Home শিক্ষা ও ক্যাম্পাস ৪০ বছর পর বন্ধুদের ক্যাম্পাসে ফেরা

৪০ বছর পর বন্ধুদের ক্যাম্পাসে ফেরা

43

আবুল বাশার মিরাজ, বাকৃবি: জীবনের এক অনন্য অভিজ্ঞতার স্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। প্রথম যখন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীর আগমন ঘটে সেই দিনটা তার জীবনে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকে তেমনি ছেড়ে যাওয়ার শেষ মুহূর্তটাও মনে দাগ কাটে সবারই। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণটি একজন শিক্ষার্থীর বেড়ে ওঠার সকল উপাদান ধারণ করে। যার ফলে একজন শিক্ষার্থী তার ক্যাম্পাস থেকে পরবর্তীতে যত দূরেই থাকুক কেন, তার মনে স্মৃতি গুলো চিরসতেজ থাকে সবসময়। স্মৃতিতে আসে মধুর দিনগুলি।

আর সে ক্যাম্পাসে ফিরে আসার আনন্দ ব্যাপিত হওয়ার চিত্রই ফুটে ওঠেছে চিরসবুজের ক্যাম্পাস খ্যাত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ১৯৮০-৮১ সেশনের শিক্ষার্থীদের মাঝে। শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে ২ দিনব্যাপী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বন্ধুরা। এরপর এক আনন্দ শোভাযাত্রা বের করেন তাঁরা। শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। ২ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানসূচীর মধ্যে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টার দিকে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আগামীকাল খেলাধুলা ও বিভিন্ন ইভেন্টের আয়োজন করেছেন বন্ধুরা।

দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাসে বন্ধুদের পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের প্রফেসর ড. মো. আবদুল বাতেন। তিনি তার অনুভ‚তি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, দীর্ঘদিন পর আবারও পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা হলো, খুবই ভালো লাগছে। কর্মব্যস্ত জীবনে একটু সময় করে ক্যাম্পাসে সেই পুরনো বন্ধুদের সাথে গল্পগুজব, আড্ডা সত্যিই ভোলার মত নয়। অসাধারণ কিছু মূহুর্ত উপভোগ করলাম বন্ধুদের সাথে।

ওই সেশনের আরেকজন শিক্ষার্থী বর্তমানে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান (এপিবিএন) এডিশনাল আইজিপি মোবারক হোসেন বলেন, ক্যাম্পাস প্রাঙ্গনের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। চিরচেনা বাকৃবি আরো নতুন লাগছে। এত পরিবর্তন হওয়া সত্ত্বেও প্রাকৃতিক পরিবেশ মন্ডিত এই অপরূপ সৌন্দর্য তা আজও আমাকে বিস্মিত করে। এখনও মনে পড়ে আমাদের সেই সময়গুলো। আমাদের সময়ে ক্লাস শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর বিনোদনের প্রাণ কেন্দ্র ছিলো ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়।

মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট এর পরিচালক শামসুন নাহার বলেন, আমি সুলতানা রাজিয়া হলের আবাসিক ছাত্রী ছিলাম। তৎকালীন সময়ে কৃষি অনুষদে সাড়ে ৩ শত শিক্ষার্থীর মধ্যে আমরা মাত্র ৯ জন ছাত্রী ছিলাম। আমাদের সংখ্যা কম হলেও কখনও কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় নি। খুবই রোমাঞ্চকর ছিল ক্যাম্পাসের সময়গুলি। এগ্রনোমি ফিল্ডে যখন প্র্যাকটিকাল হতো, স্যারদের চোখের আড়ালে আমদের ছেলে সহপাঠীরা ধান কাটতে সহয়তা করতো। ছেলে বন্ধুদের কাছে এ ঋণ কোনদিন শোধ হবে না।

মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক (গ্রেড-১), আফজাল হোসেন বলেন, ৪০ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসাবে ফজলুল হক হলে উঠেছিলাম। হলে কাটানো সময়গুলো আজও ভুলতে পারিনা। মনে পড়ে ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবরের কথা। পরের দিন পরিসংখ্যান পরীক্ষা থাকা সত্তে¡ও সেদিন রাতে ‘শূকতারা’ মঞ্চ নাটকটি দেখতে হলের টিভি কক্ষে আসি। আমাদের বিনোদনের মাধ্যমের মধ্যে ছিল বন্ধুদের সাথে একসাথে টিভি দেখা। সেসব হাজার স্মৃতি আজও মনে পড়ে।

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) এর পরিচালক (প্রধান) দীলিপ কুমার সরকার বলেন, বয়স যতই বাড়ুক না কেন, আজকে ক্যাম্পাসের ক্লাসরুম, আবাসিক হলগুলোতে যাওয়ার পর আমরা নবীনই রয়ে গেছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মো রফিকুল ইসলাম তার অনুভুতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, এখনও মনে পড়ে নদের পাড়ে গান গাওয়ার সেই দিনগুলি।