Home জাতীয় ‘আসানি’র গতিপথ উড়িষ্যার দিকে, শঙ্কা কাটছে বাংলাদেশের

‘আসানি’র গতিপথ উড়িষ্যার দিকে, শঙ্কা কাটছে বাংলাদেশের

29

ডেস্ক রিপোর্ট: বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’ উত্তর-পশ্চিমে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ ও উড়িষ্যার দিকে এগোচ্ছে। আস্তে আস্তে এটি দুর্বল হচ্ছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বাংলাদেশের উপকূল থেকেও কমেছে এর দূরত্ব। তাতে আসানি নিয়ে আপাতত শঙ্কা কাটছে বাংলাদেশের।

সোমবার (৯ মে) সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম বলেন, ‘চিন্তার কোন কারণ নেই। আজ পর্যন্ত এটা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই থাকবে। ওই রকম কোন পরিবর্তন হবে না। আজকের পর আসানি আস্তে আস্তে দুর্বল হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপাতত বাংলাদেশ শঙ্কামুক্ত থাকবে। তবে বৃষ্টি, বাতাস থাকতে পারে। এখন পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, এটি ভারতের উড়িষ্যার দিকে যাচ্ছে। তবে উপকূলে ধেয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এর গতি কমে যাবে।’

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ‘আসানি’র প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টি বাড়বে। সবশেষ তথ্যানুযায়ী, এটি ঘণ্টায় ১৯ কিলোমিটার বেগে উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোচ্ছিল।

বিজ্ঞপ্তিতে অধিদপ্তর জানিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’ উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি গত মধ্যরাতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ১১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে সাগর।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (মৌসুম ভবন) জানিয়েছে, আগামী ১০ মে ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের উত্তর অন্ধ্র প্রদেশ ও উড়িষ্যা উপকূলের কাছাকাছি গিয়ে উত্তর ও উত্তর-পূর্বদিকে বাঁক নিতে পারে। ১২ মে’র দিকে এটি দুর্বল হয়ে উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের খুলনা-সাতক্ষীরা-বরিশাল উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুসারে ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ১২০ কিলোমিটার। এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে ঘণ্টায় প্রায় ১৭ কিলোমিটার বেগে। আগামী ২৪ ঘণ্টা ঘূর্ণিঝড়টি সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থায় থাকবে। এই সময়ে ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের পরিধিতে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার ও দমকা হাওয়া সহ ১৭০ কিলোমিটার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি জানান, বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সমগ্র বঙ্গোপসাগরের মধ্যে তাপমাত্রা সবচেয়ে কম ভারতের ওড়িশা উপকূলে। সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে। এদিকে চট্টগ্রাম ও মায়ানমার উপকূলে পানির তাপমাত্রা ভারতের ওড়িশা উপকূল থেকে বেশি। আবহাওয়া পূর্বাভাসের বিভিন্ন মডেল থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ঘূর্ণিঝড় আসানি ১১ মে ভোরে ভারতের ওড়িশা উপকূলে পৌঁছাতে পারে। ওইদিন দুপুরের পর থেকে ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দিকে অগ্রসর হবে।

তবে এই গবেষক আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের জিএফএস-এর পূর্বাভাস বলছে, ঘূর্ণিঝড় আসানি বাংলাদেশের কক্সবাজার ও মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উপর দিয়ে স্থলভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা রয়েছে। ইউএস নেভির জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার থেকে প্রচারিত সর্বশেষ তথ্য অনুসারে ঘূর্ণিঝড় আসানি বাংলাদেশের নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের উপকূলের দিকে অগ্রসর হতে পারে ১১ মে দুপুর ১২টার পর। সে অনুযায়ী ১৩ মে মধ্যরাতের পর থেকে উপকূলে আঘাত করার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে রবিবার (৮ মে) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘আসানি’ বাংলাদেশে আসার এখন পর্যন্ত কোনো আশঙ্কা নেই। এরপরও ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে বাংলাদেশ।-ইত্তেফাক