Home মতামত অনু গল্প: দ্বিতীয় ভূবন

অনু গল্প: দ্বিতীয় ভূবন

78

পলাশ কলি হোসেন শোভা: তাড়াহুড়ো করে বের হবার মুহূর্তে ই চেয়ারের সাথে ধাক্কা খেলো। ধুর! সব সময়ই আমার সাথেই কেন এমন হয়? নয় ছয় ভাবতে ভাবতে দরজা লক করে বেরিয়ে পড়ে আসাদউল্লাহ্। যাচ্ছে ধানমন্ডি পেশেন্ট এর বাসায়।

সাধারণত কারো বাসায় সে যায় না। যদি না কেসটি ইন্টারেস্টিং হয়। বাচ্চা মেয়েটির সমস্যা আসাদকে ভাবিয়ে তুলছে কদিন ধরেই তাই এই কেসটা সে নিজেই ড্রিল করতে চাচ্ছে। আর যে রেফারেন্সে যাচ্ছে তাও কম না। দেশের প্রথিতযশা লইয়ারের মেয়ে।

লিভিং রুমে ঢুকেই বড় একটা পেনটিং এ চোখ আটকে যায় আসাদের। জয়নুল বিখ্যাত সেই ছবি। কাঁদায় আটকে থাকা গরুর গাড়িটিক সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ঠেলছে গাড়িয়াল। আসলেই তো, মানুষ ও কখনো সখনো এভাবেই কাঁদায় না হোক মনজগতের জটিলতায় আটকে যায়, আর তখন তাকে সেখান থেকে টেনে আনতে হয় সাইকিয়াট্রিস্ট কেই।
আসাদ হঠাৎ নিজেকে ছবির গাড়িয়ালই ভেবে বসে। ওহ্! আপনি এসে গেছেন? বসুন। ঝুমি আসছে বলেই ভদ্রমহিলা ভেতরে চলে গেলেন।

ফাতেমা ওয়াদুদ বিখ্যাত বিচারপতির মেয়ে। মেয়ে ঝুমিকে নিয়ে মারাত্মক সমস্যায় পরেছেন। ঢাকার সব নামকরা মনোবিজ্ঞানীরা ও সুস্থ করতে পারছে না শুধু সিডেটিভ দিয়ে রাখে। স্কুল বন্ধ লোকজনের সাথে কথাও বন্ধ করে রুম লক করে বসে থাকে। নামকরা একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ক্লাস নাইনে পড়তো তাও বন্ধ।

খুব শান্ত একটি মেয়ে মায়ের সাথে এসে বসলো। আসাদ লক্ষ্য করলো বিষন্নতায় ছেয়ে আছে মেয়েটি।
কেমন আছো ঝুমি?
ভালো, আপনি আমার নাম জানেন?মায়ের বন্ধু আপনি?

নাতো, আমি তো তোমার বন্ধু হতে এসেছি। হবে আমার বন্ধু? খুব আগ্রহ নিয়ে আসাদ ঝুমির দিকে তাকায়। কোন ভাবান্তর দেখতে পায়না। মনে হলো অনেক দূর থেকে আপন মনে বলছে, আমারতো বন্ধু আছো।সারাক্ষণই আমার সাথে থাকে তোমাকে লাগবে না। তুমি চলে যাও।

ঠিক আছে চলে যাবো। ইকটু গল্প তো করি?
আসাদ ইশারায় ফাতেমা ওয়াদুদ কে চলে যেতে বললো।
উনি চলে যেতেই ঝুমি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে বললো, তুমি জানো এই পৃথিবীর কেউ ভালো না শুধু সে ছাড়া।
কে সে? আসাদের প্রশ্নের কোন উওর দেয়না ঝুমি।
ঠিক আছে বলতে হবে না কে সে। ঝুমি সব্বাই কে খারাপ বলছো কেন?

আমার পাপা মাম্মিকে ছেড়ে অন্য সংসারে আছে। মাম্মি সারাদিন কোর্ট নিয়ে আছে। কেউ আমাকে ভালো বাসেনি।
তোমার বড় ভাইয়া…. কথাটা শেষ করতে পারেনি ঝুমি বলউঠে, সবচে ঘৃনা করি পাপাকে আর ভাইয়া কে। ড্রাগ এডিক্ট ভাইয়া একদিন আমাকে…… শেষ করেনা কথাটা। আসাদ বুঝতে পারে কি বলতে চাইছে সে কথা বাড়ায় না। বাড়ি ছেড়ে নিরুদ্দেশ এক বছর হয়ে গেছে।না আসলেই আমি বাঁচি ।

আসাদকে কোন কিছু না বলে বের হয়ে যায়।
আসাদ ওর চলে যাওয়া দেখতে থাকে। ভাবে কতটা ঘৃণা থাকলে নিজের ভাইকে…
দুর এসব আমি কি ভাবছি?
কেমন দেখলেন ডাঃ?
কবে থেকে ওর সমস্যা? বছর খানেক তো হবেই। জানেন ও খুব হাসি খুশি উচ্ছ্বল মেয়ে ছিলো স্কুলে ভলিবল খুব ভালো খেলতো। হঠাৎ কি যে হলো একদম চুপচাপ , কারো সাথে মিশে না বাইরে যায় না দরজা বন্ধ করে থাকে।একদিন শুনি কার সাথে যেন কথা বলছে। রুমে গিয়ে দেখি কেউ নেই। কখনো ঝগড়া করতেও শুনি। অথচ জিগ্যেস করলে চুপ করে থাকে।

