Home শিক্ষা ও ক্যাম্পাস বিতর্কিত ও বিবাহিতদের নিয়ে জাবি ছাত্রলীগের হল কমিটি

বিতর্কিত ও বিবাহিতদের নিয়ে জাবি ছাত্রলীগের হল কমিটি

195

জাবি প্রতিনিধি: অবাঞ্ছিত শাখা ছাত্রলীগ হাবিবুর রহমান লিটন নিজ গদি বাঁচাতে তড়িঘড়ি করে দুইটি হলের হল কমিটি ঘোষনা করছেন। তড়িঘড়ি করতে গিয়ে শোকজপ্রাপ্ত, মারধরকারী, সাবেক হল থেকে বিতারিত, বিবাহিতদের দিয়ে হল কমিটি ঘোষনা করেছে।

গত ৩১ জানুয়ারি জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের স্বাক্ষরে শেখ রাসেল হল ও শেখ হাসিনা হলের হল কমিটি ঘোষণা করেন।

শেখ হাসিনা হল কমিটিতে মীর নিশাত নাওয়ার বিবাহিত হলেও সহ-সভাপতির পদ পেয়েছেন। তিনি গতবছরের ১৮ ই আগস্ট বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। যার কিছু ছবি প্রতিনিধির কাছে এসেছে। অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার বিনিময়ে তাকে হল কমিটিতে রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে কমিটিতে স্থান পাওয়া শেখ রাসেল হলের সভাপতি জোবায়েদ সাদিক আশিক, সাধারণ সম্পাদক অলক কুমার পাল ও মোস্তফা ফয়সাল রাফির বিরুদ্ধে একাধিক মারধর, মসজিদ ভাংচুর, গুলি করে হত্যার হুমকি ও হল থেকে সাময়িক বহিষ্কারের অভিযোগ রয়েছে।

শেখ রাসেল হলের সভাপতি জোবায়েদ সাদিক আশিকের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ২১ শে মার্চ বিশ্ব‌বিদ‌্যাল‌য়ের সা‌বেক‌ ছাত্রলীগের উপ ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ফয়সালকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগে বলা হয় ফয়সালকে ডেকে নিয়ে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ চত্বর সংলগ্ন পুকুর পাড়ে নিয়ে কিল-ঘুষি দেন। এ সময় সা‌থে থাকা ফয়সালের বান্ধবী মারধর ঠেকাতে গেলে তাকেও লাঞ্ছিত করেন । এ সময় তার বান্ধবীর গলায় থাকা সোনার চেইন ছিনতাই করারও অ‌ভি‌যোগ রয়েছে। এছাড়াও ২০১৮ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারী বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমানের পরিচয় জানতে চায় আশিক। তার জামার হাতা গুটানো জানতে চাওয়ায় আশিকুর কৈফিয়ত দিতে অস্বীকার করলে তা‌কে মারপিট শুরু করে এবং মারপিটের একপর্যায়ে তা‌কে পাশের লেকে ফেলে দেওয়ার অ‌ভি‌যোগ রয়েছে। এছাড়া খেলার মাঠের জোবায়েদ আশিককে লাল কার্ড দেখানোকে কেন্দ্র করে ফোনে অপরিচিত নাম্বার থেকে শারিরীক শিক্ষা অফিসের উপ-পরিচালক এস এম সাদাত হোসেনকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।এ নিয়ে আশুলিয়া থানায় জিডি করা হয় ।জিডি নং ৩৫২।

অন্যদিকে ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর আন্ত:হল ক্রিকেট টুর্নামেন্টেকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিরোধের জেরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শহীদ রফিক জব্বার হলের কয়েকটা কক্ষ ও মসজিদের জানালা, মসজিদের ফুলের টব ভাঙচুরের ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন হলের সেক্রেটারির দায়িত্বপ্রাপ্ত অলক কুমার পাল ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা ফয়সাল রাফি। সেসময় তাদের শহীদ রফিক-জব্বার হল থেকে শোকজ করে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে তাদের হল থেকে বের করে দেয় ঐ হলের ছাত্রলীগ সিনিয়র নেতাকর্মীরা।

এর আগে, গত ২৩ জানুয়ারি লিটনের বিরুদ্ধে হল কমিটি দিতে ব্যর্থতা, কর্মীদের সময় না দিয়ে জমি দখলে মনোনিবেশ ও অন্য হলের নেতা-কর্মীর সঙ্গে অশোভন আচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন ছয় হলের তার অনুসারীরা। অবাঞ্ছিত শাখা ছাত্রলীগ সেক্রেটারির স্বাক্ষরে হল কমিটি হওয়ায় বিক্ষোভ করেছে ৩ শতাধিক নেতাকর্মী।

একটি সুত্র জানায়, বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের মুখোমুখি নতুন হল কমিটিকে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার জন্য কারো পরামর্শ না নিয়েই এই হল কমিটি ঘোষণা করেছেন নেতারা।

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫ এর (গ) ধারায় বলা আছে বিবাহিত কোন ব্যক্তি ছাত্রলীগের কোন কমিটিতে স্থান পাবেন না। যোগ্য প্রার্থী থাকার পরেও বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত ব্যক্তিদের দিয়ে কমিটি দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অন্যান্য নেতাকর্মীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শেখ হাসিনা হলের এক কর্মী বলেন, যারা নিবেদিত প্রাণ হয়েও ছাত্রলীগের জন্য কাজ করেছে তাদেরকে বাদ দিয়ে কমিটি দেওয়া হয়েছে। যারা কাজ করেনি, বিবাহিত তারা পেয়েছে কমিটি। যারা হলে থাকে না তাদের দিয়ে কমিটি দেওয়া হয়েছে।

বুধবার বিকেলে জাবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাবিহা ইয়াসমিন ( সাথী) ও নাজমিন সুলতানা নাবিলা কে সাধারণ সম্পাদক করে শেখ হাসিনা হল ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এ বিষয়ে জাবি শাখা ছাত্রলীগের সেক্রেটারিকে একাধিকবার ফোন দিয়ে যোগাযোগ করা যায়নি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, আমরা নিয়ম তান্ত্রিকভাবেই হল কমিটি দিয়েছি। যতদিন কেন্দ্র থেকে কোনো ধরনের দিকনির্দেশনা না আসছে, ততদিন জাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লিটনই থাকবে। যে ৬টি হল তাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে, সে হলগুলোতে আমরা কমিটি দিব না।