এম এইচ নাহিদ ।। আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পরেই গর্বের পদ্মাসেতুর বাস্তবযাত্রা শুরু। শুভ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে দুই অনুষ্ঠানের সেতুর উদ্বোধনের পর গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে আগামীকাল ভোর ৬ টায়। তারপরেই দক্ষিণ বাংলার মানুষ মাত্র ৫ মিনিটে সাঁ সাঁ করে পাড়ি দিবে প্রমত্মা পদ্মানদী। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রবে দুনিয়া। মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় এখন পুরো বাংলাদেশ। অপেক্ষায় গোটা বিশ্ব।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সব আয়োজন শেষ। পদ্মার দুই পাড়ে এখন সাজ সাজ রব। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া, শরীয়তপুরের জাজিরা ও মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা এলাকা ব্যানার-ফেস্টুনে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। সড়কের দুই পাশে এবং নিয়ন আলোয় আলোকিত গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলো। পুরোমাত্রায় উৎসবের আমেজ। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরই জাজিরা প্রান্তে শিবচরের কাঁঠালবাড়ি বাংলাবাজারে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণকালের বৃহৎ জনসভা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৭ মার্চের ভাষণের পর এটি’ই হবে সর্বোবৃহৎ জনসভা। যেখানে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গর্বের সাথে উচ্চারণ করবেন, বাংলাদেশ চাইলেই পারে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু তার জ্বলন্ত প্রমাণ। ইতোমধ্যে সেতুর দুই প্রান্ত ও জনসভাস্থল ও আশেপাশে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখা হয়েছে। এনএসআই, এসবি, ডিবি, র‌্যাব-পুলিশসহ সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সদা তৎপর রয়েছেন। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে একরকম ঢেলে সাজানো হয়েছে ওই এলাকাকে। মাওয়া প্রান্তে ঢাকা থেকে যাওয়ার পথে বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু থেকেই রাস্তার দুই ধার সাজানো হয়েছে। বড় বড় ব্যানার ও সাইনবোর্ড শোভা পাচ্ছে। আর ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে এক্সপ্রেসওয়ের একেবারে শুরু থেকে মাওয়া ঘাট পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে ওয়াল এবং আশপাশের বড় বড় বেশ কিছু ভবনে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। জাজিরা প্রান্তে জনসভাস্থলের মূল যে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে সেটি করা হয়েছে পদ্মা সেতুর স্প্যানের আদলে। আজ এই মঞ্চে দাঁড়িয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তৃতা দেবেন। আশা করা হচ্ছে এখানে দশ লাখেরও বেশি মানুষের সমাগম ঘটবে।

জনসভাকে কেন্দ্র করে ৪০ শয্যাবিশিষ্ট ৩টি অস্থায়ী হাসপাতাল ও ৬ শতাধিক বাথরুম বানানো হয়েছে। প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জনসভাস্থলের সভামঞ্চ পদ্মা সেতুর আদলে সাজানো হচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা ও নিরাপত্তা চৌকি। প্রায় ১৫ একর জমিতে জনসভাস্থল করা হয়েছে।

মঞ্চের ঠিক সামনে পানিতে ভাসতে থাকবে বিশালাকৃতির নৌকা। তার পাশে ১১টি পিলারের উপর ১০টি স্প্যান বসিয়ে তৈরি করা হচ্ছে পাটাতন। দেখে মনে হবে সেতুর পাশ দিয়ে বড় একটি নৌকা চলছে।

সূত্রমতে, সভাস্থলে ৫০০ অস্থায়ী শৌচাগার, ভিআইপিদের জন্য আরও ২২টি শৌচাগার, সুপেয় পানির লাইন, ৩টি ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল, নারীদের আলাদা বসার ব্যবস্থা, প্রায় ২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সভাস্থলে দূরের দর্শনার্থীদের জন্য ২৬টি এলইডি মনিটর, ৫০০ মাইকের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া নদীপথে আসা মানুষের জন্য ২০টি পন্টুন তৈরি করা হচ্ছে। আজই শুরু হবে সেই বিশাল কর্মযজ্ঞের অনুষ্ঠানমালা। তারপরেই খুলে যাবে দক্ষিণ বাংলার মানুষের স্বপ্নের দুয়ার।