ডেস্ক রিপোর্ট: বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক ও ইউনাইটেট কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি শাহ্ আলম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল—বাসদ’র সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাসদ (মার্কসবাদী)’র সমন্বয়ক কমরেড মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী)’র সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ঋণ খেলাপীদের নতুন করে বিশাল ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণখেলাপীদের বিশাল ছাড় দিতে রাশিয়া—ইক্রেন যুদ্ধ, নতুন করে কোভিড সংক্রমণ ও খেলাপী ঋণ আদায় বৃদ্ধির খোঁড়া অজুহাতে সম্প্রতি নতুন নীতিমালা জারি করেছে। এ নীতিমালা অনুসারে, খেলাপী ঋণ নিয়মিত করতে এখন আড়াই থেকে সাড়ে ছয় শতাংশ অর্থ জমা দিলেই চলবে। যা আগে ছিল ১০ থেকে ৩০ শতাংশ। ঋণ পরিশোধের সময়সীমাও বাড়ানো হয়েছে। এসব ঋণ পাঁচ থেকে আট বছরে পরিশোধ করা যাবে, যা আগে ছিল সর্বোচ্চ দুই বছর। একই সাথে বিশেষ সুবিধা নিয়ে যেসব খেলাপী গ্রাহক নিয়মিত হয়েছেন, তারা ব্যাংক থেকে নতুন করে ঋণও নিতে পারবেন। খেলাপী ঋণে কি সুবিধা দেওয়া হবে, তা নির্ধারণ করার পুরো ক্ষমতা ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ব্যাংক মালিকরাই ঠিক করবেন, ঋণখেলাপীরা কি সুবিধা পাবেন। আগে বিশেষ সুবিধায় ঋণ নিয়মিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাকের গভর্ণরের অনুমতি লাগতো। বাস্তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নতুন নীতিমালার মাধ্যমে ঋণখেলাপী ও লুটপাটকারী ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে ব্যাংকে গচ্ছিত জনগণের কষ্টার্জিত আমানত লুটপাটে আরো উৎসাহ যোগালো। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায়, লুটপাটকারী ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে তুষ্ট রাখতেই আওয়ামীলীগ সরকার এ পদক্ষেপ নিলো। জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপীদের কাছ থেকে উদ্ধার দূরে থাকুক, উল্টো বছরের পর বছর ঋণ পুনঃতফসিল, সুদ মওকুফ, মন্দ ঋণ অবলোপনের নামে ঋণ মওকুফ, দীর্ঘমেয়াদে পুনর্গঠন সুবিধা ইত্যাদির নামে ঋণখেলাপীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়েছে। যার ফলে আওয়ামীলীগ সরকারের ১৩ বছরের শাসনামলে খেলাপী ঋণ বেড়েছে ৫ গুণ। আওয়ামীলীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতাগ্রহণের সময় খেলাপী ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। আর এবারের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী জানালেন, ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত খেলাপী ঋণের পরিমাণ দাঁড়িছে ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা। এটা প্রকৃত হিসাব নয়। এর সাথে ঋণখেলাপীদের খেলাপী ঋণের বিপরীতে আদালত থেকে পাওয়া স্থগিতাদেশ, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া অনাপত্তিপত্র (এনওসি), বিশেষ নির্দেশিত হিসাব বা স্পেশাল মেনশন একাউন্ট নামে থাকা খেলাপী ঋণ — বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপী ঋণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নয়। এগুলো অন্তর্ভুক্ত হলে খেলাপী ঋণের পরিমাণ তিন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলেও, অর্থনীতিবিদরা বলছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক এ পর্যন্ত খেলাপী ঋণ আদায়ের যুক্তিতে ঋণখেলাপীদের যত ছাড় দিয়েছে, খেলাপী ঋণ তত বেড়েছে। ২০২১ সালের মার্চে খেলাপী ঋণ ছিল ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত, শুধু গত এক বছরেই খেলাপী ঋণ বেড়েছে ৩১ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা। আমরা দেখেছি, গত এক দশকে ফারমার্স ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, হলমার্ক, পিকে হালদারের আর্থিক কেলেঙ্কারি প্রত্যেকটাতে রাষ্ট্র ও আওয়ামীলীগ সরকারের ক্ষমতাকাঠামোর সাথে যুক্তরা বাংলাদেশ ব্যাংক—রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ও বেসরকারী ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদকে ব্যবহার করে, প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে বিরাট ঋণ জালিয়াতি করেছে। টাকা পাচার করে বিভিন্ন দেশে সেকেন্ড হোম বানিয়েছে। আওয়ামীলীগ সরকারের ফ্যাসিবাদী শাসনে এভাবেই দেশটাকে পরিণত করা হয়েছে লুটপাটকারীদের স্বর্গরাজ্যে, আর দেশ এগিয়ে যাচ্ছে চরম এক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দিকে। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী দুঃশাসন হটানোর বিকল্প নেই।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ঋণখেলাপীদের অন্যায় সুবিধা দিয়ে জারীকৃত বিজ্ঞপ্তি বাতিল, ঋণখেলাপীদের গ্রেপ্তার ও সম্পত্তি জব্ধ করে খেলাপী ঋণ উদ্ধার, আর্থিক কেলেঙ্ককারির বিচারবিভাগীয় তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি প্রদানের জোর দাবি জানান।