স্টাফ রিপোটার: জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য, বর্তমান বেগম রওশনপন্থী নেতা কাজী মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে চাকরির আশ্বাসে এক গৃহবধুকে ধর্ষণ, পরে ধর্ষিতার ছেলেকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ দিয়ে ছেলেকে উদ্ধারের পর পক্ষাগ্রস্থ স্বামী, ছেলে নিয়ে আসামি মামুনের ভয়ে নিরাপত্তাহীনতায় দিনযাপন করছেন। মামলার পরও কাজী মামুনকে পুলিশকে ধরছেন না। তিনি দ্রুত তার মামলার আসমিকে গ্রেফতারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর ক্র্যাব মিলনায়তনে ধর্ষিতা গৃহবধু (পুতুল) এক সংবাদ সম্মেলন করে
এসব কথা বলেন।
কিভাবে জাপা নেতা কাজী মামুনের সঙ্গে পরিচয় ও ধর্ষণের স্বীকার হলেন তা বর্ণণা করতে গিয়ে সংবাদ সম্মেলনে অঝোরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন উক্ত গৃহবধু। তিনি জানান, চাকুরির আশ্বাস দিয়ে কাজী মামুন আমাকে জোর করে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশের নাকের ডগায় আসামি মামুন ঘুরে বেড়াচ্ছে, অন্যদিকে পক্ষাগ্রস্থ স্বামীকে নিয়ে অসুস্থ শরীরে অসহায় অবস্থায় আসামি মামুনের হুমকির মুখে দিন যাপন করছি। বরং সে আমার ছেলেকে অপহরণ করে মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য চাপ দেয়। র্যাবকে জানানোর পর ছেলেকে পাওয়া গেলেও ধর্ষণ ও অপহরণের ঘটনায় কাজী মামুনকে ধরছে না পুলিশ।
ধর্ষিতা গৃহবধু আহাজারি করে বলেন, কখন একজন নারী লজ্জা শরম ফেলে সংবাদ সম্মেলন করে মানুষের সামনে বলেন, আমি ধর্ষণের শিকার। যখন তার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। আমার ইজ্জত শেষ হয়ে গেছে। আমি ও আমার পরিবারের জীবন এখন হুমকির মুখে। কাজী মামুনের কাছ থেকে আমি ও আমার পরিবার বাচতে চাই। আমি ন্যয় বিচার চাই। তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
লালবাগ থানার বাসিন্দা ধর্ষিতা গৃহবধু বলেন, আমার স্বামী পক্ষাঘাতগ্রস্থ এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ বিধায় আমার সংসারের সার্বিক খরচের যোগানের তাগিদে আমি এক্সট্রেঞ্জা ফার্মাসিটিকাল নামীয় একটি ঔষধ কোম্পানির মালিক মামুনুর রশিদের নিকট চাকুরির জন্য আবেদন করি। তাহার সহিত আমার হাইকোর্ট মাজারে পরিচয় হয় এবং পরিচয়ের এক পর্যায়ে আমার আর্থিক অভাব অনটনের কথা শুনে আমাকে চাকুরির আশ্বাস প্রদান করে। আশ্বাসের প্রেক্ষিতে বিগত ০৪/০৭/২০২৩ ইং তারিখে দুপুর আনুমানিক ১ ঘটিকায় আমি তার সেগুনবাগিচা জে কে টাওয়ার ৪র্থ তলায় যাই। উক্ত অফিসে পৌঁছানোর পর মামুনুর রশিদ আমাকে অফিসে তার ব্যক্তিগত রুমে ডেকে নেয় এবং বিভিন্ন কথার প্রসঙ্গে আমাকে বলে “কিছু পেতে হলে তো কিছু দিতে হবে”। আমি তাকে বলি যে, আপনাকে দেয়ার মত আমার কিছুই নাই। তখন মামুনুর রশিদ আমাকে তার সাথে শারিরিকভাবে মিলিত হবার কুপ্রস্তাব দেয়। উক্ত প্রস্তাব শুনেই আমি তার রুম থেকে বের হবার চেষ্টা করলে সে আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে উপর্যুপরি কিল ঘুষি মারতে থাকে এবং এক পর্যায়ে আমাকে জোর পূর্বক ধর্ষন করে।
তিনি আরও জানান, উক্ত ঘটনায় আমি হতবিহ্বল ও বিধ্বস্ত হয়ে তাৎক্ষনিক উক্ত ঘটনা সংশ্লিষ্ট রমনা থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক অভিযোগ গ্রহন করে, উপরোক্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায় এবং আমাকে ঢাকা মেডিকেলের ওসিসিতে চিকিৎসার জন্য পাঠায়। ঢাকা মেডিকেলের ওসিসি কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষনিক পরীক্ষা করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন এবং মেডিকেল পরীক্ষার জন্য ৪/৫ দিন হাসপাতালে অবস্থান করা লাগবে মর্মে আমাকে জানালে আমি আমার অসুস্থ স্বামীর কথা বিবেচনা করিয়া প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহন শেষে হাসপাতাল ত্যাগ করি।
গৃহবধু বলেন, “উক্ত ঘটনায় লম্পট, দুশ্চরিত্র ও ধর্ষক মামুনুর রশিদ ক্ষিপ্ত হইয়া উঠে এবং ধর্ষনের ঘটনার তিন দিন পরে বিগত ০৭/০৭/২০২৩ ইং তারিখে রাত অনুমানিক ১২.৩০ ঘটিকায় আমার একমাত্র পুত্র তাকির মোহাম্মদ রেজা রুটি কেনার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বাহির হইলে পূর্ব থেকে ওত পেতে থাকা মামুনুর রশিদ এবং তাহার সহিত অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিগণ আমার ছেলেকে অপহরন করে নিয়ে যায়। আমার একমাত্র ছেলেকে খুজে না পেয়ে পাগলপ্রায় আমি বিভিন্ন জায়গায় তাহার সন্ধান করতে থাকলে ০৮/০৭/২০২৩ ইং তারিখে আমার ছেলের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার ০১৮৯০৩০৯৯২৪ হইতে আমার মেয়ের জামাইয়ের মোবাইল ০১৭১০৪৮৮২২৩৯ নাম্বারে ফোন দিয়ে জানায় যে, তোমরা থানায় রুজুকৃত অভিযোগ উঠিয়ে নাও, না হলে আমাকে মেরে ফেলা হবে, বলেও ফোনের সংযোগ বিছিন্ন হয়ে যায়।
তিনি জানান, ছেলে অপহরণের বিষয়টি স্থানীয় লালবাগ থানায় অবহিত করা হলে কর্তৃপক্ষ একটি জিডি গ্রহন করে। তারা আমার পুত্রে সন্ধান করতে থাকে এবং আমাকে বিজ্ঞ আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন। আমি বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে নালিশি দরখাস্ত দায়ের করি। বিজ্ঞ আদালত সন্তুষ্ট হইয়া আমার অভিযোগ আমলে নিয়ে মামলাটি সংশ্লিষ্ট লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এফ আই আর হিসেবে গন্য করে নিয়মিত মামলা রুজু করার আদেশ প্রদান করেন। বিজ্ঞ আদালত হইতে আদেশ গ্রহন করে থানা কর্তৃপক্ষ আমাকে পুনরায় ওসিসিতে প্রেরণ করে এবং আমার সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে ঢাকা মেডিকেল কর্তৃপক্ষ দ্রুত মেডিকেল পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। উক্ত মেডিকেল পরীক্ষায় আমার যৌনাঙ্গ ছিড়ে যাওয়াসহ যৌন নির্যাতন ও ধর্ষনের আলামত পাওয়া যায়। অতপর বিগত ১১/০৭/২০২৩ ইং তারিখে ১১.৩০ ঘটিকায় আমার ছেলের ফোন নাম্বার হইতে একটি ফোন কল আসে এবং অজ্ঞাত এক ব্যক্তি বিজ্ঞ আদালতে আমার দায়েরকৃত মামলা উত্তোলনের জন্য চাপ প্রদান করে। আমার সন্তানকে খুজে পাইবার নিমিত্তে আমি ১৭/০৭/২০২৩ ইং তারিখে র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১) এর নিকট একটি আবেদন করি। আমার আবেদনের প্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাকে জানায় যে, তাহারা আমার ছেলেকে উদ্ধারের নিমিত্তে বারংবার আসামীর বারিধারাস্থ বাসভবনে তল্লাশি চালাইলেও আমার ছেলেকে উদ্ধার করা যাইতেছে না।
” এমনকি আসামি গ্রেফতারেও তাহারা অদ্যাবদি ব্যর্থ। এমতাবস্থায়, বিগত ২০/০৭/২০২৩ ইং তারিখে আনুমানিক ০৬.০০ ঘটিকায় ব্রাহ্মনবাড়িয়া থেকে এক ব্যক্তির মাধ্যমে আমি জানতে পারি যে, আমার ছেলেকে অক্ষত অবস্থায় রাস্তায় পাওয়া গেছে, আমি তাৎক্ষনিক পুলিশকে জানালে তাদের সহায়তায় আমার সন্তানকে উদ্ধার করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা আমার সন্তানকে বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপনের পূর্ব পর্যন্ত আইনত অভিভাবক হিসেবে আমার জিম্মায় প্রদান করে। আমাকে ধর্ষনকারী উক্ত মামুনুর রশিদের গ্রামের বাড়ি ও স্থায়ী ঠিকানা ব্রাহ্মনবাড়িয়া। তার নির্দেশে আমার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন উক্ত গৃহবধু।
তিনি বলেন, অভিযুক্ত মামুনুর রশিদকে দ্রুত গ্রেফতার করা না হলে (পাসপোর্ট- EG 0113715) ব্যবহার করে যে কোনো সময় সে দেশের বাইরে পালিয়ে যাবে। তাহার ভাড়াটে বাহিনীর মাধ্যমে আমার ও আমার অসহায় পরিবারের ক্ষতি সাধন করতে পারে, এমনকি আমাকে খুন করতে পারে, আশঙ্কা করছেন তিনি।