Home রাজনীতি মাঠে থাকতে হবে সব স্তরের নেতাদের

মাঠে থাকতে হবে সব স্তরের নেতাদের

38

ডেস্ক রিপোর্ট: বিএনপির সিরিজ বৈঠকের দ্বিতীয় দিনেও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলনের ওপর জোর দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তাদের মতে, এখন থেকেই আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত করতে হবে।
দলকে আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। এ দাবি আদায়ে কোনো ছাড় নয়। সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে নামতে হবে। যুগপৎ কিংবা জোটগতভাবে আন্দোলনের পক্ষে মত দেন কেউ কেউ। তারা বলেন, রাজপথে থাকলে এমনিতেই নির্বাচনের প্রস্তুতি হয়ে যাবে। তাই আন্দোলন ছাড়া নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া ঠিক হবে না।
সেই আন্দোলনে সব স্তরের নেতাদের রাজপথে নামতে হবে। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। সবাই ঠিকমতো কাজ করছে কিনা সেটা দেখার জন্য একটা মনিটরিং সেল গঠন করা যেতে পারে। বিগত সময়ে যারা রাজপথে ছিলেন না তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান কেউ কেউ।
পাশাপাশি সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে নেতারা বলেন, শক্তিশালী সংগঠন ছাড়া কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলা যাবে না। বুধবার বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে হাইকমান্ডের সিরিজ বৈঠকের দ্বিতীয় দিন এসব মত তুলে ধরেন তারা।
আগামীদিনে আন্দোলন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেয় হাইকমান্ড। এর অংশ হিসাবে মঙ্গলবার শুরু হয় ৩ দিনব্যাপী সিরিজ বৈঠক।

বুধবার বিকাল ৪টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দ্বিতীয় দিনের বৈঠক চলে প্রায় সাড়ে ৭ ঘণ্টা। এতে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন তিনি।
এদিন নির্বাহী কমিটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব, যুগ্ম-মহাসচিব, সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদক ও সহ-সম্পাদকদের নিয়ে বৈঠক হয়। এতে ১১০ জন উপস্থিত ছিলেন।
এরমধ্যে বক্তব্য দেন ৬০ জন। আজ অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে হবে বৈঠক। বৈঠক সূত্র জানায়, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আন্দোলন, নির্বাচন, দল পুনর্গঠন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, জোটের রাজনীতিসহ নানা বিষয়ে নিজেদের মত তুলে ধরেন নেতারা।

তারা বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলে তার ফল কি হতে পারে তা আমরা দেখেছি। তাই জেনেশুনে আবার বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হবে না। তাই এখন থেকেই এ ব্যাপারে দলের অবস্থান স্পষ্ট করা উচিত।
বৈঠকে কয়েক নেতা আন্দোলনের কৌশল নিয়ে পরামর্শ দেন। তারা বলেন, এ মুহূর্তে উচিত হবে যার যার অবস্থান থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করা। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দল ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের উদ্যোগ নিতে হবে।
ত্যাগী ও যোগ্যদের প্রাধান্য দিয়ে দল পুনর্গঠন করা উচিত। এ মুহূর্তে আন্দোলনমুখী নেতৃত্বের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। কেউ কেউ বলেন, মিটিংয়ে অনেকে বড় কথা বলেন। কেন্দ্রীর নেতারা যদি ২০ জন নেতাকর্মী নিয়েও মাঠে নামেন, তাহলে এই সরকারের পতন অনিবার্য। নেতাদের বক্তব্য শুনে তারেক রহমান দিকনির্দেশনামূলক কথা বলেন।

