Home কৃষি ‘৭৫০ একর কৃষি জমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি’র ঢাকায় মানববন্ধন

‘৭৫০ একর কৃষি জমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি’র ঢাকায় মানববন্ধন

21

স্টাফ রিপোটার: ‘৭৫০ একর কৃষি জমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি’ ও ‘চরাঞ্চলের কৃষি ও কৃষক স্বার্থ রক্ষা সংগ্রাম কমিটি’র আহবায়ক প্রবীণ কৃষক নেতা আব্দুল কাদেরের সভাপতিত্বে ৭ দফা দাবিতে আজ ১৯ মার্চ সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সংগ্রাম কমিটির কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও কৃষক সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক কৃষকনেতা জাহিদ হোসেন খানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন জামালপুর জেলার কৃষকনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আক্কাস, বিশিষ্ট কবি ও সুরকার আলতাফ হোসেন মাস্টার, কৃষক সমিতি সিরাজগঞ্জ জেলার নেতা গোলাম ফারুক বিএসসি, বগুড়া জেলার নেতা মো. আইনুদ্দিন, ভুক্তভোগী কৃষক আব্দুল মান্নান আকন্দ, আশরাফ আলী প্রমুখ। এই মানববন্ধনের দাবির সাথে সংহতি প্রকাশ করেন- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সহ-সাধারণ সম্পাদক কমরেড মিহির ঘোষ, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান তারিক চৌধুরী, হকার্স ইউনিয়ন নেতা সেকান্দার হায়াৎ, যুবনেতা মেহেদী হাসান মিন্টু প্রমুখ।
মানববন্ধনে সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের নদী সিকস্তি অঞ্চলে বসবাসকারি তিন কোটি মানুষ জান-মালের ঝুঁকি নিয়ে সকল প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে অনাবাদযোগ্য উঁচুনিচু জমি আবাদযোগ্য করে দেশের কৃষি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও সকল গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল আন্দোলনে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, কৃষকের ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠায় যুগযুগ ধরে লড়াই করেছে। তাই স্বাধীনতার পর এঅঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশা ছিল তাদের ভাগ্যের বদল হবে কিন্তু স্বাধীন দেশে সমস্যার সমাধান হয়নি বরং উপনিবেশিক শাসন আমলের আদলে নতুন আইন ও আইনের সংশোধন করে বাপদাদার পৈতৃক জমির অধিকার হরণ করা হয়েছে। আইনের মারপ্যাঁচে আজ চরের মানুষ তার পৈতৃক জমির প্রজাস্বত্ব হারিয়েছে। এই সুযোগ নিয়ে জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জএ প্রভাবশালী স্বার্থন্বেষী মহল কৃষকদের জমি জবরদখল করে তিন ফসলি জমিতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে তোড়জোড় শুরু করেছে। অথচ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন- তিন ফসলি জমিতে কোন প্রকল্প নয় এবং কোন জমি পতিত রাখা যাবে না। এরা লুটেরা গোষ্ঠীর স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অগ্রাহ্য করে কৃষকদের বঞ্চিত করে যেখানে বিদ্যুতের সুব্যবস্থা আছে সেখানেই সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প করতে চায়। আর কৃষকরা যাতে ক্ষতিপূরণ না পায় সেজন্যে প্রভাব খাটিয়ে বগুড়া জেলার ধরাবর্ষা মৌজার একাংশ জামালপুর জেলার সাথে যুক্ত করে কাইজার চর নামে ভুয়া মৌজা তৈরি করে খাস খতিয়ানে এনে প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। এই অন্যায় মেনে নেয়া যায় না তাই কৃষকরা আন্দোলনে আছে এবং স্থানীয় কৃষকরা তাদের জমির প্রজাস্বত্ব ফিরে পেতে উচ্চ আদালতে মামলা করায় স্বার্থন্বেষী মহলটি ক্ষিপ্ত হয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের জেল-হাজতে পাঠাচ্ছে, রিমান্ডে দিচ্ছে।
বক্তারা আরও বলেন, ভূমি অফিস, জেগে উঠা চরে পূর্বতন মালিক বা তার উত্তরাধিকারকে জমি খারিজ দেয়না। বিগত সময়ে বিভিন্ন জরিপে নিজ নামে জমি-জমা রেকর্ড করা সত্বেও ভূমি অফিস খাজনাদি না নেয়ায় এসব অঞ্চলের মানুষ জমিজমা ক্রয়-বিক্রয় করতে পারছে না। এতে এসব অঞ্চলের মানুষ জমিজমা থাকা সত্ত্বেও উচ্চশিক্ষা ও জরুরি চিকিৎসা নিতে পারছে না। আমরা বেদনার সাথে আরও লক্ষ্য করি নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারানো মানুষের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের কোন ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে বিশেষজ্ঞ সমীক্ষা ছাড়াই সারাদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে নদী খনন করার নামে চলছে বালু ব্যবসার মহোৎসব। বালু মাফিয়াচক্র ড্রেজিং এর নামে কৃষকদের কায়েমি জমি কেটে নিচ্ছে। নদীর পাড় সংরক্ষণও ঢালু সঠিক মাপমতো না করায় নদী খননের পরে জমিজমা ভেঙে আবার নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। নদী ভাঙন রোধে ও জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয়না। এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেই। তাই নদী সিকস্তি অঞ্চলের মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার সার্থেই লড়াই সংগ্রামে নামতে হয়েছে। আমরা আজ ঢাকায় মানববন্ধন করছি। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের সকল সাংসদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই- আমাদের এই ন্যায়সঙ্গত দাবি বাস্তবায়নে দ্রুত উদ্যোগ নিন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে। বক্তারা সংগ্রাম কমিটির ৭ দফা দাবী আদায়ে চলমান লড়াই জোরদার করার জন্যে চরাঞ্চলে গ্রামে গ্রামে কমিটি করে আন্দোলনে সামিল হওয়ার চরবাসীর প্রতি আহবান জানান।