Home মতামত রহস্যাবৃত স্কুলছাত্র ফাহাদের মৃত্যু প্রসঙ্গে

রহস্যাবৃত স্কুলছাত্র ফাহাদের মৃত্যু প্রসঙ্গে

66

সৈয়দ আমিরুজ্জামান |

“Justice delayed is justice denied” is a legal maxim. It means that if legal redress or equitable relief to an injured party is available, but is not forthcoming in a timely fashion, it is effectively the same as having no remedy at all.

ন্যায়বিচারে দেরি করা মানে ন্যায়বিচারকে অস্বীকার করা। ন্যায়বিচার দ্রুত হওয়াই কাম্য।
আইনের শাসন ছাড়া গণতান্ত্রিক মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন শিষ্টাচারী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা সম্ভব না। আইনের শাসনের সঙ্গে মানবাধিকার, অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করার নিমিত্তে তদন্ত সহ সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম সম্পাদন ও অন্যান্য বহু বিষয় জড়িত।

শ্রীমঙ্গলের চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত স্কুলছাত্র ফাহাদ রহমান মারজানের মৃত্যুর কারণ এখনো রহস্যই থেকে গেছে। ৮৫ দিন (অাড়াই মাসেরও বেশি) পেরিয়ে গেলেও ফাহাদের মৃত্যুর কারণ উদঘাটন না হওয়ায় পরিবার ও জনমনে ক্ষোভ ও নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গাফিলাতি ও আসামীপক্ষের সাথে অবৈধ সমঝোতার অভিযোগ তুলেছেন নিহত ফাহাদের পিতা মো: ফজলুর রহমান। তিনি মৌলভীবাজার জেলা দলিল লিখক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক।
তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, “মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোল্লা সেলিমুজ্জামান ও অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাফিউল আলম পাটোয়ারি বাদী কর্তৃক সনাক্তকৃত দুই আসামীর সাথে আর্থিক লেনদেন করে ফাহাদ হত্যার প্রকৃত সত্য জানার পরও হত্যাকান্ডকে অপমৃত্যু হিসেবে চালিয়ে দেবার জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। এ কারণে অামি তদন্ত কর্মকর্তা মোল্লা সেলিমুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তসহ শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার তদন্ত কর্মকর্তার প্রতি অনাস্থা থেকে এই মামলার তদন্তভার পিবিঅাই, সিঅাইডি বা র‍্যাবের মতো সংস্থার কাছে হস্তান্তরের দাবী জানাচ্ছি।”
মো: ফজলুর রহমান জানান, ‘গত ১২ অক্টোবর আমার ছেলেকে শ্রীমঙ্গল শহরতলীর শাহীবাগ আবাসিক এলাকার রেল লাইনের পাশে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে ফেলে রাখে। পরে একটি মহল আমার ছেলে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে বলে অপপ্রচার চালায়।’ তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের মৃত্যুর কয়েকদিন পূর্বে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি তার মায়ের নিকট ফোন করে ফাহাদকে সাবধানে চলাফেরা করার জন্য সতর্ক করেন। ওই সময় ফাহাদের এসএসসি পরীক্ষা চলছিল। মৃত্যুর দিনও তার প্র্যাকটিকেল পরীক্ষা ছিল। কিন্তু ওইদিন ভোরে আমাদের অজ্ঞাতে কে বা কারা তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। সকাল ৯টার দিকে রেলওয়ে থানা পুলিশ ফোন করে জানান, ফাহাদ গুরুতর অসুস্থ্য। সে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে। আমরা সেখানে গিয়ে ফাহাদের রক্তাক্ত মৃতদেহ দেখতে পাই। পরে পুলিশ এ ব্যাপারে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে।’
তিনি বলেছেন, “ঘটনার পর শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে যখন ফাহাদের মরদেহ মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয় তখন রেলওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোল্লা সেলিমুজ্জামান কম্পিউটারে প্রিন্টকৃত একটি কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলেন। ওই কাগজে লেখা ছিল ‘ফাহাদ আগের দিন থেকে নিখোঁজ রয়েছে’ এবং ‘ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে’। এসব দেখে আমি কাগজে স্বাক্ষর করিনি। ঘটনার পরপরই তদন্তের আগেই পুলিশ কিভাবে নিশ্চিত হলো আমার পুত্র ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে। এছাড়া আগের দিন থেকে নিখোঁজ রয়েছে মর্মে কাগজে উল্লেখ করা হলেও তা সম্পূর্ণ মিথ্যে। ফাহাদ ঘটনার দিন ভোরে বাসা থেকে বের হয়। যা শহরের বিভিন্ন সিসি ক্যামেরায় রয়েছে।”