বৈঠকে মূলমঞ্চে বসেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হারুন অর রশীদ, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, মাহবুবের রহমান শামীম, বিলকিস জাহান শিরিন, আসাদুল হাবিব দুলু, শামা ওবায়েদ, ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, মোস্তাক মিয়া, বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, আব্দুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, রওনকুল ইসলাম টিপু, ইকবাল হোসেন, মাহবুবুল হক নান্নু, হারুনুর রশীদ, শামীমুর রহমান শামীম, আকন কুদ্দুসুর রহমান, শরীফুল আলম, সেলিমুজ্জামান সেলিম, এএইচএম ওবায়দুর রহমান চন্দন, জয়ন্ত কুমার কুণ্ড, মাশুকুর রহমান। সম্পাদকদের মধ্যে সালাহউদ্দিন আহমেদ, আ ন ম এহছানুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, শিরিন সুলতানা, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, আশরাফউদ্দিন উজ্জ্বল, লুৎফুর রহমান কাজল, নুরে আরা সাফা, ডা. রফিকুল ইসলাম, খালেদ মাহবুব শ্যামল, সোহরাব উদ্দিন, মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, জিকে গাউস, গৌতম চক্রবর্তী, আবুল কালাম আজাদ, শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক, মীর সরাফত আলী সুপু প্রমুখ। সহ-সম্পাদকদের মধ্যে এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান, দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, রুমিন ফারহানা, কাদের গনি চৌধুরী, হুমায়ুন কবীর খান, নিলোফার চৌধুরী মনি, রেহানা আক্তার রানু, শাম্মী আখতার, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, নজরুল ইসলাম আজাদ, আমিরুল ইসলাম আলীম, হেলেন জেরিন খান, কাজী আবুল বাশার, অর্পনা রায় দাস, অমলেন্দু অপু, আবদুল বারী ড্যানি, রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, আশরাফ উদ্দিন বকুল, মনিষ দেওয়ান, ওয়াদুদ ভূঁইয়া, রিয়াজ উদ্দিন নসু, আমিরুজ্জামান খান শিমুল ছাড়াও বিএনপির চেয়ারপারসন একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সঞ্চালনা করেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
বৈঠক শেষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শনিবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নির্বাহী কমিটির সদস্য ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, রুদ্ধদ্বার বৈঠকের দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় জলবায়ু বিষয়ক সহ-সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল। তিনি বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন ও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনের বিকল্প নেই। আর আন্দোলনের জন্য দল গোছাতে হবে। দল এবং অঙ্গ সংগঠন পুনর্গঠনের কাজ শেষ করে সর্বশক্তি ও সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলনে নামতে হবে। এজন্য এককভাবে হয়, আবার যেসব রাজনৈতিক দল ও নানা শ্রেণি-পেশার লোক যারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চান তাদের নিয়ে এক প্ল্যাটফরমে অথবা যুগপৎভাবে আন্দোলনে নামতে হবে।

তিনি বলেন, গত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আজ পর্যন্ত কোনো মূল্যায়ন হয়নি। একটা মূল্যায়ন হওয়া দরকার। সামনে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিগত দিনের কর্মকাণ্ডের একটা মূল্যায়ন হওয়া জরুরি। এ মূল্যায়ন বিবেচনায় নিয়ে সামনের দিনে করণীয় ঠিক করা দরকার। যে যে পর্যায়ে ব্যর্থ হয়েছে তাদের জবাবদিহিতায় আনতে হবে। যেসব সাবেক এমপি, মন্ত্রী বা নেতারা আন্দোলন-সংগ্রামে শামিল হননি, স্থানীয় নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নেননি তাদের প্রয়োজনে অব্যাহতি দেওয়া যায় কিনা-সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, নব্বইয়ের আন্দোলনে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মধ্যে এমন কোনো পরিকল্পনা ছিল না যে, এমপি হব, মন্ত্রী হব। প্রতিজ্ঞা ছিল, স্বৈরাচারকে হটাতে হবে। এজন্যই আন্দোলন সফল হয়েছিল। কিন্তু এখন তো ছাত্রদল বা অঙ্গসংগঠনের থানা পর্যায়ের যদি যুগ্ম আহ্বায়কও হয় সে বলে, এ এলাকা থেকে আসলাম। এ এলাকা শব্দটা আগে ছিল না। তিনি বলেন, ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করার জন্য চিঠি দিয়েছেন। তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতে হবে।
অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, হয় এসপার, নয় ওসপার। কারণ আমাদের নির্বাচন করতে দেয়নি। আবার এখন সরকার নতুন খেলা শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের অধীনে আর কোনো নির্বাচন হবে না।
খায়রুল কবির খোকন বলেন, যাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হবে সে তা পালন করছে কিনা এজন্য তদারকি দরকার। প্রয়োজনে মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে। যারা ভালো করবে তাদের পুরস্কার এবং যারা ব্যর্থ হবে তাদের তিরস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে।
শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী বলেন, আন্দোলনের বিকল্প নেই। প্রয়োজনে জামায়াতকে বাদ দিয়ে বৃহত্তর পরিসরে আন্দোলনের উদ্যোগ নিতে হবে। সেটা যুগপৎও হতে পারে।
বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, স্বৈরাচারী এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে।
রেহেনা আক্তার রানু বলেন, একদিকে বলবেন হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাব না আরেকদিকে সরকারের প্রস্তাবিত তালিকায় এমপি হিসাবে নিজেদের নাম লেখানোর জন্য লবিং করবেন সেটা হবে না। শেখ হাসিনাকে রেখে ফেরেশতা দিয়ে ইসি গঠন করা হলেও তার এক ইশারায় তারা ইবলিশ হয়ে যাবে।
জিকে গউস বলেন, অঙ্গ সংগঠনের নেতারা আমাদের সঙ্গে কথা বলেন না। এলাকার কর্মসূচিতে অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের পাওয়া যায় না। তারা ঢাকায় বসে পদ পাওয়ার জন্য তদবির করেন।
এবিএম মোশাররফ হোসেন বলেন, আন্দোলনের নামার আগে সবদিক থেকে তৈরি হতে হবে।-ইত্তেফাক