আচ্ছা আজ আমি আসি। দুদিন পর আসবো।
আসাদ বুঝতে পারে মেয়েটি আসলে ট্রমাটিক ডিজঅর্ডারে ভুগছে। এখন থেকে বের করে আনা তার জন্য সহজ।আর হেলুসিনিশনে ভুগছে।কল্পনার আরেক পৃথিবীতে ঝুমির বসবাস! ! !!!
দুদিন পর ফাতেমা ওয়াদুদ আসাদকে ঝুমির বেড়রুমে নিয়ে গেলেন। সুন্দর পরিপাটি রুম।আপন মনে কি যেন লিখছে ঝুমি।
কি করছো ঝুমি?
চিঠি লিখছি। মাম বললেন তুমি আসবা তাই চিঠি লিখছি।
বাহ্! আমাকে লিখছো?

ধুর তোমাকে না হৃদয় কে লিখছে তুমি পোস্ট করে দিবে তাই।জানো কেউ আমার চিঠি পোস্ট করে না, হৃদয় কোন চিঠিই পায়না। তাই তোমাকে দিবো। লেখা শেষ এই নাও।কাগজটা পকেটে রেখে আসাদ বলে ঝুমি এসো গল্প করি। পাশে একটা চেয়ারে আসাদ বসে পড়ে ধীরে ধীরে ঝুমি কে হিপনোটাইজ করে।
তুমি সব সময় কার সাথে একা একা কথা বলো?
ধুর বোকা আমি তো হৃদয়ের সাথে কথা বলি। কত গল্প যে সে জানে তুমি ভাবতেই পারবে না।
কিন্তু তোমার বন্ধু রা তো তোমার সাথে গল্প করতে চায় আম্মু চায় আমি চাই।

না না না কক্ষনো না ও বেলেছে তোমার পাপা আর ভাইয়ার মত সবাই খারাপ তুমি কারো সাথে কথা বলবে না
আর?
আমি দেখেছি তো পাপা মাম কে কত অত্যাচার করতো। ভাইয়াও আমাকে করেছে বেশ কয়েক বার। আই হেইট হিম,বলেই রুমের মধ্যেই থুথু ফেলে।
আসাদ অবাক হলেও বিস্মিত হয় না। ঝুমি ও তোমার জন্য কোন গিফট আনে না?
নাতো
এবার এলে তুমি ওর রুমালটা রেখে দিবে। আমি দেখবো।
ওর ঘড়ি ফোন রেখে দেই?
আসাদ ইকটু হেসে ফেলে
না না না ওসবের দরকার নেই।

চলে আসার সময় বলে আসে আগামী তিনদিন ঝুমিকে একা রাখা যাবে না। সারাক্ষণই সাথে কেউ থাকবে। তিনদিন পর আমি আসবো।
তিনদিন পর
কেমন আছো ঝুমি?
ভালো, এ্যাই তুমি কি আমার চিঠি দাওনি কি হলো ওর আসেছেই না।
মনে মনে আসাদ ভাবে কাজ দিয়েছে। এই তো সেরে উঠলো বলে
আচ্ছা ঝুমি তুমি হৃদয় কে নিয়ে যেখানে থাকো , ওখানে আর কে কে থাকে?

কেউ নাতো!জানো কি আমার একটা সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড আছে ওখানে আমি আর হৃদয় ছাড়া কেউ নেই কিন্তু ও কেন কদিন ধরে আসছে না বলো তো?

ফাতেমা ওয়াদুদ এর মুখোমুখি বসে আছে আসাদ। আসাদ বলছে ঝুমির মা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছে আর মনে মনে আসাদের প্রতি কৃতজ্ঞতায় আপ্লুত হয়ে উঠছেন।
আসাদ বলেই চলছে, আসলে ও ট্রমাটিক ডিজঅর্ডারে চলে গিয়ে নিজের একটা দ্বিতীয় ভূবন গড়ে তুলেছিলো। কল্পনায় একটি ছেলের সাথে তার বসবাস ছিলো।

গত দিন ওর সাথে লোকজন ছিলো বলে সেই কল্পনা ভেঙে যায়। ওকে এখন থেকে একা রাখাই যাবে না তিনমাস পর ও সুস্থ হয়ে উঠবে। একটা ঔষধ লিখে দিয়েছি খাবে সব ঠিক হয়ে যাবে। আসাদ বিদায় নিয়ে চলে আসছে ওদিকে যেন ভ্রুক্ষেপ নেই ফাতেমাওয়াদুদ এর কানে বাজছে, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে সবকিছু…………

-লেখক : অধ্যাপক অব: মীরপুর গার্লস আইডিয়াল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা।