Home বাণিজ্য ও অর্থনীতি আমানতের টাকা আত্মসাৎ

আমানতের টাকা আত্মসাৎ

44

ডেস্ক রিপাের্ট: দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের কোম্পানি ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। তবে নতুন পর্ষদে বর্তমান পরিচালকদের কেউ কেউ স্থান পাবেন। দুই এক দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করবে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড কমিশন (বিএসইসি)। গত বুধবার বিএসইসির কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে শনিবার বিকালে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হয়। কিন্তু রিং হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে প্রতিষ্ঠানটির কোম্পানি সেক্রেটারি মাহমুদুল হাসান বলেন, পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না। বিষয়টি আপনার কাছে প্রথম শুনলাম। তবে বিএসইসির তদন্ত কমিটি যেসব কাগজপত্র চেয়েছে, আমরা সবকিছুই তাদের দিয়েছি।
জানা গেছে, গ্রাহকদের দাবি পরিশোধ না করাসহ নানা আর্থিক অনিয়ম খতিয়ে দেখতে চলতি বছরের জুন মাসে কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি। কোম্পানির একজন উদ্যোক্তা পরিচালকসহ বেশ কয়েকজনের অভিযোগের পর সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯-এর ২১ ধারা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩-এর ১৭ক ধারা অনুযায়ী এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন বিএসইসির সহকারী পরিচালক মো. শাহনেওয়াজ ও মো. সিরাজুল ইসলাম। তদন্ত কমিটি বেশ কিছু অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা চিহ্নিত করেছে। এর আগে প্রাথমিকভাবেই ফারইস্ট ইসলামী লাইফের আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে এক প্রভাবশালী পরিচালককে আর্থিক সুবিধা দিতে গিয়ে কোম্পানির স্থায়ী আমানত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে কোম্পানির তিন বছরের আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। ওই নিরীক্ষা অনুসারে ২০১৬ সালে বিভিন্ন ব্যাংকে কোম্পানির স্থায়ী আমানত ছিল এক হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। আর ২০১৮ সালে তা ৪১৩ কোটি টাকায় নেমে আসে। ২০১৭ সালে কোম্পানির বিনিয়োগ ছিল ২৭৫ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে তা কমে ২৫১ কোটি টাকায় নেমে আসে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়কালে, কোম্পানির মোট জীবন বিমা পলিসির তিন হাজার ২৬৯ কোটি টাকা থেকে ৬৩ কোটি টাকা কমেছে। আর আর্থিক সক্ষমতা কমে যাওয়ায় গ্রাহকদের দাবি যথাযথভাবে পূরণ করতে পারছে না কোম্পানিটি। এতে কোম্পানির গ্রাহক হারানোর পাশাপাশি জীবন বিমা পলিসিও কমেছে।

একই সঙ্গে ফারইস্ট লাইফের বিনিয়োগের পরিমাণও কমেছে।

পর্ষদে চেয়ারম্যান হিসাবে রয়েছেন মো. নজরুল ইসলাম এবং ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. ইফফাত জাহান। পরিচালক হিসাবে রয়েছেন মো. হেলাল মিয়া, ড. মো. মোকাদ্দেস হোসেন, আয়েশা হুসনে জাহান, নাজনীন হোসেন, ড. মো. মনোয়ার হোসেন, রাবেয়া বেগম, মুসলিমা শিরিন, মোহাম্মদ সোহেল আরিফ এবং আবদুল আউয়াল। এ ছাড়াও স্বতন্ত্র পরিচালক হিসাবে রয়েছেন এবিএম হোসাইন আহমেদ, মো. নজরুল ইসলাম মোল্লা এবং মো. আকতার হোসেন সান্নামাত।

২০০৫ সালে কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে পরিশোধিত মূলধন ৭৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আর শেয়ার সংখ্যা সাত কোটি ৪৭ লাখ ৪২ হাজার। এর মধ্যে উদ্যোক্তাদের ৩০ দশমিক ৫৫ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪১ দশমিক ১৯ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে দশমিক ৮১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। কোম্পানির ১০ টাকার প্রতিটি শেয়ারের সর্বশেষ বাজারমূল্য ৫৮ দশমিক ৫০ টাকা।-যুগান্তর