Home জাতীয় অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড: দায়ী কর্মকর্তাদের শাস্তি ও হতাহতদের ক্ষতিপূরণ দাবি

অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড: দায়ী কর্মকর্তাদের শাস্তি ও হতাহতদের ক্ষতিপূরণ দাবি

36

ডেস্ক রিপোর্ট: এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড ও হতাহতের ঘটনায় দায়ী চার সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর শাস্তি এবং হতাহত পরিবারগুলোকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানিয়েছে পরিবেশ ও নাগরিক অধিকারবিষয়ক ১২টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। দুর্ঘটনার দুই মাস (৬০ দিন) পূর্তিতে আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনগুলোর নেতারা এ দাবি জানান।

‘প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত আধুনিক নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় নৌদুর্ঘটনা প্রতিরোধ অপরিহার্য’ উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, কোনো দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের শাস্তি না হলে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম যাত্রীবোঝাই চলন্ত লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড ও অর্ধশতাধিক প্রাণহানির ঘটনায় লঞ্চটির চার মালিক, দুই মাস্টার ও দুই ড্রাইভারের বিরুদ্ধে নৌ আদালতে মামলা এবং তাদের মধ্যে সাতজনকে কারাবন্দি করা হলেও দায়ী সরকারি কর্মকর্তাদেরকে দুই মাসেও কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। অথচ দুর্ঘটনার পর গঠিত সরকারি-বেসরকারি একাধিক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে মালিক, মাস্টার ও ড্রাইভারসহ ১২ জনকে দায়ী করা হয়েছে; যাদের মধ্যে চার সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন। এছাড়া অগ্নিকাণ্ডে নিহত পরিবারগুলো ও গুরুতর আহতরা আজো কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৭ জানুয়ারি নৌ মন্ত্রণালয় দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানকে পৃথক দুটি চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের ফিটনেস পরীক্ষাকারী কর্মকর্তা নৌ অধিদপ্তরের সদরঘাট কার্যালয়ের প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক মো. মাহবুবুর রশীদ ও পরিদর্শক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান এবং বিআইডব্লিউটিএর ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক) জয়নুল আবেদিন ও পরিবহন পরিদর্শক দীনেশ কুমার সাহার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। বিভাগীয় মামলা চলাকালে দায়ী কর্মকর্তারা যেন অন্যায়ভাবে প্রভাব বিস্তার করতে না পারেন, সে জন্য সরকারি কর্মচারি (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয় চিঠিতে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর বিবৃতিতে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করে বলা হয়, নৌ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর দায়ী কর্মকর্তাদের বদলি করা হয়েছে। তবে নতুন কর্মস্থলে তারা যথারীতি আগের দায়িত্বই পালন করছেন। কিন্তু বিভাগীয় মামলা চলাকালে অন্যায় প্রভাব বিস্তার ঠেকাতে মন্ত্রণালয় যে নির্দেশনা দিয়েছে, সে বিষয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিবৃতিতে অবিলম্বে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদেরকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার ও সাময়িক বরখাস্ত এবং হতাহত পরিবারগুলোকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের জোর দাবি জানানানো হয়।

বিবৃতিদাতারা হলেন- গ্রিন ক্লাব অব বাংলাদেশের (জিসিবি) সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুর রহমান সেলিম, নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সভাপতি হাজী মোহাম্মদ শহীদ মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে, নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন আন্দোলনের সদস্যসচিব আমিনুর রসুল বাবুল, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, মিডিয়া ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডেভেলপমেন্টের (মেড) নির্বাহী পরিচালক রফিকুল ইসলাম সবুজ, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের মহাসচিব মাহবুল হক, প্রভারটি ইমুলিনেশন এ্যাস্ট্যিান্স সেন্টার ফর এভরিহোয়্যারের (পিস) নির্বাহী পরিচালক ইফমা হুসেইন, জনলোকের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী রফিকুল ইসলাম সুজন, আলোকিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাপ্পিদেব বর্মণ, বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার হায়াৎ, যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দীন চৌধুরী ও দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার সমন্বয়ক গোলাম মোস্তফা।

গত ২৪ ডিসেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা থেকে বরগুনা যাওয়ার পথে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে যাত্রীবাহী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে অধশতাধিক মানুষ নিহত, মারাত্মক দগ্ধ হয়ে ৭২ জন হাসপাতালে ভর্তি এবং আরো প্রায় অর্ধশত মানুষ নিখোঁজ হন।