‘পুলিশী ওই গালগল্পে আমাকে স্বাক্ষর করার জন্য পীড়াপিড়ি করলেও আমি স্বাক্ষর করিনি’ বলে জানিয়েছেন নিহত ফাহাদের পিতা।
তিনি জানান, ময়না তদন্ত রিপোর্ট আসার পর অপমৃত্যু মামলাকে হত্যা মামলায় রূপান্তর করে সব আসামীদের ধরে প্রকৃৃত রহস্য উদঘাটন করা হবে। কিন্তু ময়না তদন্ত রিপোর্ট আসার পর ফাহাদের পরিবারের সদস্যরা রেলওয়ে থানায় যোগাযোগ করলে রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাফিউল ইসলাম পাটোয়ারী ও তদন্ত কর্মকর্তা মোল্লা সেলিমুজ্জামান ট্রেনের আঘাতে ফাহাদের মৃত্যু হয়েছে বলে অপমৃত্যু মামলার ফাইনাল প্রতিবেদন দেবেন বলে তাদের জানান। ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে মাথায় আঘাতজনিত ও মস্তিষ্কে রক্ত জমাটের কারণে মৃত্যু হয় এবং কপালে দুটি ও পায়ের নিচে আঘাতের উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা মাথায় আঘাতটি ট্রেনের আঘাত বলেই দাবি করছেন। তবে অভিজ্ঞদের অভিমত ট্রেনে আঘাত লাগলে লম্বা কাটা দাগ হবার কথা নয়, মাথা চূর্ণ বিচূর্ণ হবার কথা। এছাড়া যে ট্রেনে ফাহাদ কাটা পড়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে সে ট্রেনের চালক জাহিদুল ইসলাম গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছেন, যেখানে ঘটনাস্থল উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে ট্রেনে কাটা পড়া বা ট্রেনের ধাক্কা এ ধরণের কোন ঘটনাই ঘটেনি। সেদিন তিনি আখাউড়া থেকে সিলেট পর্যন্ত ট্রেনে চালকের দায়িত্ব পালন করেন। ওই রুটে ট্রেনে কাটা বা ট্রেনে ধাক্কা লাগার কোন ঘটনা ঘটেনি।
নিহতের পিতা অভিযোগ করে বলেন, “মোবাইল কল লিস্ট (সিডিআর) রির্পোট আসার পর এ হত্যার ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও রেলওয়ে থানার ওসি সন্দেহভাজন আসামীদের সাথে যোগসাজস করে আর্থিক লেনদেন করেছেন। এছাড়া তদন্ত কর্মকর্তা এসব সিডিআর সংগ্রহের নাম করে নিহত ফাহাদের পরিবারের নিকট থেকে ২২ হাজার টাকা নিয়েছেন। তারপরও অজ্ঞাত কারণে ফাহাদ হত্যাকান্ডকে অপমৃত্যু হিসেবে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে।”
মামলার তদন্ত ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টার কারণে ফাহাদের পিতা তদন্ত কর্মকর্তা ও শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার ওসির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া এবং তাদের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে মামলার এ মৃত্যু রহস্য উদঘাটনের মামলার তদন্তভার পিবিআই, সিআইডি বা র‌্যাবের মতো সংস্থার কাছে হস্তান্তরের দাবী করেছেন। তার দাবি হত্যাকান্ডের সকল প্রমাণ শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানা পুলিশের কাছে পরিবারের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হলেও তারা তদন্তের নামে কালক্ষেপন ও মামলার আলামত নষ্ট করে আসামীদের বাঁচানোর পাঁয়তারা করছেন।
তিনি তার সন্তান হত্যার রহস্য উদঘাটন করে খুনিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজিপিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোল্লা সেলিমুজ্জামান মুঠোফোনে উত্থাপিত অভিযোগ ও তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ‘মামলার তদন্ত চলছে’ বলেই ফোনের লাইন কেটে দেন।’
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাফিউল ইসলাম পাটোয়ারীর সাথে কথা বলতে অফিসিয়্যাল মুঠোফোনে ফোন করলে তা রিসিভ করেন থানার উপ-পরিদর্শক সাব্বির। তিনি জানিয়েছেন, তিনি (ওসি) বাইরে অভিযানে রয়েছেন।
রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি জয়দেব কুমার ভদ্র গণমাধ্যমকর্মীদের মুঠোফোনে জানান, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তিনি খোঁজ নিয়ে সিলেট জোনের এসপিকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলবেন।

ফাহাদের পোস্ট মোর্টেম রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে মৃত্যুর পূর্বে মাথায় আঘাত ও মস্তিষ্কে রক্ত জমাট হওয়ার কারনে মৃত্যু হয়েছে। আরও তিনটি আঘাতের কথা উল্লেখ রয়েছে! এর মধ্যে কপালে দুটি ও পায়ের তলায় আঘাতের কথা বলা হয়েছে।

এই পোস্ট মোর্টেম রিপোর্টের ব্যাপারে আইনজ্ঞ ও পুলিশের অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন ফাহাদকে দুর্বৃত্তরা মেরে রেললাইনের পাশে ফেলে রেখেছে এবং এটা ট্রেনের আঘাতে মৃত্যু নয়। এই পোস্ট মোর্টেম রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে রেলওয়ে পুলিশ হত্যা মামলা হিসেবে মামলা এফআইআর করতে পারে।

কিন্তু গত ১২ অক্টোবর থেকে রেলওয়ে পুলিশ ফাহাদের মৃত্যুকে রহস্যজনক কারণে অপমৃত্যুর মামলাতেই তদন্ত কার্যক্রমকে আটকে রেখেছেন কেন?

ফাহাদের বাবা ফজলুর রহমান বলেছেন, এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোবাইল কল লিস্ট বা সিডিআর রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে তাদের বলেছিলেন “ফাহাদকে না কি তার সহপাঠীরা পরিকল্পনা করে হত্যা করেছে”! “পোস্ট মোর্টেম রিপোর্ট আসার পর অপমৃত্যুর মামলাকে হত্যা মামলায় রুপান্তর করবেন বলে তাদের জানিয়েছিলেন”।

যদি একথা সত্য হয় তাহলে এতোদিন অতিবাহিত হল কিন্তু এ পর্যন্ত মামলার কোন অগ্রগতি নেই কেন?

ফাহাদের মৃত্যুর কয়েকদিন আগে অজ্ঞাত কোন ব্যক্তি তার মায়ের নাম্বারে না কি দুই দফা ফোন করে বলেছে, ফাহাদের বিপদ আছে তাকে সতর্ক হয়ে চলতে বলেছে!
তদন্ত কর্মকর্তা সেই নাম্বার সনাক্ত করতে পেরেছেন কি?

এছাড়া ওই দিন সকাল অনুমানিক ৬ টা ৭ মিনিটে দুর্ঘটনাস্থল অতিক্রম করা ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী লোকাল ট্রেন সুরমা মেইল এর চালক জাহিদুল ইসলাম জানান, শ্রীমঙ্গলে রেল স্টেশন সামনে থাকায় ঘটনাস্থলে ট্রেনের গতি স্বাভাভিক ভাবে কমিয়ে আনা হয়। তিনি নিশ্চিত করে বলেন, সেখানে কোন ব্যক্তির সাথে ট্রেনের ধাক্কা লাগার ঘটনা ঘটেনি!

গণমাধ্যম কর্মীরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি ও তদন্ত কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে কল করলে হয় তারা ফোন ধরেন না বা ধরলেও মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলছে বলে লাইন কেটে দেন বা সরাসরি যোগাযোগের কথা বলেন।
সরাসরি গেলে তদন্ত চলছে সিডিআর রিপোর্ট বিশ্লেষণ চলছে আরও সময় লাগবে বলেও জানান।

যেহেতু ফাহাদের বাবা এ ব্যাপারে কোর্টে আলাদা মামলা করেছেন। কোর্ট ৪৮ ঘন্টার ভেতর মামলার আদোপান্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছেন এবং তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত চলমান রয়েছে বলে প্রতিবেদন দিয়েছেন।
আমি জানতে চাই এই তদন্ত কার্যক্রম এভাবে কতদিন লাগবে? যদি আপনারা কোন কিছুই উদঘাটন করতে না পারেন তাহলে দয়া করে আদালতকে জানিয়ে দিন।

ফাহাদের পিতা ফজলুর রহমানের মামলার প্রেক্ষিতে মাননীয় আদালত সিদ্ধান্ত দিবেন পুলিশের অন্য কোন সংস্থাকে দিয়ে ফাহাদের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করবেন।

যে কোনো মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট অত্যন্ত জরুরি। মৃত্যুর প্রাথমিক কারণ বা ধারণা পাওয়া যায় এতে। সঠিক ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য রয়েছে অনেকগুলো ‘ফ্যাক্ট’।

সম্প্রতি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি প্রতিবেদনের কারণে ২৩টি আত্মহত্যা বা অপমৃত্যুর ঘটনা পরবর্তীসময়ে হত্যা বলে চিহ্নিত হয়েছে।

যা আছে আইনে

১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১৭৪(৩) মোতাবেক পুলিশ সন্দেহজনক মৃত্যুর ক্ষেত্রে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি ও ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠাতে পারে। ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৫০৯/৫০৯(এ)তে সিভিল সার্জন অথবা মেডিকেল অফিসারের সাক্ষ্যের বিধান রাখা হয়েছে। ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ৪৫ ধারায় মামলার বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়ার বিধান আছে। এতে বোঝা যায়, হত্যা মামলায় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ছাড়া আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া যায় না। হত্যা না আত্মহত্যা জানতে অপরাধীকে শনাক্ত করা, অপরাধ প্রমাণ করা, মৃত্যুর সম্ভাব্য সময় জানা- সব মিলিয়ে বিচার কার্যক্রমের জন্যই ময়নাতদন্তের সঠিক প্রতিবেদন জরুরি।

‘আত্মহত্যা-অপমৃত্যু’ পিবিআইর তদন্তে ‘হত্যা’

২০০৬ সালের আগস্টে ময়মনসিংহের নান্দাইলে আব্দুর রাশিদ নামে এক ব্যক্তির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানান, রাশিদ আত্মহত্যা করেছেন। নান্দাইল মডেল থানায় করা হয় একটি অপমৃত্যু মামলা। পরে পুলিশও তদন্ত করে জানায়, এটি আত্মহত্যা। অথচ ১১ বছর পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করে বের করেছে আত্মহত্যা নয়, আব্দুর রাশিদকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়।

২০১৪ সালে রংপুরের পীরগাছার তাম্বুলপুর ইউনিয়নে প্রেমের সম্পর্ক কেন্দ্র করে হত্যার শিকার হন নয়ন (১৮) নামে এক যুবক। প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গেলে প্রেমিকার আত্মীয়-স্বজন তাকে হত্যা করে মরদেহ রেললাইনের ওপর ফেলে রেখে ঘটনাকে ট্রেন দুর্ঘটনা হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করে। নয়নের বাবা বাদী হয়ে বোনারপাড়া রেলওয়ে থানায় মামলা করলে তদন্তে নামে পুলিশ। পরে মামলাটি সিআইডিতে স্থানান্তরিত হয়। ময়নাতদন্ত ও পুলিশের প্রতিবেদনে আত্মহত্যা ও রেল দুর্ঘটনায় অপমৃত্যু উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। কিন্তু পরে পিবিআইয়ের তদন্তে এটি হত্যাকাণ্ড বলে এক আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।

বিগত বছরের জুন মাসে পিবিআই একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে আত্মহত্যা বা অপমৃত্যুর ২৩টি মামলায় পরে হত্যাকাণ্ডের সংশ্লিষ্টতা পায় সংস্থাটি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চারটি মামলা মুন্সিগঞ্জের। ভুল ময়নাতদন্তের নানান তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে তৈরি করা এ প্রতিবেদনটি পুলিশ হেডকোয়াটার্সে পাঠিয়েছে পিবিআই। সেখান থেকে পাঠানো হবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে।

পরিশেষে বলতে চাই, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্তভার পেলে, আশা করি ফাহাদের মৃত্যুর আসল রহস্য উদঘাটন হবেই?

-লেখক: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।