ছোড়া গুলিতে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত শাকিব হোসেন জানান, শাহাবুদ্দিন আকনের নেতৃত্বে ১০/১৫ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গুলি করে। এতে সজীব গুলিবিদ্ধ হন। পরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাঁর শরীর থেকে গুলি বের করা হয়। এদিকে, ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাউফল উপজেলার নওমালা ইউনিয়নে গত একসপ্তাহে বিভিন্ন হামলা পালটা হামলায় উভয়পক্ষের শতাধিক কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন। এবং কামাল বিশ্বাস অনুসারী কর্তৃক গুলি করার ঘটনা ঘটেছে। এতে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাদার কর্মী ছাত্রলীগ নেতা সজীব গুলিবিদ্ধ হয়। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাঁর ঘাড় থেকে গুলি বের করা হয়েছিলো। তবে পুলিশ এখন পর্যন্ত কোন অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি। এমনকি গুলিবিদ্ধের ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের পর আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হয়েছেন। নওমালা ইউনিয়নে দায়িত্বরত পুলিশের দুই সদস্যের বিরুদ্ধে কামাল বিশ্বাসের পক্ষ হয়ে কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীরা। এই পুলিশ পুলিশ সদস্যরা হলেন, এসআই নাসির ও রুহুল আমিন(২)। অপরদিকে ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: শাহজাদা হাওলাদারের বাসভবনে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে উল্টো তারই কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন একটি মামলা দায়ের করা হয়। আনারস প্রতীকের প্রার্থী দাবিদার বজলুর রহমান নামের ব্যক্তির দায়েরকৃত অভিযোগটি রেকর্ড করে থানা পুলিশ। মামলার বাদী বজলুর রহমান অভিযোগে উল্লেখ করেন, তিনি আনারস প্রতীকে ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি সহ কয়েকজনকে নিয়ে আসার পথে মধ্য নওমালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে আসামিরা গতিরোধ করে মারধরের চেষ্টা করে। সেখান থেকে তারা ডাক্তার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। সেখানে গিয়ে আসামিরা কয়েকজনকে মারধরে আহত করে। এরপর আবারো তাদের ওপর হামলার বিষয় অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, নওমালা ইউনিয়নে আনারস প্রতীকের কোন কর্মী-সমর্থক নেই, কোন ব্যানার পোষ্টার-লিফলেট নেই। নেই কোন প্রচার প্রচারণা। আনারস প্রতীকের হয়ে নির্বাচনে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রচার চালানোর কোন ধরণের সতত্যা মিলেনি। এমনকি আনারস প্রতীকের প্রার্থী বজলুর রহমানও বলেছেন, তিনি নির্বাচনে আনারস প্রতীকের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না। কে এই আনারস প্রতীকের বজলুর রহমান? বজলুর রহমান মূলত: নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কামাল বিশ্বাসের নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এদিকে, নির্বাচনী এলাকায় বহিরাগত সন্ত্রাসী কর্তৃক ছাত্রলীগ কর্মীকে গুলিবিদ্ধের ঘটনা, স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাসভবনে হামলা চালিয়ে উল্টো থানায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড, স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের বাড়ি-ঘর-দোকানপাটে অব্যাহত সন্ত্রাসী হামলা এবং বহিরাগতদের আনাগোনার বিষয়ে থানা পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন সচেতনমহল। চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহজাদা হাওলাদার বলেন, জনসমর্থন নাই তাই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করছে কামাল বিশ্বাস ও তার অনুসারীরা। তারা অবৈধ অস্ত্র ও কালো টাকার মাধ্যমে ভোট ডাকাতি করে বিজয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কামাল বিশ্বাসের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে আমার এক কর্মীকে গুলি করেছে। আমার বাসভবনে হামলা চালিয়েছে। আমার কর্মীদের বাড়ি-ঘরে অব্যাহতভাবে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, নওমালার মানুষ শান্তিপ্রিয়, তারা কোন ধরণের অরাজকতা, সন্ত্রাসীদের অভায়ারন্য হিসেবে দেখতে চায় না। জনগণের রায়ে এবারও ওই অপশক্তি পরাজিত হবে। নৌকার প্রার্থী কামাল হোসেন বিশ্বাসের ভাষ্য, আমার কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করা হচ্ছে। আমার কোন কর্মী উশৃঙ্খল কর্মকাণ্ডে জড়িত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আল মামুন বলেন, অপ্রতিকর ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে বিভিন্ন পয়েন্টে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, নওমালা ইউপি নির্বাচনের ভোট দ্বিতীয় ধাপে ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। ওই ইউপিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী কামাল হোসেন বিশ্বাস। বর্তমান চেয়ারম্যান মো: শাহজাদা হাওলাদার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ঘোড়া প্রতীকে লড়ছেন। গত নির্বাচনেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ঘোড়া প্রতীকে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।